সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০০৯

টিপাইমুখ বাঁধঃ বাংলাদেশের যে বিষয়গুলিতে আলোকপাত করা উচিৎ

প্রথম আলোতে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সংসদীয় কমিটির সম্প্রতি ভারত সফরের খবর পড়লাম। পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন "টিপাইমুখ বাঁধটি যদি সেচ প্রকল্প হয় তাহলে তা অবশ্যই ক্ষতিকর হবে, এর বিরোধিতা জাতীয়ভাবে করা উচিৎ। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে আরো সমীক্ষা চালিয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।”
মন্তব্যটিকে বিশ্লেষণ করলে কি এরকম দাঁড়ায় যে সেচ প্রকল্প না হলে সেটি বাংলাদেশের জন্য কম ক্ষতিকর হবে? প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যৌথ সমীক্ষার কিন্তু তার আগে নিপকোর টিপাইমুখ বাঁধ সংক্রান্ত পরিবেশগত প্রভাব রিপোর্টে ( EIA) যে বাংলাদেশের প্রভাব নিয়ে কিছুই বলা হলোনা সেই ব্যাপারটি কি আদৌ তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে ? আমাদের সংসদীয় কমিটি কি সেই পথেই হাঁটছে না যে পথে ভারত হাঁটাতে চাইছে।

টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে যখন বাংলাদেশে প্রবল গনজাগরণ চলছে, সংবাদপত্রে, ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি হচ্ছে, কুটনৈতিক আলোচনা চলছে তখন বলছে তারা ফুলেরতল সেচ প্রকল্প করবেনা এবং সেটা বলে ভারত এই প্রকল্পটির একটি ছাড়পত্র চাইছে।আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা পরীক্ষামুলকভাবে চালনোর নাম করেই ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা ব্যারেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যার ফল আজো আমরা ভোগ করছি। টিপাইমুখ সেচ প্রকল্পই হোক বা বিদ্যুৎ প্রকল্পই হোক তা বাংলাদেশের জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবেনা। FAP 6, IWM (২০০৫ এ কেনিয়ায় UNEP এক কর্মশালায় মোঃ গোলাম কিবরিয়ার উপস্থাপিত প্রবন্ধে উল্লেখিত) কিংবা টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA রিপোর্টে যেটি প্রথমেই উঠে এসেছে তা হলো বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহের হ্রাস এর বিষয়টি। FAP 6 এর রিপোর্টে বলা হয়েছে বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে অমলসিদে পানির সর্বোচ্চ প্রবাহ ২৫%, অন্যদিকে IWM এর রিপোর্টে উঠে এসেছে যে জুন, জুলাই আগষ্ট আর সেপ্টেম্বরে পানির প্রবাহ হ্রাস পাবে যথাক্রমে ১০%, ২৩%, ১৬%, ১৫% অর্থাৎ এই চার মাসে গড়ে ১৬% প্রবাহ কমবে। একই চিত্র দেখা যায় ভারতের EIA রিপোর্টে, যেখানে ৩০% প্রবাহ হ্রাসের কথা বলা হয়েছে। এই পানি প্রবাহ হ্রাসের কথা বলে যুক্তি দেয়া হচ্ছে যে এর ফলে ভাটিতে অর্থাৎ বাংলাদেশে ফ্ল্যাশ ফ্লাড কমবে এবং সিলেট ও মৌলভীবাজার এলাকা সহ বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল বন্যা মুক্ত হবে।
প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে তা হলো এই বাঁধের কারনে বাংলাদেশে বন্যা আসলে কি কমবে কিনা? ডঃ আইনুন নিশাত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন( ২৮ জুন ২০০৯, প্রথম আলো),"বরাক নদীর ভাটির দিকের অঞ্চল সিলেটের হাওড় এলাকায় বর্ষার শুরুতে আগাম বন্যা হয় আবার বর্ষার শেষের দিকে পানি কমে আসে।টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের পর বর্ষার শুরুতে রিজার্ভারে পানি ধরে রাখার প্রয়োজন পড়বে আবার বর্ষার শেষের দিকে পানি ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এর ফলে বর্ষার শুরুতে বন্যা কমে আসতে পারে আবার বর্ষার শেষে বন্যার প্রকোপ বাড়তে পারে।এর প্রভাব বাংলাদেশের উপরেও পড়বে"।অর্থাৎ বন্যা মুক্ত হবার যে কথা বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়, যেটি হতে পারে তা হলো বন্যার স্বাভাবিক সময় পরিবর্তিত হতে পারে।
আরো যে বিষয়টি গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হলো বাঁধের কারনে এর উজানে জলাধারে সব পলি সঞ্চিত হবে। যে পানি বের হয়ে আসবে তাকে এক কথায় বলা যায় “রাক্ষুসী পানি”। এই পানি পলিমুক্ত বলে এর পলিধারন ক্ষমতা অনেক বেশী আর তাই এটি বাঁধের ভাটিতে ১০০ থেকে ১৫০ কিমি ব্যাপী ব্যাপক নদী ক্ষয়ের সৃষ্টি করবে।বাংলাদেশ বাঁধের ২০০ কিমি ভাটিতে থাকায় এই বিপুল পরিমান পলি বরাক নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। কিন্তু পানির প্রবাহ তুলনামূলক ভাবে কমে যাওয়ায় পলি বহন করার ক্ষমতা কমে যাবে, এবং তা সুরমা ও কুশিয়ারার বুকে জমা হবে। এতে নদীর নাব্যতা ও গভীরতা হ্রাস পাবে। সেক্ষেত্রে আগে যেটা স্বাভাবিক বর্ষাকালীন প্রবাহ ছিল প্রকারান্তরে তা বন্যা আকারে আসতে পারে এই এলাকায়।
আর যদি ধরেই নেই যে বাঁধের ফলে সিলেট আর মৌলভীবাজার এলাকা বন্যামুক্ত হবে সেখানেও প্রশ্ন আসে, এই তথাকথিত বন্যামুক্ত হওয়া কতটা ইতিবাচক? আমরা জানি বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল অর্থাৎ মেঘনা-সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকার একটি সতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে আর তা হলো এর হাওড়গুলি। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ছোট বড় মোট ৪১১ টি হাওড় প্রায় ৮০০০ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত যা কিনা বাংলাদেশের এই অঞ্চলের মোট ক্ষেত্রফলের শতকরা ২৫ ভাগ। এই হাওড়গুলির কিছু হচ্ছে 'রাইপেরিয়ান জলাভুমি অর্থাৎ যেগুলো প্লাবনভূমিতে অবস্থিত। এগুলো নদীর সাথে সরাসরি যুক্ত বলে নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি বা কমের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাবিত হয়।আবার কিছু আছে 'নন-রাইপেরিয়ান জলাভূমি' যা আসলে পানির যোগান পায় আশে পাশের নদী থেকে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ থেকে।এখন বর্ষাকালে পানির প্রবাহ কমে গেলে রাইপেরিয়ান হাওড়গুলিতে পানি যাবেনা এবং সেই সাথে ভূগর্ভস্থ প্রবাহ কমে যাওয়ায় নন-রাইপেরিয়ান হাওড়গুলিও পানি পাবেনা।বৃষ্টির পানি থেকে একমাত্র নন-রাইপেরিয়ান জলাভূমিগুলি পানির যোগান পেতে পারে কিন্তু তাও এই হাওড়গুলির আয়তনের তুলনায় নগন্য। এই হাওড়গুলি বর্ষা মৌসুমে দেখতে অনেকটা সমুদ্রের মত হয় এবং বন্যার পানি সরে গেলে তা জলজ প্রাণী বিশেষ করে নিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রমে পরিনত হয়। যেহেতু বছরের একটি বিশেষ সময় ধরে এই হাওড় এলাকা জলপূর্ন থাকে তাই এলাকার মানুষদের জন্য মৎস্য শিকার অন্যতম প্রধান পেশা।বাঁধের কারনে বন্যার সময় পানি না আসায় এই হাওড়গুলি একসময় ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবে সেই সাথে বিলুপ্ত হবে বেশ কিছু প্রজাতি। এই এলাকার মানুষদের তখন বর্ষা মৌসুমে জীবিকার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা।
টিপাইমুখ বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বলা হচ্ছে। FAP 6 এর রিপোর্ট অনুযায়ী অমলসিদে পানির সর্বোচ্চ প্রবাহ শতকরা ১০০ ভাগ থেকে ২০০ ভাগ বাড়বে এবং পানির পরিমান শতকরা ৬০ ভাগ বেড়ে যাবে অন্যদিকে টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA রিপোর্টেও বলা আছে বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ ১১০% বেড়ে যাবে। এখন এই বর্ধিত পানি কি আমাদের জন্য আশীর্বাদ না কি অভিশাপ সেটা গবেষণার দাবী রাখে।
FAP 6 এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এই বর্ধিত প্রবাহের ফলে নৌচলাচল, সেচ ও মৎস্য চাষ বৃদ্ধি ঘটবে কিন্তু কিছু কিছু এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশন ব্যহত হবে আর ভারতের দাবী এই বর্ধিত পানি দিয়ে রবি শস্য ফলানো ।তবে যে বিষয়টি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হলো বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের এই হাওড়গুলি শুষ্ক মৌসুমে যখন শুকিয়ে যায় তখন কৃষকরা সেখানে বোরো ধান বপন করে যা এই অঞ্চলের একমাত্র ফসল। এই ধান বর্ষা আসার আগেই ঘরে উঠে যা এই লোক গুলির বছরের একমাত্র শর্করার যোগান দেয়।বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে এই এলাকার চাষাবাদ ব্যহত হবার আশঙ্কা আছে। ডঃ জহির উদ্দিন চৌধুরীও তার সাক্ষাৎকারে (১২ জুলাই ২০০৯, প্রথম আলো) এই বিষয়টি আলোক পাত করেছেন।
আর যদি ধরেও নেই যে এই বর্ধিত প্রবাহ চাষাবাদের জমিকে খুব বেশী প্লাবিত করবেনা সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন থেকে যায়। এই জমিগুলো বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ায় বিপুল পরিমান পলি জমে। এখন বর্ষা মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় তা আগের মত আর প্লাবিত হবেনা ফলে জমিগুলো তাদের উর্বরতা হারাবে।
আরো প্রশ্ন আসে পর পর কিছু অতিশুষ্ক বছর আসলে কি হবে ? কখনো কখনো পর্যায়ক্রমে কিছু বছর থাকে যেখানে যেসময় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক গড় প্রবাহ থেকে অনেক কমে যায়। আমার প্রাপ্ত তথ্য মতে বরাক অববাহিকায় ১৯৭৯-১৯৮১ পর্যন্ত এরকম একটি পর্যায় গিয়েছে যেখানে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম ছিল। টিপাইমুখ বাঁধ হবার পরে এরকম অতিশুষ্ক বছর যদি আসে সেক্ষেত্রে Firm Production এর জন্য শুষ্ক মৌসুমে জলাধারের পানির স্তর Critical levelবা আর কাছাকাছি চলে আসবে। সেক্ষেত্রে পরের বর্ষা মৌসুমও যদি অপেক্ষাকৃত শুষ্ক হয় তাহলে জলাধারে পানির স্তর খুব বেশী উপরে উঠবেনা এবং এর পরের শুষ্ক মৌসুমে Firm Production এর জন্য প্রয়োজনীয় পানি থাকবেনা এবং এ অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। এই পরিস্থিতিতে শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের টারবাইন থেকে যে পরিমান পানি ভাটিতে প্রবাহিত হবে তা বাঁধ পূর্ব পরিস্থিতির সাথে তুলনা করলে অনেক অনেক কম। এই পরিস্থিতি তিন চার মৌসুম ধরে চললে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে বাংলাদেশে।
এই প্রাকৃতিক কারনগুলো ছাড়াও যদি কোন যান্ত্রিক কারনে বাঁধের টারবাইনগুলো অকার্যকর হয় অথবা গ্রীডের কোন সমস্যার কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয় তখন কি হবে? যেহেতু এটি পানিবিদ্যুৎ বাঁধ সেক্ষেত্রে টারবাইন ছাড়া অন্য কোন পথ দিয়ে সেই সময়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা থাকবে কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়।
সফররত সংসদীয় দল কেন একটি বিষয় তুলছেনা আর তা হলো টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রভাব নিয়ে কেন উল্লেখযোগ্য কোন আলোচনা নেই?
এবারে আসি কিছু ভিন্ন চিন্তা নিয়ে। ফাঁরাক্কা ব্যারেজ নিয়ে কুটনৈতিক আলোচনার সময় গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির বিষয়টি সবসময় গুরুত্ত্ব পেয়েছে। তখন ভারতের অনড় অবস্থান ছিল ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি সরিয়ে গঙ্গায় নিয়ে আসা নিয়ে, যা কিনা রিভার লিঙ্কিং প্রকল্পের একটি প্রধান পরিকল্পনা। ভারত জানে বাংলাদেশ কখনই এই প্রকল্প কে সমর্থন করবেনা। এজন্য ভারতের প্রয়োজন বাংলাদেশের উপর পরোক্ষ ভাবে চাপ প্রয়োগ করা। ফাঁরাক্কা আমাদের গঙ্গার পানি কমিয়েছে , তারপরেও একটি চুক্তি হয়েছে বলে আমরা অন্তত ২০২৬ সাল পর্যন্ত ন্যুনতম প্রবাহ পাব। একে ভিত্তি করেই বাংলাদেশ গঙ্গা ব্যারেজের ফিসিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছে যার মূল অনেক গুলো উদ্দেশ্যর ,মধ্যে একটি হলো ফাঁরাক্কার ফলে সৃষ্ট পদ্মার শাখানদী গুলোত নাব্যতা ফিরিয়ে আনা।
যদি ধরে নেই টিপাইমুখ বাঁধ ও ফুলেরতল ব্যারেজ নির্মান করে আমাদের মেঘনা অববাহিকার পানির প্রবাহকেও কমিয়ে আনা হল। এখন কল্পনা করুন ২০২৬ এর পরের কথা যদি গঙ্গা চুক্তি নবায়ন না হয় তাহলে কি হবে একদিকে মেঘনা তার প্রবাহ হারাবে আর অন্যদিকে আমাদের প্রস্তাবিত (অথবা ততদিনে নির্মিত) গঙ্গা ব্যারেজ অকার্যকর হয়ে যাবে তখন আমাদের গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির জন্য ভারতের রিভার লিঙ্কিং প্রকল্পকে সমর্থন করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।
আমাদের সংসদীয় কমিটিকে আলোচনার সময় কখনই ভুলে গেলে চলবেনা যে ব্যারেজ না হলেও টিপাইমুখ বাঁধ আমাদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর হবে। ভারত যদি ব্যারেজ নির্মান না করার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে এই প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে নেয় তা হবে বাংলাদেশের জন্য এক বড় বিপর্যয় যা এই কমিটিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যে মূহুর্তে ভারত এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে যেই মূহুর্তে তারা যৌথ সমীক্ষার কতটা সুযোগ রাখবে সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।যদি সেই সুযোগ আসে তাহলে যেসব বিষয়ের উপর আমাদের আলোক পাত করতে হবে তা হলোঃ
প্রথম পর্যায়ঃ বাঁধের ও ব্যারেজের কারনে প্রবাহের কি পরিবর্তন হবে, এই প্রবাহ হ্রাস ও জলাধারে পলিহ্রাসের প্রভাবে বাঁধের ভাটিতে ব্যাপক নদীক্ষয়ের কি প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে, প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের হাওড় গুলির বাস্তুতন্ত্রে কি পরিবর্তন আসবে, এই এলাকার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর তার কি প্রভাব পড়বে এই সবকিছু নিয়ে সমীক্ষার পরই জানা যাবে এই বাঁধ হলে বাংলাদেশের কি পরিমান ক্ষতি হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে বাঁধের কারনে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতি ন্যুনতম পর্যায়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
চুড়ান্ত পর্যায়ঃ যদি ক্ষতির পরিমান সহসনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন বন্ধ করার জন্য কুটনৈতিক ভাবে ও জাতিসংঘের মাধ্যমে আইনগতভাবে কিভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালাতে পারি তারো খসড়া প্রনয়ন করতে হবে। ডঃ আসিফ নজরুল তার এক লেখায় এই আইনগত বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন(৫ জুলাই ২০০৯, প্রথম আলো )। আসলে দেশের এই দুঃসময়ে সরকার, বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ, প্রচারমাধ্যম সেই সাথে জনগন সবার এক সাথে কাজ করতে হবে।
জাহিদুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষকঃ ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা, কানাডা
প্রাক্তন শিক্ষকঃ পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়