বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০০৯

টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

ভূমিকাঃ
পানির অবাধ শক্তিকে মানুষের কাজে লাগানোর ইতিহাস অনেক পুরানো। খ্রীষ্ট্রপুর্ব ৩০০০ সালে জর্ডানে প্রথম বাঁধ নির্মানের উদ্যোগের কথা জানা যায়। মাত্র ৯ মিটার উঁচু আর ১ মিটার চওড়া সেই বাঁধের মধ্য দিয়ে [১] পানিকে আটকে শক্তি সঞ্চয়ের যে ইতিহাস শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যহত আছে। একসময় আমরা শক্তি নিয়ে বেশী চিন্তিত ছিলাম আর আজ তার সাথে যুক্ত হয়েছে পরিবেশ।এই সুন্দর পৃথিবীটাকে আরো বেশী দিন মানুষের এবং অন্যন্য জীবের বাসযোগ্য করে রাখার জন্য প্রয়োজন সব ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের সর্বোপরি সকল দেশের মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা। ‘যেকোন বাঁধই পরিবেশের উপর ফেলে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া’ এই চরম সত্যটি বুঝতে আপনাকে পানি বা পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হবার কোন প্রয়োজন নেই। ছোটবেলায় ম্যাকগাইভার সিরিজের একটি পর্বের কথা এখনো মনে আছে। সম্ভবত একটি এলাকায় আগে স্বাভাবিক ভাবে বন্যা হত এবং তাকে কেন্দ্র করে একটি বাস্তুতন্ত্র ছিল। ড্যাম নির্মানের কারনে ঐ এলাকায় একপাশে বন্যা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এক ধরনের পোকার উপদ্রুপ বেড়ে যা সেখানকার মানুষদের স্বাভাবিক জীবন যাপনকে বলতে গেলে দূর্বিসহ করে তুলে। পর্বটির শেষে ড্যামটিকে উড়িয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হয়।আমার এই কথাগুলিকে ভূমিকা হিসেবে দেখলে আজকের এই লেখনীর বিষয়বস্তু পরিষ্কার হয়ে উঠে, বাংলাদেশ আজ একটি ভয়ঙ্কর সমস্যার মুখে পতিত, আমরা এখনো বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পারছিনা তাই আসল চিন্তা না করে রাজনীতির কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে ব্লগে, সংবাদপত্রে, টিভিতে, জনসভায় আলোচনা হচ্ছে, কুটনৈতিক পর্যায়ে মতানৈক্য চলছে, বিভিন্ন দলের বিশেষজ্ঞদের নাম জানা যাচ্ছে কিন্তু তার পরেও আমরা পনের কোটি মানুষ শান্তিতে ঘুমোচ্ছি। সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকার দরিদ্র কৃষকটি, যার সারা বছরের খাবার আর জীবন যাপনের একমাত্র অবলম্বন বোরো ধান, কিংবা দরিদ্র জেলেটি যার খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা নির্ভর করছে বর্ষাকালের হাওড়ের মাছের উপর সেও শান্তিতে ঘুমুচ্ছে কারন সে জানেনা কি ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তার জন্য। ফাঁরাক্কা ব্যারেজের কারনে আমাদের উত্তাল প্রমত্তা পদ্মা আজ যৌবন হারিয়েছে সেই সাথে ধুকে ধুকে মরছে এর শাখানদীগুলো।
১৯৭৪-৭৫ সালে নির্মিত ফাঁরাক্কা ব্যারেজের ফলে ভারতের একচেটিয়া পানি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে একটি চুক্তি করতে কুটনৈতিক আলোচনা গড়িয়েছে ২০ বছর, আর এই সুদীর্ঘ সময়ে আমরা হারিয়েছি আমাদের নদীর নাব্যতা, আমাদের ফসলের জমি হারিয়েছে তার উর্বরতা, লবনাক্ততা এসে গ্রাস করেছে আমাদের অহংকার সুন্দরবনকে, ইবনে বতুতার সবুজ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পরিনত হয়েছে শুষ্ক মরুভূমিতে। এই অতীত থেকেও আমরা শিক্ষা গ্রহন করতে পারিনি, আজ ভারত টিপাইমুখে বাঁধ নির্মান করার সব প্রস্তুতি যখন নিয়ে ফেলেছে ঠিক সেই মূহুর্তেও আমরা জাতি হিসেবে একতাবদ্ধ হতে পারছিনা, আমার দেশে দাঁড়িয়ে ভিনদেশের দালাল বুক উঁচিয়ে বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছে, এদেশেরই একশ্রেনীর বিশেষজ্ঞ এই প্রকল্পের বাংলাদেশের সুবিধার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের সূর্য্য সন্তান রাজনীতিবিদেরা এটাকে নিয়ে ক্ষমতা দখলের রসদ সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।শুধু একটা কথা মনে করিয়ে দেই পদ্মা গেছে, আজ টিপাইমুখ বাঁধ আর সেইসাথে ফুলেরতল ব্যারেজ যদি নির্মিত তাহলে মেঘনা যাবে, তখন বাকি থাকবে শুধু ব্রহ্মপুত্র (যমুনা), সেটারও বারোটা বাজিয়ে দেবে ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে। এগুলো সব ভারতের উচ্চাভিলাষী রিভার লিঙ্কিং প্রকল্পের এক একটি ধাপ।
পানিবিদ্যুৎ বাঁধ ও ব্যারেজ কি ?
সাধারন পাঠকদের জ্ঞাতার্থে মূল আলোচনায় যাবার পূর্বে আমি পানি প্রকৌশলগত কিছু জিনিস ব্যখ্যার প্রয়োজন অনুভব করছি, কারন আমরা অনেক সময়ই বাঁধ ও ব্যারেজকে এক করে গুলিয়ে ফেলি। পানি প্রকৌশলগত ভাবে সাধারনত বাঁধ হলো নদীতে আড়াআড়ি ভাবে অর্থ্যাৎ প্রবাহের সাথে সমকোনে স্থাপিত কোন প্রতিবন্ধক যা কিনা প্রবাহকে সম্পূর্ন ভাবে বন্ধ করে দেবে। পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল স্থাপনা হলো একটি বাঁধ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাপ্তাই বাঁধকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সাধারনত একটি খরোস্রোতা নদীর প্রবাহকে একটি বাঁধ দিয়ে আটকে এর উজানে জলাধার তৈরী করে পানির উচ্চতা বাড়ানো হয়। আমরা যারা সাধারন বিজ্ঞান পড়েছি তারা জানি এতে পানির স্থিতিশক্তি বেড়ে যাবে যা কিনা উচ্চতার সমানুপাতিক। পানিকে শুধু আটকে রাখলেই হবেনা, একটি নির্দীষ্ট উচ্চতায় যাবার পড়ে জলাধারের নিম্ন দিয়ে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে এই পানিকে প্রবাহিত করতে হবে, হলে স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হবে এবং প্রচন্ড বেগে পানি প্রবাহিত হবে। পানির সেই বেগকে কাজে লাগিয়ে আমরা টারবাইন ঘোরালে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। সুতরাং বিদ্যুৎ উৎপাদন যত বাড়ানো হবে তত জলাধার থেকে ছেড়ে দেয়া পানির পরিমান তত বাড়বে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পনির প্রবাহ বাড়লে তা জলাধারে আটকে রাখা হবে সুতরাং বাঁধের পরে ভাটি অঞ্চলে পানির প্রবাহ কমে যাবে, আরো ভাল করে বললে ঠিক তততুকুই পানি যাবে যা টারবাইনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে পানি কম আসলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করার তাগিদে জলাধার থেকে নিয়মিত ভাবে পানি ছাড়তে হবে ফলে বাঁধের ভাটিতে পানির প্রবাহ আগের থেকে বাড়বে। বাঁধের ভাটিতে পানির এই বাড়া বা কমার পরিমান নির্ভর করবে মূলত উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমানের উপর।
অন্যদিকে ব্যারেজ হলো নদীর পানিকে একাধিক গেইট দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রবাহিত করে এর উজানে পানির উচ্চতা কিছুটা বাড়ানো, প্রকৌশলগত ভাবে এই বর্ধিত উচ্চতাকে এফ্লাক্স বলে। ব্যারেজের ঠিক উজানে এক বা একাধিক কৃত্রিম খাল খনন করা হয় যার মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ভাবে পানি প্রবাহিত করে অভিকর্ষের প্রভাবে আরো ছোট ছোট খাল দিয়ে (তিস্তা ব্যারেজ, বাংলাদেশ) বা পাম্পের মাধ্যমে ( জি কে প্রকল্প, বাংলাদেশ) আবাদী জমিতে সেচ দেয়া হয় অথবা অন্য কোন নদীতে পানি প্রবাহ বাড়ানো হয় ( যেমন ফাঁরাক্কা ব্যারেজ)। অর্থ্যাৎ ব্যারেজের মূল লক্ষ্যই থাকে একটি নদী থেকে পানি অপসারণ, অন্যদিকে বাঁধের মূল উদ্দেশ্য উজানে পানি সঞ্চয়। আরো এক ধরনের স্ট্রাকচার আছে এমব্যাঙ্কমেন্ট বা ডাইক, যাকেও আমরা সাধারন ভাষায় বাঁধ বলে থাকি আর তা হলো একটি নদীর সমান্তরালে স্থাপিত উঁচু প্রতিবন্ধক বা রাস্তা বিশেষ ( যেমন আশুলিয়ায় তুরাগ নদীর ধার দিয়ে ঢাকা রক্ষা বাঁধ)। এর কাজ মূলত বন্যার সময় পানিকে নদীর একপাশে বা দুই পাশেই না যেতে দেয়া।
টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প ও এর ইতিহাসঃ
বারাক নদী থেকে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারনা আসে মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রনের চাহিদা থেকেই। অনেক আগে সেই ১৯৩০ সালের দিকে যখন আসামের কাছাড় উপত্যকায় এক ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হয় তার পর থেকেই মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রন পরিকল্পনা করা হয় যার অংশ হিসেবে ১৯৫৪ সালে ভারতের Central Water Commission (CWC) একটি বহুমুখী জলাধারের জন্য সমীক্ষার কাজ হাতে নেয় [২]। বাঁধ তৈরীর জন্য মাইনাধর, ভুবনধর ও নারাইনধর নামক আরো তিনটি প্রস্তাবিত স্থান প্রকৌশলগত কারনে বাতিল হয়ে যাওয়ায় ১৯৭৪ সালে টিপাইমুখ বাঁধের চুড়ান্ত স্থান হিসেবে নির্ধারিত হয়[২]। এই স্থানটি তুইভাই নদী ও বরাক নদীর সঙ্গমস্থল থেকে ৫০০ মিটার ভাটিতে এবং বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২০০ কিমি উজানে [২,৩]। এই বরাক নদীই বাংলাদেশে প্রবেশের আগে দু’ভাগ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে প্রবেশ করেছে, যা পরিশেষে মিলিত হয়েই মূলত মেঘনা নদী গঠন করেছে। এই সুরমা-মেঘনা নদী সিস্টেম গঙ্গা বদ্বীপ তৈরীর তিনটি সিস্টেমের মধ্যে একটি।
নির্মানাধীন টিপাইমুখ বাঁধের সাধারন তথ্যবলীঃ
এই প্রকল্পের কিছু গুরুত্ত্বপূর্ন তথ্য[২] নিম্নে দেয়া হলঃ
  1. বাঁধের ধরনঃ এটি রকফিল ড্যাম অর্থ্যাৎ নদীর প্রবাহকে গ্রানুলার (দানাদার) মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে এবং পানির প্রবাহকে এক বা একাধিক পানি অভেদ্য স্তর ( যেমন স্টীল পাইল বা কনক্রীট, বা প্লাস্টিক পর্দা) দিয়ে রোধ করা হবে।
  2. বাঁধের উচ্চতাঃ ১৬২.৮ মিটার
  3. নুন্যতম বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪৩৪ মেগাওয়াট তবে সর্বোচ্চ ১৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের ব্যবস্থা রাখা হবে।
  4. বাঁধের কারনে সৃষ্ট জলাধারের ফলে প্লাবিত এলাকা প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার যাত প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগই মনিপূর রাজ্যের আর বাকী ৫ ভাগ মিজোরাম রাজ্যের।
এই বাঁধ নির্মানে ভারতের ব্যাপক উৎসাহের পেছনে কিছু তথ্য [২]নিম্নরূপঃ
  1. উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষদের উন্নয়নের পথে নিয়ে আসা যাবে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের গড় বিদ্যুতের ব্যবহার যেখানে ২৭০ কিলোওয়াটঘন্টা সেখানে এই অঞ্চলে তা মাত্র ৮০ কিলোওয়াট ঘন্টা
  2. এটি বন্যা নিয়ন্ত্রন করবে যা বাৎসরিক ৪৫ কোটি রূপীর ক্ষয়ক্ষতি রোধ করবে।
  3. টিপাইমুখ ড্যাম প্রকল্প থেকে ৯৫ কিলোমিটার ভাটিতে ফুলেরতল ব্যারেজ নির্মানের প্রস্তাব রয়েছে যা পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেয়া পানিকে কাজে লাগিয়ে প্রায় ১,২০,৩৩৭ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় নিয়ে আসবে।
  4. প্রকল্পের ফলে সৃষ্ট কৃত্রিম হ্রদে মৎস্য চাষের মাধ্যেমে বার্ষিক আয় হবে ১৪ কোটি টাকা
  5. প্রকল্প এলাকা একটি উৎকৃষ্ট পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।
  6. সৃষ্ট হ্রদ উজানের এলাকার মানুষদের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করবে সেই সাথে প্রকল্পের ফলে বছরের বিভিন্ন সময় নদীর পানির গভীরতার উঠা নামা কমে যাওয়ায় কলকাতা বন্দর থেকে বাংলাদেশ হয়ে শীলচর পর্যন্ত পন্য পরিবহণের সম্ভাব্যতা দেখা যাবে।

শুধু বাঁধ নাকি বাঁধ ও ব্যারেজ ?
লেখার শুরুতেই আমি বাঁধ ও ব্যারেজের পার্থক্য ব্যাখ্যা করেছি। টিপাইমুখ প্রকল্পের প্রভাব নিয়ে মূল আলোচনা করার পূর্বেই একটি প্রশ্ন সবার সামনে আসে যা ইতিমধ্যে ঘুরে ফিরে আমাদের বিশেষজ্ঞরাও রেখেছেন ([৩],[৪],[৫],[৬],[৭])আর তা হলো শুধু বাঁধ নাকি বাঁধ ও ব্যারেজ।আমার আলোচনাতে আমি এই দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব। এখন পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে [২] টিপাইমুখ প্রকল্পের উদ্দেশ্যের মধ্যে এই বাঁধ থেকে ৯৫ কিমি ভাটিতে একটি ব্যারেজের প্রস্তাব রয়েছে যাতে আপাতত ১,২০০,০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে ।
বাঁধের প্রভাব, উজান নাকি ভাটি ?
প্রকৃতির একটি নিজস্ব ছন্দ আছে আর আমরা যখন সেই ছন্দকে পরিবর্তিত করি প্রকৃতি তার শোধ নেয় তার নিজের মত করে। আজ থেকে এক দুই দশক আগেও আমরা পরিবেশ নিয়ে আগে এতটা উৎসুক ছিলামনা যতটা আজকে আছি। আগে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রয়োজন দেখা হত আর এখন মানুষই শুধু না সেই সাথে জীববৈচিত্রের ভালমন্দ দেখভাল করার দায়িত্ত্বও আমাদের কারন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমাদের বেঁচে থাকা আসলে নির্ভরশীল একটি পরিপূর্ন বাস্তুসংস্থানের উপর। সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে এই সব কিছু সম্পর্কিত, আর তাই আমরা আজ পরিবেশ নিয়ে অনেক সচেতন । একটি বাঁধের মূলত দুই দিকেই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, প্রথমতঃ বাঁধের উজানে আর দ্বিতীয়তঃ বাঁধের ভাটিতে।যেকোন বাঁধই তার উজানে একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরী করে এবং এই জলাধারকে কেন্দ্র করেই কিন্তু উজানে বাঁধের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে ভাটিতে মূল সমস্যা সৃষ্টি করে বাঁধের কারনে সৃষ্ট নিয়ন্ত্রিত প্রবাহ। অর্থ্যৎ ভাটিতে আগে যেখানে প্রাকৃতিক ভাবে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হতো সেখানে বাঁধের কারনে প্রবাহের পরিমান কৃত্রিম ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে । এই প্রবাহের মান ও বছরের বিভিন্ন সময়ে তার বন্টনের পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হবে তার উপর নির্ভরশীল জীব বৈচিত্র এবং পরিবেশ। একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশ টিপাইমুখের ভাটিতে থাকায় বাংলাদেশে তার প্রভাব পরবে দ্বিতীয় ভাবে।আমি প্রথমে সাধারন আঙ্গিকে বাঁধের প্রভাব আলোচনা করব এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের FAP 6 রিপোর্ট ও ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA এর আঙ্গিকে বাংলাদেশর উপর এই বাঁধের প্রভাব কি কি পড়বে তা নিয়ে গুরুত্ত্ব আরোপ করব।
বাঁধের উজানে প্রভাবঃ
খুব সাধারণ ভাবে দেখলে একটি বাঁধের কারনে এর উজানে নিম্নরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়ঃ
  1. সৃষ্ট কৃত্রিম জলাধার বিপুল পরিমান এলাকাকে পানির নিচে নিমজ্জিত করে, ফলে আগে যেখানে শুষ্ক এলাকা ছিল তা জলাভূমিতে পরিনত হয়।এর ফলে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি আবাদী জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেই সাথে বিপূল পরিমান বনভূমি ও অন্যন্য উদ্ভিদ পানির নিচে তলিয়ে যায়। এই সব উদ্ভিদ পচে গিয়ে বিপূল পরিমান কার্বন পরিবেশে নিঃসরণ করে যা কিনা প্রকারান্তরে বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাস বাড়ায়।
  2. আগে যেখানে ছিল নদী সেখানে আজ জলাধার, ফলে পানির উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যায় অনেক গুনে। আমরা জানি পানির উপরিতলের ক্ষেত্রফল যত বাড়ে এর স্বতঃ বাষ্পীভবন(ইভ্যাপরেশন) এর হার তত বাড়ে। সুতরাং আগে নদী থেকে যে পরিমান পানি বাষ্প উপরে উঠে যেত এখন তার থেকে অনেক বেশী পরিমান স্বতঃবাষ্পীভূত হবে। এর পরিমান নেহায়েত কম নয়, এক হিসেব মতে আমেরিকার হোভার ড্যামের কারনে সৃষ্ট লেক মেড থেকে বাৎসরিক ৩৫০ বিলিয়ন গ্যালন পানি কমে যায় এবং এটি প্রকারান্তরে নদীর পানির প্রবাহকে কমিয়ে দেয়।
  3. বাঁধের বোধকরি সবচাইতে বড় প্রভাব হল বাস্তুসংস্থান বিপর্যয়। বাঁধের উজানে স্বাভাবিক ভাবেই একটি স্থলজ বাস্তু সংস্থান ছিল। সেটি সম্পূর্ণ ভাবে বিনষ্ট হয়ে আমরা কৃত্রিম ভাবে একটি জলজ বাস্তুসংস্থান তৈরী করছি। এতে করে অনেক প্রজাতির স্থলজ প্রানী বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
  4. অনেক প্রজাতির মাছ আছে যারা বছরের একটি বিশেষ সময়ে ভাটি থেকে উজানে চলে যায়। বাঁধের কারনে মাছের এই অভিভাসন সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট হয় ফলে প্রকারান্তরে এর উৎপাদন কমে যায় বা নিঃশেষ হয়ে যায়।
  5. নদীর প্রবাহে শুধু পানি থাকেনা, বরং এটি বয়ে নিয়ে চলে বিপূল পরিমান পলি।বাঁধ হলে এর উজানে নদীর গতিবের প্রায় শুন্য হয়ে যায়। ফলে নদীর পানির পক্ষে এই পলিকে আর ধরে রাখা সম্ভব হয়না বরং অভিকর্ষের প্রভাবে তা ধীরে ধীরে নিচে পড়ে যায় এবং জলাধারের বুকে জমতে থাকে।এটি প্রকারান্তরে জলাধারের নিচের স্তরের উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়।
ভাটিতে বাঁধের প্রভাবঃ
সাধারনত বাঁধ নির্মানের পূর্বে নদীর যে স্থানে বাঁধ হবে তার উজানে থেকে বিকল্প পথে পানিকে ভাটিতে স্থানান্ত্রর করা হয় যাতে নির্মান কাজ করা যেতে পারে। এখন নির্মানের পর প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে আসে তা হলো বাঁধ যখন নির্মান শেষ হবে তখন সেটি কত সময় ধরে উজানের জলাধারকে পরিপূর্ন করবে। এটি যদি দ্রুত পরিপূর্ন করা হয় তাহলে প্রায় সিংহভাগ পানি অপসারিত হবে, ভাটিতে যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হবে ভয়াবহ[৩]।
  1. আগেই বলেছি বাঁধের কারনে উজানে নদী তার সমস্ত পলি জলাধারের নিচে সঞ্চিত করে ফেলে। পানিবিদ্যুৎ টারবাইনের মধ্যে দিয়ে যে পরিমান পানি বের হয় সেটিই মূলত ভাটিতে পরিবাহিত হয়। এই প্রবাহ সম্পূর্নরূপে পলিমূক্ত আর তাই তার পলি ধারন ক্ষমতা সর্বোচ্চ। ফলে তা ভাটিতে প্রবাহিত হবার সময় নদীর বুক আর পাড় থেকে মাটি নিয়ে যায় আর তাই নদী ক্ষয়ের পরিমান বিপূলাংশে বেড়ে যায়।
  2. পানি বিদ্যুৎ বাধেঁর কারনে স্বভাবতই বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যায়, ফলে ভাটি অঞ্চলের স্বাভাবিক জলজ বাস্তুসংস্থান ব্যহত হয়। অনেক জলজ প্রানীর প্রজননের সাথে বাৎসরিক বন্যা সম্পর্কযুক্ত। বর্ষা মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় এই সব প্রানীর স্বাভাবিক প্রজনন ব্যহত হয়। এছাড়া বন্যার সময় আশে পাশের স্থলাভূমি থেকে জলজ প্রানীর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য দ্রব্য নদীতে আশে সুতরাং একটি নদীর স্বাভাবিক বন্যা যখন ব্যহত হয় তখন এই প্রক্রিয়াটিও বাধগ্রস্থ হয়। নদীর দুই ধারে নদীকে কেন্দ্র করে এক ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় যাকে আমরা ‘রাইপেরিয়ান ভেজিটেশন’ বলে থাকি। এই উদ্ভিদ গুলো আসলে স্বাভাবিক বন্যা চক্রের সাথে অভিযোজিত। সুতরাং যখন বাঁধের কারনে ভাটিতে স্বাভাবিক বন্যা ব্যহত হয় তখন আস্তে আস্তে এই অভিযোজন প্রক্রিয়া ব্যহত হয় এবং ফলশ্রুতিতে এদের বিলুপ্তি ঘটে।
  3. নদীর সব গভীরতায় পানির বেগ একরকম নয়। সাধারণত নদীর তলদেশে বেগ কম থাকে আর উপরিতলের ঠিক আগে বেগ সর্বোচ্চ থাকে। উলম্ব তল বরাবর পানির এই বেগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মিল রেখে নদীর বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের মাছ অভিযোজিত হয়। বাঁধের কারনে যখন নদীর স্বাভাবিক এই বেগ পরিবর্তিত হয় তখন মাছের স্বাভাবিক এই অভিযোজন বিনষ্ট হয় এবং তাদের আর বেঁচে থাকা সম্ভব হয়না।
  4. সাধারনত সমতল ভূমির বৈশিষ্ট হলো এর নিম্নাঞ্চল। প্রাকৃতিক নিয়মে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি উপচে গিয়ে এই সব জলাভূমি গুলো পানি পূর্ন হয় এবং সারা বছর জলজ প্রানীর একটি অভয়াশ্রমে পরিনত হয় (উদাহরণ সরূপ বাংলাদেশের হাওড় গুলি) এছাড়াও এই নিম্নাঞ্চগুলি শুষ্ক মৌসুমে পানির মজুদ হিসেবে কাজ করে যা থেকে ছোট ছোট নদী বা খালগুলি বেইজ ফ্লো হিসেবে পানির যোগান পায়।। বাঁধের কারনে স্বাভাবিক বন্য ব্যহত হলে এই নিম্নাঞ্চগুলি সঠিক সময়ে পানি পাবেনা এবং এদের স্বাভাবিক মরফোলজি ব্যহত হবে আর সেই সাথে এর উপর নির্ভরশীল ছোট ছোট নদীগুলো শুকিয়ে যাবে।
  5. সাধারনত নদীর পানির গভীরতা কম বলে এতে পানির তাপমাত্রা প্রায় ধ্রুব থাকে।কিন্তু বাধেঁর কারনে উজানে সে জলাধার সৃষ্টি হয় তা বেশ গভীর হয়। এই জলাধারের উপরিতল সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকে বলে তাপমাত্রা বেশী হয় অন্যদিকে নিচের দিকে নিম্ন তাপমাত্রার পানি থাকে। পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইনগুলি থাকে জলাধারে তলদেশে, আর তাই অপেক্ষাকৃত নিম্ন তাপমাত্রার পানি টারবাইনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে ভাটির নদীতে গিয়ে পড়ে। অনেক জলজ অনূজীব আছে যারা পানির তাপমাত্রার একটি বাৎসরিক চক্রের উপর নির্ভরশীল[১০]। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যখন এই চক্রকে পরিবর্তিত করি আমরা তাদের বেঁচে থাকাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলি।
  6. আগেই বলেছি প্রজননের সময় মাছ সাধারনত ভাটি থেকে উজানে যায়। বাঁধের কারনে মাছের এই স্বাভাবিক অভিবাসন সম্পূর্ন রূপে ব্যহত হয় আর তাই প্রকারান্তরে আমরা একটি নদীতে বাঁধ দিয়ে তার ভাটির মৎসসম্পদ প্রায় ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই।
  7. বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বেড়ে যাবে।ভাটির অঞ্চলে সাধারনত এই সময়ে চাষাবাদ শুরু হয়।এই বর্ধিত পানির ফলে স্বাভাবিক কৃষি আবাদ প্রক্রিয়া ব্যহত হবে।
  8. ভাটি অঞ্চলে বাঁধের সবচেয়ে ভয়াবহ একটি প্রভাব হচ্ছে ‘ড্যাম ব্রেক’। যদি কোন কারনে বাঁধ ভেঙ্গে যায় তাহলে সে উচ্চতা ও ফ্রিকোয়েন্সিত ঢেউ তৈরী হবে তা ভাটি অঞ্চলকে নিশ্চিন্ন করে দেবে।
উজান ভাটির উপর সাধারন প্রভাবঃ
  1. বাঁধের যে প্রভাবটি উজান ভাটি দুই অঞ্চল এমনকি স্বয়ং বাঁধের উপরও প্রাভাব ফেলতে পারে তা হলো এর বিপূল পরিমান পানির ওজন মাটির অভ্যন্তরে চাপ বৃদ্ধি করতে পারে ([৪],[৭])।এই বর্ধিত চাপ অনেক সময় ভূমিকম্পের কারন হয়ে দাঁড়ায়, যদিও এটি নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য আছে তবুও এটিকে একেবারে অমূলক বলা যায়না।
  2. আমি আগেই বলেছি বাঁধের কারনে সৃষ্ট জলাধারের উপরিতলের ক্ষেত্রফল নদীর উপরিতলের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী। ফলে এই অঞ্চলের স্বতঃ বাষ্পীভবন বেড়ে যাবে। আমরা জানি স্বতোবাষ্পীভব বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করে। ফলে বাঁধের অঞ্চলের জলবায়ু কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হবে।
ব্যারেজের প্রভাবঃ

ব্যারেজের প্রভাব সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিমানে ওয়াকিবহল। ফারাক্কা আমাদের দেখিয়েছে উজানের ব্যারেজ কিভাবে ভাটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। খুব সংক্ষপে বলতে ব্যারেজের উজানে প্রভাবের চেয়ে ভাটিতে প্রভাব অনেক অনেক গুন বেশী।ব্যারেজ যেহেতু মূলত পানির অপসারন ঘটায় তাই ভাটিতে পানির পরিমান কমে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে এটি আরো প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। এই পানি অপসারনের পরিমান নির্ভর করে ব্যারেজের প্রয়োজনের উপর।অন্যদিকে উজানে ব্যারেজের প্রভাব স্বাভাবিক ভাবেই কম কারন ব্যারেজের কারনে সৃষ্ট এফ্লাক্স ( বর্ধিত পানিত উচ্চতা)তুলনামূলক ভাবে কম।

কি ধরনের গবেষণা প্রয়োজনঃ
আসলে যেকোন বাঁধের প্রভাব আলোচনা করার জন্য প্রয়োজন একটি সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত গবেষণা। আমরা শুরুতেই জেনে নেই আসলে কি কি ধরনের গবেষণা প্রয়োজনঃ
  1. টিপাইমুখ বাধঁ ও ফুলেরতল ব্যারেজের জন্য বারাক-সুরমা-মেঘনা অববাহিকার একটি পূর্নাংগ ভৌত মডেল ( ফিজিকাল মডেল) স্টাডিঃ এই মডেল আসলে পুরো প্রকল্প ও এর প্রভাব পড়ে এমন এলাকার একটি ল্যাবরেটরী সংস্করন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই মডেল, এর জন্য বিপুল পরিমান উপাত্ত প্রয়োজন। আমার জানামতে বাংলাদেশের কাপ্তাই বাঁধের জন্যও এরকম একটি মডেল বানানো হয়েছিল। এটি ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের জন্যই প্রয়োজন।
  2. গানিতিক হাইড্রোলজিকাল মডেল স্টাডিঃ গানিতিক মডেল আসলে একটি কম্পিউটার মডেল।হাইড্রোলজিকাল মডেল মূলত পানির পরিমান নিয়ে কাজ করে। সমগ্র বারাক-সুরমা-মেঘনা অববাহিকার জন্য এই মডেল সেট-আপ করতে হবে।ইনপুট হিসেবে দিতে হবে ভূপ্রকৃতি, বৃষ্টিপাত, মাটির প্রকৃতি, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ এবং আরো অনেক কিছু। টিপাইমুখ বাঁধ হলে এর অববাহিকায় পানির পরিমানের কি প্রভাব পড়বে তা এই স্টাডি থেকে জানা যাবে।
  3. গানিতিক হাইড্রোলিক মডেলঃ এটি মূলত উজানে পানির প্রবাহকে হিসেবে নিয়ে ভাটিতে মডেলের শেষ সীমা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ও গতিবেগ প্রদান করে। এই দুই মৌলিক উপাত্ত ( উচ্চতা ও গতিবেগ) কে ব্যবহার করে আরো প্রয়োজনীয় অনেক উপাত্ত বের করা যায়।টিপাইমুখের ক্ষেত্রে আমরা উজানের ইনপুট হিসেবে টিপাইমুখ বাঁধের প্রবাহ চিত্র( ডিসচার্জ কার্ভ) অর্থ্যাৎ ভারত বছরের কোন দিন কি পরিমান পানি ছাড়বে তার একটি হাইড্রোগ্রাফ ব্যবহার করতে হবে আর এর সীমা হবে ন্যুনতম চাঁদপুর পর্যন্ত।এটি দিয়ে ড্যাম ব্রেক স্টাডিও করা যাবে।
  4. গানিতিক মরফোলজিকাল মডেলঃ এটি গানিতিক হাইড্রোলজিকাল মডেল থেকে প্রাপ্ত পানির গতিবেগ ও উচ্চতা থেকে নদীর বুক থেকে কি পরিমান পলি অপসারিত হবে বা জমা হবে তা বের করবে।
  5. গানিতিক হ্যাবিটেট মডেলঃ আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে নদীতে একেক গভীরতায় একেক মাছ পাওয়া যায় কারন তারা ঐ স্তরের গতিবেগের সাথে অভিযোজিত। গানিতিক হ্যাবিটেট মডেল হাইড্রোলিক মডেল থেকে প্রাপ্ত পানির গতিবেগ আর উচ্চতাকে ইনপুট হিসেবে নিয়ে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবে পরিবর্তিত প্রবাহের সাথে সাথে এর ভাটির নদীর ও সংলগ্ন হাওড় এলাকার মাছের হ্যাবিটেটের পরিবর্তন দেবে।
  6. রিজিওনাল ক্লাইমেট মডেলঃ এটি মূলত GCM (General Circulation Model) থেকে উপাত্ত নিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ ও এর প্রভাব পড়ে এমন এলাকার জন্য এই বাঁধের কারনে ভবিষ্যতে জলবায়ূ পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাত্তের পরিবর্তনের সিমুলেশন করবে।

আমি নিজে শুধুমাত্র হ্যাবিটেটে মডেল ছাড়া বাকী সব মডেলগুলি নিয়ে কাজ করেছি বা এখনো করছি তাই জানি এগুলো কতটুকু কষ্টসাধ্য কাজ। কিন্তু যার সাথে একটি দেশের মানুষের জীবন মরণের সমস্যা সেখানে শত সমস্যা হলেও আমাদেরকে তা করতে হবে।
কি ধরনের গবেষণা হয়েছেঃ
টিপাইমুখ নিয়ে এখন পর্যন্ত আমার জানা মতে স্বীকৃত গবেষণার উৎসঃ
  1. Northeast Regional Water Management Plan (FAP 6)[৮]
  2. টিপাইমুখ প্রকল্পের জন্য NEECOO এর EIA রিপোর্ট[২]
  3. আর একটি উল্লেখ করার মত উৎস হলো IWM (Institute of Water Modeling) এর টিপাইমুখ এর উপর একটি অপ্রকাশিত স্টাডি যা ২০০৫ এ একটি কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে তথ্যসুত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। [১১]
FAP 6 রিপোর্ট অনুসারে টিপাইমুখ বাঁধের বাংলাদেশে প্রভাবঃ
FAP 6(১৯৯৪)[৮] এ মূলত বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পানি ব্যবস্থাপনা (NERP) নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে এবং যেহেতু টিপাইমুখ বাঁধ তখন পরিকল্পনাধীন ছিল তাই এই গবেষণায় এই বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাবের দিকগুলি আলোক পাত করা ও ভবিষ্যৎ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আঞ্চলিক হাইড্রোলজিক প্রভাবের উপর গবেষণা করার জন্য Surface Water Modeling Center সংক্ষেপে SWMC (বর্তমান Institute of Water Modeling IWM) ও NREP দলের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সেট-আপ করা Northeast Regional Model ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে এটি মূলত 1-Dimensional গানিতিক হাইড্রোলিক মডেল এবং এতে নদীর মরফোলজি (গতিবেগের সাথে নদীর পলি ও গভীরতা পরিবর্তন) বিবেচনা করা হয়নি জটিলতা এড়ানোর জন্য।
এইসব গবেষণায় সাধারনত যা করা হয় তা হলো প্রথমে একটি ‘বেইজ সিনারিও’ দিয়ে মডেল রান করা হয় ক্যালিব্রেশনের জন্য।মডেল ক্যালিব্রেশন হলো মূলত মডেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপাত্তের মান বের করা। এটি করা হয় মডেল হতে প্রাপ্ত ফলাফল আর পর্যবেক্ষনকৃত উপাত্তের তুলনা করে। এই দুইয়ের মধ্যে চেষ্টা করা হয় সর্বোচ্চ পরিমান সম্পর্ক স্থাপন করতে।NREP এর গবেষণায় এর বেইজ সিনারিও ছিল ১৯৯১-১৯৯২। বেইজ সিনারিও রান দেবার পর আরো দুটি সিনারিও সেট আপ করা হয়ঃ একটি ‘পরিকল্পনা বিহীন ভবিষ্যৎ সিনারিও’ আর আরেকটি ‘পরিকল্পনা সহ ভবিষ্যৎ সিনারিও’। এই দুইয়ের ফলাফলের পার্থক্যই কিন্তু বিভিন্ন উন্নয়ন/পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে একটি ধারণা দিবে। এই দুই ভবিষ্যৎ সিনারিও আসলে ২০১৫ পর্যন্ত আলোকপাত করা হয় এবং এতে টিপাইমুখ বাঁধ/ কাছাড় সেচ প্রকল্প ( ফুলেরতল প্রকল্প) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে রিপোর্টে এই টিপাইমুখ বাঁধ/ কাছাড় সেচ প্রকল্পের উপাত্তের সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে সুতরাং এই গবেষণা আমাদেরকে হয়ত একটি সাধারন ধারণা দিতে পারবে কিন্তু এটি থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসার চিন্তা করা সমীচিন হবেনা। এই গবেষণায় টিপাইমুখ ড্যাম ভেঙ্গে গেলে তার কি প্রভাব হবে সেটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এক্ষেত্রে MIKE-11 ( একটি ড্যানিশ গানিতিক মডেল) ব্যবহার করা হয়েছে যদিও তারা রিপোর্টে উল্লেখ করেছে সেটি আসলে “শুধু মাত্র ইলাস্ট্রেশন এর জন্য”। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে গানিতিক মডেল নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা জানেন এই মডেলগুলি সেট-আপ করা কতটা উপাত্ত নির্ভর। যেহেতু টিপাইমুখ বাঁধের প্রয়োজনীয় উপাত্ত সেই অর্থে উন্মুক্ত নয় তাই আবারো বলে নিচ্ছি এই মডেলের ফলাফলকে ভবিষ্যতের জন্য ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ অবশ্যম্ভাবী হিসেবে নয়।
এখানে একটি গুরুত্ত্বপূর্ন তথ্য যোগ করে রাখি এই গবেষণার সময় বাংলাদেশ যুক্ত নদী কমিশনের মাধ্যমে টিপাইমুখ বাঁধের প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা চালায় কিন্তু ন্যুনতম পরিমান উপাত্ত নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পরিশেষে কিছু ধারণার উপর নির্ভর করতে হয়। ধারনা গুলি হলোঃ
  1. সেচের জন্য পানি উত্তোলন হবে ১ মিটার
  2. পানি অপসারন ক্রমাগত ভাবে শুষ্ক মৌসুম (নভেম্বর থেকে এপ্রিল)পর্যন্ত চলবে।

এই গবেষণা অনুযায়ী টিপাইমুখ বাঁধ/কাছাড় যেচ প্রকল্পের প্রভাব নিচে দেয়া হল। হয়েছে। উল্লেখ্য যে এই প্রভাবগুলি নিয়ে পানি পরিকল্পনা সংস্থা (Water Resources Planning Prganization বা WARPO) এর সাবেক মহাপরিচালক এম এ কাসেম প্রথম আলোতে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন [৬]।
  1. জলাধার পূরণের সময়কার প্রভাব এটি মুলত বাঁধের জলাধার কিভাবে পূর্ণ করবে তার পরিকল্পনার উপর নির্ভরশীল। অনেক সময় প্রকল্পের সুবিধা তাড়াতাড়ি পাবার জন্য অতিদ্রুত ভাবে জলাধার পূর্ণ করা হয় যা বাংলাদেশের মত ভাটির অঞ্চলে ভয়াবহ পরিবেশ বিশেষ করে বাস্তুসংস্থান বিপর্যয় ঘটাবে।
  2. বর্ষা মৌসুমে প্রভাব
    1. বন্যার পানির প্রবাহ কমে যাবে, অমলসিদে অর্থ্যাৎ যেখানে বারাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে যেখানে বারাক নদীর ‘সর্বোচ্চ প্রবাহ’ ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং পানির পরিমান শতকরা ২০ ভাগ কমে যাবে।
    2. পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় অমলিসিদে বারাক নদীর পানির উচ্চতা ১.৬ মিটার কমে যাবে
    3. এর ফলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানি প্রবাহ প্রায় সমভাবে হ্রাস পাবে যা প্রকারান্তে এই দুই নদী বন্যার সম্ভাব্যতা কমিয়ে দেবে এবং সিলেট অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধতার পরিমান হ্রাস পাবে।
  3. শুষ্ক মৌসুমে প্রভাব
    1. অমলসিদে পানির সর্বোচ্চ প্রবাহ শতকরা ১০০ ভাগ থেকে ২০০ ভাগ বাড়বে এবং পানির পরিমান শতকরা ৬০ ভাগ বেড়ে যাবে।
    2. এই বর্ধিত প্রবাহের কারনে অমলসিদে পানির উচ্চতা ১.৭ মিটার বেড়ে যাবে।
  4. ড্যাম ব্রেকের প্রভাব
    বাঁধ ভাঙ্গার কারনে বাঁধের স্থলে যে ঢেউ উৎপন্ন হয় তা সাধারনত ঘন্টায় ১০ থেকে ৩০ কিলোমিটার বেগে ভাটির দিকে ধাবিত হয়, যদিও এই বেগ দূরত্ত্বের সাথে হ্রাস পায়। বাঁধ স্থল থেকে অমলসিদের দূরত্ত্বকে ২০০ কিলোমিটার ধরলে এই ঢেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সময় লাগবে ২৪ ঘন্টা। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় এই ঢেউয়ের উচ্চতা হবে ৫ মিটার। টিপাইমুখ বাঁধের জলাধারের ধারন ক্ষমতা ১৫,০০০ মিলিয়ন ঘনমিটার। এই বিপুল প্রবাহ ১০ দিন ধরে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং সমস্ত বন্যার্ত এলাকা থেকে পানি সরে যেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে।

IWM এর অপ্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে টিপাইমুখ এর প্রভাবঃ
শুরুতেই একটি জিনিস পরিষ্কার করে নেয়া ভাল আর তা হলো টিপাইমুখ বাঁধের গবেষণার উপর IWM এর প্রকাশিত কোন রিপোর্ট নেই। এই বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করার আগে থেকেই ফেইসবুকে IWM এর রিপোর্টের কিছু তথ্য পাই। পরে আন্তর্জালে খোঁজ করে সেপ্টেম্বর ২০০৫ এ কেনিয়ার নাইরবি তে United Nations Environment Programme (UNEP) কতৃক আয়োজিত Dams and Development Project শীর্ষক কর্মশালায় বাংলাদেশের মোঃ গোলাম কিববিয়া " ISSUE-GAINING PUBLIC ACCEPTANCE FOR LARGE DAMS ON INTERNATIONAL RIVERS: THE CASE OF TIPAIMUKH DAM IN INDIA AND CONCERNS IN LOWER RIPARIAN" শীর্ষক একটি উপস্থাপিত প্রবন্ধ পাই যেখানে IWM এর টিপাইমুখ এর উপর একটি অপ্রকাশিত স্টাডি রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তথ্যসুত্রে আমি এটির লিঙ্ক উল্লেখ করেছি, আগ্রহী কেউ এটি দেখতে পারেন। আমার নিচের আলোচনা মূলত এই প্রবন্ধকে ঘিরেই হবে।
  1. হাইড্রোলজির উপর প্রভাবঃ
    1. টিপাইমুখ বাঁধ পূর্ন ভাবে এর কার্যক্রম শুরু করলে অমলসিদে বরাক নদীতে বর্ষা মৌসুমে গড় প্রবাহ নিম্নরূপে পরিবর্তিত হবেঃ
      1. জুন মাসে ১০% কমে যাবে
      2. জুলাই মাসে ২৩% কমে যাবে
      3. আগষ্ট মাসে ১৬% কমে যাবে
      4. সেপ্টেম্বর মাসে ১৫% কমে যাবে
    2. তুলনামূলক ভাবে শুষ্ক বর্ষা মৌসুমে এই গড় প্রবাহ পরিবর্তন নিম্নরূপে হবেঃ
      1. জুলাই মাসে ২৭% কমে যাবে
      2. আগষ্ট মাসে ১৬% কমে যাবে
      3. সেপ্টেম্বর মাসে ১৪% কমে যাবে
    আমি এই প্রবন্ধে শুষ্ক মৌসুমের প্রবাহ নিয়ে কোন কিছু পাইনি।
  2. নদী-হাওড় বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাবঃ
    1. সিলেট এবং মৌলভীবাজারের হাওড়গুলি আসলে বর্ষা মৌসুমের বন্যা দ্বারা প্লাবিত হয় এবং এটিকে ঘিরেই এর বাস্তুতন্ত্র আবর্তিত হয়। টিপাইমুখ বাঁধের ফলে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার জলাভূমি আগের থেকে গড়ে যথাক্রমে ২৬% ও ১১% কমে যাবে।
    2. সুরমা কুশিয়ারা নদী সিস্টেমের উপরের দিকের শতকরা ৭১ ভাগ অঞ্চল গড় বর্ষা কালে বন্যাপ্লাবিত হবেনা।
    3. কুশিয়ারা নদীর বা'তীরে অবস্থিত কুশিয়ারা-বর্দাল হাওড় গড় বর্ষার সময় পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে।
    4. কাওয়ারদিঘী হাওড় এর ২৬% প্লাবন এলাকা হারাবে।
    5. হাকালুকি হাওড় এবং দামীর হাওড় এর উপর তুলনামূলক প্রভাব কম পড়বে।

  3. মরফোলজির(নদীর গভীরতা ও গতিপথ) উপর প্রভাবঃ
    আগেই উল্লেখ করেছি বাঁধের কারনে এর টানেল দিয়ে যে পানি নির্গত হবে তাতে পলির পরিমান শূন্য হয়ে যাবে যা কিনা প্রকারান্তরে ভাটি অঞ্চলে ব্যাপক নদীক্ষয়ের সৃষ্টি করবে। এই নদীক্ষয় ১০০ থেকে ১৫০ কিমি দীর্ঘায়িত হবে। বাংলাদেশ বাঁধ থেকে ২০০ কিমি ভাটিতে, অর্থাৎ এই বিপুল পরিমান পলি বাহিত হয়ে তা আসবে বাংলাদেশে যা কিনা বরাক নদীর নিচের অংশে যেখানে থেকে তা সুরমা আর কুশিয়ারা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে সেখানে জমা হবে। বর্ষার শেষের দিকে এই পলি সঞ্চয়ের হার আরো বেড়ে যাবে। এই বেড়ে যাওয়া পলি কুশিয়ারা নদীর বেশ কিছু শাখানদীর মুখ ( যেখান থেকে শাখা নদী গুলো তৈরী হয়) বন্ধ করে দিতে পারে।
ভারতের EIA রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে টিপাইমুখের প্রভাবঃ
এই রিপোর্টটির জন্য আমি সবচেয়ে অপেক্ষা করেছি এবং সবচেয়ে হতাশ হয়েছি এর "Impact of The Project on Environment" শীর্ষক চ্যাপ্টারটি দেখে[২] । আমি খুঁজ়ে বেড়াচ্ছিলাম এটিতে বাঁধের ভাটিতে প্রভাব সম্পর্কে কি লেখা আছে। প্রায় ত্রিশ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে জলাধারের কারনে এর উজান কী কী প্রভাব পড়বে তার সব কিছুই উল্লেখ আছে কিন্তু ভাটিতে কী হবে তার উপর আছে মাত্র একটি প্যারাগ্রাফ। আমি সরাসরি প্যারাটি নিচে দিলামঃ
"In a study made to examine the environmental and economic impact at the down stream at pre and post project scenario, it is found that average water availability at down stream for monsoon season at post dam condition will decrease by 30% in comparison to pre-dam condition and thereby will provide relief to down stream population from recurring annual flood havoc. Similarly, due to regulated flow from reservoir, the non-monsoon flow will increase by 110 percent, which will provide irrigation benefit for Rabi crops"[২].
অর্থাৎ কিনা বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে পানি ৩০% কমে যাবে আর শুষ্ক মৌসুমে ১১০% বেড়ে যাবে, এবং এই বর্ধিত পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে রবি শস্য ফলানো যাবে।
দুঃখের বিষয় হলো ৩০ পৃষ্ঠার ঐ রিপোর্টে প্রকল্প চলাকালীন সময়ে শ্রমিকদের কি পরিমান মলমুত্র জলাধারে পড়বে তার প্যারাগ্রাফটিও বোধ হয় এর ভাটিতে প্রভাবের চেয়ে বেশী।
একজন সাধারণ মানুষও যেখানে জানে যে বাঁধের কিছু না কিছু প্রভাব উজান ভাটিতে থাকে সেখানে একটি বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের Environmental Impact assessment (EIA) এ এর ভাটি অঞ্চলকে প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করা কতটা যুক্তিযুক্ত ? প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র থেকে ন্যূনতম পরিমান সহযোগিতা যদি আমরা না পাই তাহলে তাদেরকে আমাদের বন্ধু ভাবব নাকি শত্রু? অথচ এই রিপোর্টের গবেষণা দলে আছেন পানিসম্পদ, ফরেস্ট্রি, ইঞ্জিয়ারিং জিওলোজি, এগ্রিকালচার, ইকোলজি ( প্রাণিজ ও উদ্ভিজ), বয়োডাইভার্সিটি ও সামাজিক অর্থিনীতির সব বিশেষজ্ঞবৃন্দ।
বাংলাদেশে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবঃএকটি সমন্বিত বিশ্লেষন মূলক আলোচনা


বর্ষাকালে প্রবাহ হ্রাসের ফলে বন্যার প্রকোপ হ্রাস কতটা যুক্তিযুক্ত ও ইতিবাচকঃ
FAP 6, IWM কিংবা টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA রিপোর্টে যেটি প্রথমেই উঠে এসেছে তা হলো বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহের হ্রাস এর বিষয়টি। FAP 6 এর রিপোর্টে বলা হয়েছে বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে অমলসিদে পানির সর্বোচ্চ প্রবাহ ২৫% কমবে আর পানির পরিমান ২০% কমবে, অন্যদিকে IWM এর রিপোর্টে (অপ্রকাশিত) উঠে এসেছে যে জুন, জুলাই আগষ্ট আর সেপ্টেম্বরে পানির প্রবাহ হ্রাস পাবে যথাক্রমে ১০%, ২৩%, ১৬%, ১৫% অর্থাৎ এই চার মাসে গড়ে ১৬% প্রবাহ কমবে। একই চিত্র দেখা যাই ভারতের EIA রিপোর্টে, যেখানে ৩০% প্রবাহ হ্রাসের কথা বলা হয়েছে। এই পানি প্রবাহ হ্রাসের কথা বলে যুক্তি দেয়া হচ্ছে যে এর ফলে ভাটিতে অর্থাৎ বাংলাদেশে ফ্ল্যাশ ফ্লাড কমবে এবং সিলেট ও মৌলভীবাজার এলাকা সহ বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল বন্যা মুক্ত হবে। বিষয়টি কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটি এক বাক্যে বলা যায়না। এখানে প্রসংগত কিছু জিনিস চলে আসেঃ

  1. প্রথমতঃ বন্যা আসলে কি কমবে ? বাংলাদেশের বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ডঃ আইনুন নিশাত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন ,
    "বরাক নদীর ভাটির দিকের অঞ্চল সিলেটের হাওড় এলাকায় বর্ষার শুরুতে আগাম বন্যা হয় আবার বর্ষার শেষের দিকে পানি কমে আসে।টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের পর বর্ষার শুরুতে রিজার্ভারে পানি ধরে রাখার প্রয়োজন পড়বে আবার বর্ষার শেষের দিকে পানি ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এর ফলে বর্ষার শুরুতে বন্যা কমে আসতে পারে আবার বর্ষার শেষে বন্যার প্রকোপ বাড়তে পারে।এর প্রভাব বাংলাদেশের উপরেও পড়বে"[৪]।
    অর্থাৎ বন্যা মুক্ত হবার যে কথা বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়, যেটি হতে পারে তা হলো বন্যার স্বাভাবিক সময় পরিবর্তিত হতে পারে।
    আরো যে বিষয়টি গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হলো বাঁধের কারনে এর উজানে জলাধারে সব পলি সঞ্চিত হবে। যে পানি বের হয়ে আসবে তাকে এক কথায় বলা যায় " Hungry Water" বাংলায় যার প্রতিশব্দ হতে পারে রাক্ষুসী পানি। এই পানি পলিমুক্ত বলে এর পলিধারন ক্ষমতা অনেক বেশী আর তাই এটি বাঁধের ভাটিতে ১০০ থেকে ১৫০ কিমি ব্যাপী ব্যাপক নদী ক্ষয়ের সৃষ্টি করবে।বাংলাদেশ বাঁধের ২০০ কিমি ভাটিতে থাকায় এই বিপুল পরিমান পলি বরাক নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। কিন্তু পানির প্রবাহ তুলনামূলক ভাবে কমে যাওয়ায় পলি বহন করার ক্ষমতা কমে যাবে, এবং তা সুরমা ও কুশিয়ারার বুকে জমা হবে। এতে নদীর নাব্যতা ও গভীরতা হ্রাস পাবে। সেক্ষেত্রে আগে যেটা স্বাভাবিক বর্ষাকালীন প্রবাহ ছিল প্রকারান্তরে তা বন্যা আকারে আসতে পারে এই এলাকায়।
  2. দ্বিতীয়তঃ যদি ধরেই নেই যে বাঁধের ফলে সিলেট আর মৌলভীবাজার এলাকা বন্যামুক্ত হবে সেখানেও প্রশ্ন আসে, এই তথাকথিত বন্যামুক্ত হওয়া কতটা ইতিবাচক? এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞ ডঃ জহির উদ্দীন চৌধুরীর মন্তব্য বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্যঃ
    " সাধারণভাবে আমরা ধরে নেই যে বন্যার সময় যদি পানি কমানো যায় এবং শুষ্ক মৌসুমে যখন পানির পরিমান কম থাকে তখন পানির সরবরাহ বাড়ানো যায় তা খুবই ভাল একটি বিষয়। সে বিবেচনা থেকেই ভারত টিপাইমুখ বাঁধের পেছনে তাদের যুক্তি হিসেবে এই বিষয়টি তুলে ধরেছে।কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের একটি অনন্য বৌশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে রয়েছে বিশাল জলাভুমি ও অসংখ্য হাওড়। এর একটি নিজস্ব ইকোসিস্টেম রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে এখানে বর্ষার সময় পানি বাড়বে, বন্যা হবে ও শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকা শুকিয়ে যাবে, এর উপর ভিত্তি করেই সেখানকার ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। ফলে বন্যার পানি কমা বা শুষ্ক মৌসুমে পানি বেশী পাওয়ার যে আশ্বাস ভারত দিচ্ছে তা এই এলাকার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে[৩]।"
    আমরা জানি বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল অর্থাৎ মেঘনা-সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকার একটি সতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে আর তা হলো এর হাওড়গুলি। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ছোট বড় মোট ৪১১ টি হাওড় প্রায় ৮০০০ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত যা কিনা বাংলাদেশের এই অঞ্চলের মোট ক্ষেত্রফলের শতকরা ২৫ ভাগ।
    haor
    এই হাওড়গুলির কিছু হচ্ছে 'রাইপেরিয়ান জলাভুমি' (উপরের ছবি দেখুন)অর্থাৎ যেগুলো প্লাবনভূমিতে অবস্থিত। এগুলো নদীর সাথে সরাসরি যুক্ত বলে নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি বা কমের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাবিত হয়।আবার কিছু আছে 'নন-রাইপেরিয়ান জলাভূমি' যা আসলে পানির যোগান পায় আশে পাশের নদী থেকে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ থেকে।এখন বর্ষাকালে পানির প্রবাহ কমে গেলে রাইপেরিয়ান হাওড়গুলিতে পানি যাবেনা এবং সেই সাথে ভূগর্ভস্থ প্রবাহ কমে যাওয়ায় নন-রাইপেরিয়ান হাওড়গুলিও পানি পাবেনা।বৃষ্টির পানি থেকে একমাত্র নন-রাইপেরিয়ান জলাভূমিগুলি পানির যোগান পেতে পারে কিন্তু তাও এই হাওড়গুলির আয়তনের তুলনায় নগন্য।
    এই হাওড় এলাকার রয়েছে এক বিচিত্র বাস্তুতন্ত্র।এই হাওড়গুলি বর্ষা মৌসুমে দেখতে অনেকটা সমুদ্রের মত হয় এবং বন্যার পানি সরে গেলে তা জলজ প্রাণী বিশেষ করে নিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রমে পরিনত হয়। যেহেতু বছরের একটি বিশেষ সময় ধরে এই হাওড় এলাকা জলপূর্ন থাকে তাই এলাকার মানুষদের জন্য মৎস্য শিকার অন্যতম প্রধান পেশা।
    বাঁধের কারনে বন্যার সময় পানি না আসায় এই হাওড়গুলি একসময় ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবে সেই সাথে বিলুপ্ত হবে বেশ কিছু প্রজাতি। এই এলাকার মানুষদের তখন বর্ষা মৌসুমে জীবিকার জন্য অন্য কোন পথ বেছে নিয়ে হবে।

শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ বৃদ্ধি কতটা ইতিবাচক আর কতটা নেতিবাচকঃ
টিপাইমুখ বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বলা হচ্ছে। FAP 6 এর রিপোর্ট অনুযায়ী অমলসিদে পানির সর্বোচ্চ প্রবাহ শতকরা ১০০ ভাগ থেকে ২০০ ভাগ বাড়বে এবং পানির পরিমান শতকরা ৬০ ভাগ বেড়ে যাবে অন্যদিকে টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA রিপোর্টেও বলা আছে বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ ১১০% বেড়ে যাবে। এখন এই বর্ধিত পানি কি আমাদের জন্য আশীর্বাদ না কি অভিশাপ সেটা গবেষণার দাবী রাখে।
FAP 6 এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে এই বর্ধিত প্রবাহের ফলে নৌচলাচল, সেচ ও মৎস্য চাষ বৃদ্ধি ঘটবে কিন্তু কিছু কিছু এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশন ব্যহত হবে। ভারতের দাবী এই বর্ধিত পানি দিয়ে রবি শস্য ফলানো যাবে, অবশ্য সেটি কোথায় তা উল্লেখ নেই তবে ধারনা করা যায় তা আসলে ফুলেরতল ব্যারেজের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।
তবে যে বিষয়টি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হলো বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের এই হাওড়গুলি শুষ্ক মৌসুমে যখন শুকিয়ে যায় তখন কৃষকরা সেখানে বোরো ধান বপন করে যা এই অঞ্চলের একমাত্র ফসল। এই ধান বর্ষা আসার আগেই ঘরে উঠে যা এই লোক গুলির বছরের একমাত্র শর্করার যোগান দেয়।বাঁধের কারনে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ বেড়ে গেলে এই এলাকার চাষাবাদ ব্যহত হবার আশঙ্কা আছে। ডঃ জহির উদ্দিন চৌধুরীও তার সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি আলোক পাত করেছেন[৩]
আর যদি ধরেও নেই যে এই বর্ধিত প্রবাহ চাষাবাদের জমিকে খুব বেশী প্লাবিত করবেনা সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন থেকে যায়। এই জমিগুলো বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ায় বিপুল পরিমান পলি জমে। এখন বর্ষা মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় তা আগের মত আর প্লাবিত হবেনা ফলে জমিগুলো তাদের উর্বরতা হারাবে।
অতি শুষ্ক মৌসুমে কি হবে ?
ভারত যা বলে আসছে তার সব কিছুই আসলে গড় প্রবাহের উপর ভিত্তি করে। কখনো কখনো পর্যায়ক্রমে কিছু বছর থাকে যেখানে যেসময় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক গড় প্রবাহ থেকে অনেক কমে যায়। আমার প্রাপ্ত তথ্য মতে বরাক অববাহিকায় ১৯৭৯-১৯৮১ পর্যন্ত এরকম একটি পর্যায় গিয়েছে যেখানে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে পানির অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম ছিল। টিপাইমুখ বাঁধ হবার পরে এরকম একটি সময় আবার যদি আসে সেক্ষেত্রে বাঁধের উজানে জলাধারের পানির স্তর কমে যাবে।
reservoir
ছবিসুত্রঃ Dam design and operation to optimize fish production in impounded river basins
পানিবিদ্যুৎ প্রকলের জলাধারের একটি প্রস্থচ্ছেদ লক্ষ্য করুন উপরের চিত্রে। এখানে জলাধারের পানির স্তর যদি সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের (Firm Production) জন্য প্রয়োজনীয় লেভেলের চেয়ে নিচে নেমে যায় ( Critical level) সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। এই পরিস্থিতিতে শুষ্ক মৌসুমে বাঁধের টারবাইন থেকে যে পরিমান পানি ভাটিতে প্রবাহিত হবে তা বাঁধ পূর্ব পরিস্থিতির সাথে তুলনা করলে অনেক অনেক কম। এই অতি শুষ্ক মৌসুমের কারনে জলাধারের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পরবর্তী বর্ষা মৌসুমে লক্ষ্য থাকবে বেশী পরিমান পানি সঞ্চয় করার যা প্রকারান্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাবে এবং সেই সাথে বর্ষা মৌসুমে ভাটিতে পানির প্রবাহ আরো কমে যাবে। এই পরিস্থিতি তিন চার মৌসুম ধরে চললে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে বাংলাদেশে।



অতি বর্ষা মৌসুমে কি হবে ?
অতি শুষ্ক মৌসুমের মত অতি বর্ষা মৌসুমও আমাদের চিন্তা করতে হবে। প্রত্যেক জলাধারের একটা ধারন ক্ষমতা থাকে, সেই ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী পানি জলাধারে জমা হলে তা স্পিলওয়ে বা বিকল্প পথ দিয়ে ভাটিতে প্রবাহিত করা হয় যেমনটা আছে আমাদের কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বরাক অববাহিকায় যদি পর পর কিছু অতি বর্ষা মৌসুম আসে সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা আগের মতই থাকলে এই অতিরিক্ত পানি বিকল্প পথে বের করে দিতে হবে।বাঁধ হবার পর ভাটিতে মানুষের জীবন যাত্রা পরিবর্তিত হবে অর্থাৎ মানুষ স্বাভবতই তাদের ঘরবাড়ি আগের মত উঁচু করে বানাবেনা, বন্যার প্রকোপ কমে যাওয়ায় অববাহিকার অধিক মানুষ বসবাস করবে। সেক্ষেত্রে এই জাতীয় অতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধের নিরাপত্তার জন্য অধিক পানি ছেড়ে দিলে তা ভাটিতে অকষ্মাত বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে। এর উদাহরন কিন্তু ভারতেই আছে। সাধারনত যে অবস্থায় একটি বাঁধের "ওভারটপিং (উল্টে পড়া) " এর সম্ভাবনা দেখা যায় তখন সেটিকে রক্ষা করা হয় অধিক পানি ছেড়ে দিয়ে। ১৯৭৮ সালে ভকরা বাঁধ (Bhakra Dam) থেকে জরুরী ভিত্তিতে পানি অপসারনের কারনে পাঞ্জাবের প্রায় ৬৫,০০০ মানুষ গৃহহারা হয়েছিল। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে ভকরা বাঁধ প্রায় উল্টে পড়ার মত পরিস্থিতিতে গিয়েছিল এবং ঐ সময় পানি না ছাড়া হলে বাঁধ ভেঙ্গে পাঞ্জাবের প্রায় অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হত[১২]।
ভুমিকম্পে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তার পরিস্থিতি কি হবে তার কিছুটা FAP 6 এর রিপোর্টে দেখেছি, তবে এর সবকিছুই তাত্ত্বিক বিশ্লেষন। সত্যিকারে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা চিন্তা করতেও ভয় লাগে। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ভারতীয় ও বার্মা প্লেটের মিথস্ক্রিয়ার ফলে ভারত ও বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত।ভূতাত্ত্বিকভাবে টিপাইমুখ বাঁধ এলাকা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল আসলে অসংখ্য 'ফোল্ড ও ফল্ট' বিশিষ্ট [১৩]। দেখা গিয়েছে এই অঞ্চলে গত ১৫০ বছরে রিক্টার স্কেলে ৭ এর অধিক মাত্রার দু'টি ভূমিকম্প হয়েছে যার মধ্যে শেষটি ছিল ১৯৫৭ সালে যা কিনা টিপাইমুখ প্রকল্প থেকে পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে মাত্র ৭৫ কিমি দূরে[১৩]।
এছাড়া "জলাধার আবেশিত ভূমিকম্প" (Reservoir Induced Seismicity বা RIS) এর আশঙ্কাত আছেই। ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্পের EIA রিপোর্ট [২]অনুযায়ী এই বাঁধের 'Full Reservoir Level' সমুদ্র সমতল থেকে ১৭৫ মিটার উঁচুতে আর এর তলদেশের গড় উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২২.৫ মিটার উচুতে, অর্থাৎ জলাধারের পানির গড় উচ্চতা ১৫২.৫ মিটার।গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যেসব জলাধারের পানির উচ্চতা ১৫০ মিটারের বেশী তাদের ক্ষেত্রে এই RIS এর হার শতকরা ৩০ ভাগ[১৩], সেক্ষেত্রে টিপাইমুখ বাঁধও এই আশঙ্কাতে পড়ে।
অপ্রাকৃতিক পরিস্থিতিঃ
এই প্রাকৃতিক কারনগুলো ছাড়াও যদি কোন যান্ত্রিক কারনে বাঁধের টারবাইনগুলো অকার্যকর হয় অথবা গ্রীডের কোন সমস্যার কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয় তখন কি হবে? যেহেতু এটি পানিবিদ্যুৎ বাঁধ সেক্ষেত্রে টারবাইন ছাড়া অন্য কোন পথ দিয়ে সেই সময়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা থাকবে কিনা বা থাকলেও তা কত লেভেলে ( সমুদ্র সমতল থেকে ) থাকবে সেটিও বিবেচ্য বিষয়।
ফুলেরতল ব্যারেজ হলে কি হবে ?
আগেই বলেছি টিপাইমুখ প্রকল্পে বাঁধ থেকে ১০০ কিমি ভাটিতে একটি সেচ প্রকল্পের প্রস্তাব আছে। আপাতত বলা হচ্ছে এক লক্ষ বিশ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা রাখে হবে। এই প্রকল্প হলে কতটুকু পানি অপসারিত হবে তা হুট করে বলা যাবেনা। এটি নির্ভর কববে নিম্নোক্ত জিনিসের উপরঃ
  1. কমান্ড এরিয়া কত অর্থৎ কতটুকু জমিতে সেচ দেয়া হবে ?
  2. কি ধরনের সেচ ? সাপ্লিমেন্টারী নাকি ফুল
  3. কতটুকু বৃষ্টিপাত হবে?
  4. কি ধরনের ফসলে সেচ দেয়া হবে ?
  5. মাটির আর্দ্রতা ও পানি ধারন ক্ষমতা কেমন ?
  6. কি ধরনের মাটি?
  7. সেচ খালের দৈর্ঘ ও ধরণ ( লাইন্ড নাকি আনলাইন্ড)
  8. বায়ুর আর্দ্রতা
  9. এবং আরো অনেক কিছু
কিছু সঙ্কট সিনারিও এর প্রতি গুরুত্ত্ব আরোপ করতে হবে, সেমনঃ
  1. অতি শুষ্ক মৌসুমে কি হবে ?
  2. নদীর স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষার্থে ন্যুনতম প্রয়োজনীয় পানির পরিমান কত ( In-stream Flow Requirement) ?
  3. ভবিষ্যতে কমান্ড এরিয়া কতটুকু বাড়বে ?
  4. জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে উজানের প্রবাহ কিরূপে বা কতটুকু পরিবর্তিত হবে?
অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি পানি বন্টন নিয়ে মূল সমস্যাগুলো তৈরী হয় অতিশুষ্ক মৌসুম গুলিতে। একজন প্রকৌশলী যখন কোন কিছু ডিজাইন করে তাকে সবচেয়ে সঙ্কট সময় বিবেচনা করে তা করতে হয়। টিপাইমুখ বাঁধের ফলে অতিশুষ্ক মৌসুমে পানি কিভাবে কমে যেতে পারে তা আমি গত পর্বে ব্যাখ্যা করেছি। এর সাথে যদি ব্যারেজ দিয়ে পানি অপসারন করা হয় তাহলে তার প্রভাব কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। ডঃ জহির উদ্দীন চৌধুরীও এই বিষয়টা উল্লেখ করেছেন তার সাক্ষাৎকারে[৩]। যদি পানি অপসারন আর অতিশুষ্ক মৌসুম এর প্রভাব একসাথে হয় সেক্ষেত্রে বরাক নদীর প্রবাহ আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যেতে পারে বাংলাদেশে যার প্রভাব হবে আরেকটা ফারাক্কার মত। এই বিষয়টিকে আরো ভাবিয়ে তুলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি, কারন দেখা গিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে 'এক্সট্রিম ইভেন্ট' গুলি যেমন বন্যা, খরা আগের থেকে বেড়ে যায়। সেই বিচারে ভবিষ্যতে খরার ফলে বরাক নদীতে যখন প্রবাহ কমে যাবে তখন এই ফুলেরতল ব্যারেজ ভাটিতে আরো সমস্যার সৃষ্টি করবে।
আরো যে বিষয়টি গুরুত্ত্বপূর্ণ তা হলো বাঁধ ও ব্যারেজের উজানে দ্বৈত পলি সঞ্চয়। বাঁধের কারনে পলি জলাধারে সঞ্চয়ের কথা আমি বলেছি। এখন বাঁধের ১০০ কিমি ভাটিতে যদি আবার ব্যারেজ হয় তাহলে বাঁধের ভাটিতে নদীক্ষয়ের পর ব্যারেজের উজানে আবার পলি সঞ্চিত হবে। সুতরাং ব্যারেজের গেইট দিয়ে আবারও অপেক্ষাকৃত কম পরিমান পলি বিশিষ্ট পানি বের হবে যা কিনা আবার ভাটিতে নদীক্ষয় ও পরবর্তীতে সেই পলি সঞ্চয়ের কারন হয়ে দাঁড়াবে। শুধু বাঁধ হলে হয়ত ১০০-১৫০ কিমি এর মধ্যে নদীক্ষয় এর প্রভাব থাকত কিন্তু এখন বাঁধের ১০০ কিমি ভাটিতে ব্যারেজ হলে নদীক্ষয়ের প্রভাব বাংলাদেশেরও পরিলক্ষিত হবে।
টিপাইমুখ প্রকল্পের ইতিবাচক বনাম নেতিবাচক প্রভাবঃ
এই সিরিজের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ( আজকের ) পর্বে আমি এই প্রকল্পের বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি চেষ্টা করেছি মূল সমস্যাগুলিকে সহজবোধ্য ভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরতে যেন একজন সাধারণ মানুষ এইটু বুঝতে পারে যে এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য কতটুকু কুফল বা সুফল বয়ে আনতে পারে। আমি পানিসম্পদ কৌশলের একজন ছাত্র ও গবেষক হিসেবে যতটুকু ধারনা করতে পারি তা হলো এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবেনা, যা আনবে তা হলো ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ কিছু সমস্যা যা আমি আমার আলোচনায় দেখিয়েছি। এছাড়াও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এই অঞ্চলের জন্য ইতিমধ্যে গৃহীত অথবা পরিকল্পনাধীন বাংলাদেশের বেশ কিছু পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।
একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে এই ইতিবাচক বনাম নেতিবাচক দ্বৈরথের ব্যাপারে যবনিকা টানতে পারে যৌথ গবেষণা তবে তার আগে আমাদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি সমবেদনাশীল হতে হবে। এক কাপ্তাই বাঁধের ঘানি আজও বাংলাদেশ টেনে যাচ্ছে , মাত্র কয়েকশ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে প্রান হারিয়েছে হাজারো পাহাড়ী বাঙ্গালী। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি আমাদের পাহাড়ে কতটুকু শান্তির পরশ বুলাচ্ছে সেটা বিতর্কের অবকাশ রাখে কিন্তু আজকে ভারত যদি টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাহলে এই দুই দেশের মধ্যে তা যে শুধু অশান্তিই বয়ে নিয়ে আসবে তা নিশ্চিত করে ভবিষ্যৎবাণী করা যায়।

এই মূহুর্তে জাতি হিসেবে আমাদের কি করনীয়
কার কার ভূমিকা গুরুত্ত্বপূর্ণ?
এটি একটি জাতীয় সমস্যা যার সাথে জড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক কিছু ইস্যু। আর যেহেতু এটি দুই দেশের মধ্যকার সমস্যা তাই আমাদেরকে খুবই সাবধানতা ও দক্ষতা আর সেই সাথে কুটনৈতিক ভাবে এগোতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে এই ইস্যুটি নিয়ে আমাদের মধ্যে আবেগ কাজ করবে কিন্তু সমস্যাটি সমাধান করতে আবেগের চেয়ে তথ্য ও যুক্তির প্রয়োগ বেশী প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এক্ষেত্রে যাদের একসাথে কাজ করতে হবে তার হলোঃ
  1. সরকার
  2. বিশেষজ্ঞ
  3. রাজনীতিবিদ
  4. গণ ও প্রচার মাধ্যম
  5. প্রভাবিত এলাকার বিভিন্ন পেশার জনগণ
  6. দেশের সাধারণ জনগণ
প্রথমত এই বিষয়টি যেহেতু দু'টি দেশের মধ্যে বিদ্যমান তাই যেকোন যোগাযোগ রক্ষার কাজটি সরকারের কূটনৈতিক পর্যায় থেকে হতে হবে। কিন্তু যেহেতু বিষয়টা পুরোপুরি কৌশলগত তাই কুটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা কি হবে সেটি ঠিক করে দেবে আমাদের বিশেষজ্ঞরা। সরকার এই কাজটি সঠিকমত করছে কিনা তার গঠনমূলক তদারকি করবে রাজনীতিবিদেরা । জনগণকে এই বিষয়ে সাম্যক জ্ঞান দিয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে গণ আর প্রচার মাধ্যমগুলো আর সচেতন জনগণ দেশের প্রয়োজনে যেকোন প্রকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করবে।
সরকারের সাম্প্রতিক ভূমিকা ও কিছু সমালোচনাঃ
এই ইস্যুটি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা আর গবেষণার কোন বিকল্প নেই আর এই দায়িত্ত্ব একমাত্র নিয়ে পারে সরকার। ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি যে সংসদীয় কমিটি ভারত সফর করেছেন যার মধ্যে সরকারের সাংসদ, আমলা, বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। তাদের সাথে বিশদ কি আলোচনা হয়েছে সেটি আমাদের মত সাধারণ মানুষদের জানার অধিকার আছে নিশয়ই। আমরা যতটুকু সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি তার কিছুটা নিচে বিশ্লেষণ করছিঃ
সংসদীয় কমিটির সম্প্রতি ভারত সফরের সময় পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক এর এক বিবৃতি পড়ে হতাশ হলাম,
উদ্ধৃতি

"টিপাইমুখ বাঁধটি যদি সেচ প্রকল্প হয় তাহলে তা অবশ্যই ক্ষতিকর হবে, এর বিরোধিতা জাতীয়ভাবে করা উচিৎ। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে আরো সমীক্ষা চালিয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।” (প্রথম আলোঃ ৩০ জুলাই)"
এই মন্তব্যটিকে বিশ্লেষণ করলে কি এরকম দাঁড়ায় যে সেচ প্রকল্প না হলে সেটি বাংলাদেশের জন্য কম ক্ষতিকর হবে? আমি আমি পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্বে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি ফুলেরতল ব্যারেজ ছাড়াও এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য কি ভয়াবহ প্রভাব বয়ে আনতে পারে।
পরবর্তীতে এই সফর শেষে ফিরে এসে তিনি আবার বিবৃতি দিলেন,
উদ্ধৃতি
"We are convinced by India's assurance that they won't do anything that harms the interests of Bangladesh," (The Daily Star, August 5)
অর্থাৎ আমাদের সংসদীয় টিম এই মর্মে নিশ্চিত যে ভারত আমাদের বাংলাদেশের জন্য খারাপ হবে এমন কিছু করবেনা। সংসদীয় টিমের মাননীয় সদস্যের কাছে একজন সাধারন জনগণ হিসেবে আমি যদি প্রশ্ন করিঃ
১) আমাকে বুঝিয়ে বলুন এখানে " Harm" বা "ক্ষতি" বলতে আপনি আসলে কি বুঝিয়েছেন ?
২) আর এই কথা যদি সত্যি হয় যে ভারত আমাদের জন্য ক্ষতিকর কিছুই করবেনা তাহলে আমি যদি টিপাইমুখ প্রকল্পের একটিও ক্ষতিকর দিক ভারতের কাছে তুলে ধরতে পারি তাহলে কি ভারত এই প্রকল্প বন্ধ করে দেবে ?
তিনি এরপর আরো বলেছেন,
উদ্ধৃতি
"They said they have conducted environmental impact assessment, and will do more. India will be the first to be affected, if any"(The Daily Star, August 5)
মাননীয় সদস্য আপনি কি একবারও ঐ রিপোর্টটা পড়েছেন? পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি এটি সেই রিপোর্ট সেখানে একটি প্যারাগ্রাফে বাংলাদেশে প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং আমি আমার সিরিজের চতুর্থ পর্বে যা উল্লেখ করেছি।
একই খবরে ঐ দলের সদস্য এ বি এম রুহুল আমীন বললেন,
উদ্ধৃতি
"The project is just at its initial stage. I don't think it could be implemented in my lifetime"(The Daily Star, August 5)
মাননীয় সদস্য আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি এরকম মন্তব্য করার জন্যই কি আপনাকে দেশের টাকা খরচ করে পাঠানো হয়েছে ? আপনার জীবদ্দশায় এই প্রকল্প হবেনা এই মর্মে আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন ?
এই সংসদীয় কমিটি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদ্যুৎমন্ত্রীর সাথে দেখা করে 'ফুলেরতল ব্যারেজ না নির্মানের' আশ্বাসকে তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা মনে করছে (প্রথম আলো, ৫ আগষ্ট ২০০৯ ) অথচ আমরা এর অনেক আগে থেকেই ভারতের কাছ থেকে এই ধরনের আশ্বাস শুনে আসছি।
দশ সদস্যের এই সংসদীয় টিমে পানিবিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন বুয়েটের প্রফেসর মনোয়ার হোসেন। ডঃ হোসেন ব্যাক্তিগত জীবনে আমার শিক্ষক ও সহকর্মী এবং আমার মাষ্টার্সের গবেষণাও তার সাথে করা। এখানে সবচেয়ে অবাক বিষয় হচ্ছে আমি এখন পর্যন্ত এই সফর সংক্রান্ত বিষয়ে মনোয়ার সারের কোন বিবৃতি দেখিনি ( আমি ভুল করে থাকলে সংশোধন করে দেবেন)। তবে এই সফরের পূর্বে ১২ জুন ২০০৯ সাপ্তাহিক ২০০০ এ এক সাক্ষাৎকারে তিনি কয়েকটি মন্তব্য করেছেন যা আসলে তার কাছ থেকে আশা করিনা,
উদ্ধৃতি
" য়েহেতু জলাধারে পানি সংরক্ষণ করা হবে তাই এর কিছু প্রভাব ভাটিতে পড়বে। তবে সেই প্রভাব টিপাইমুখ পানি বিদ্যুত প্রকল্পের সারপ্লাস বিদ্যুত বাংলাদেশ ব্যবহারের মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে" ( ভিন্নচিন্তা, সামহোয়ার ইন ব্লগ, ২০ জুলাই )
এখানে সারপ্লাস বিদ্যুতের প্রসংগই বা কোত্থেকে আসল আর আসলেই তা বাংলাদেশে বিতরনের বা ব্যবহারের প্রসংগের অবতারণা হলো কিভাবে আমার বোধগম্য নয়। ভারত কি এই বিষয়ে কখনো কোন বিবৃতি দিয়েছে ?
এই সফরের আরো একটি বিষয় যা আমার কাছে পরিষ্কার নয় তা হলো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এরকম কোন কিছুই ভারতের কাছে তুলে ধরা হলোনা যে কেন নিপোকোর টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবেশগত রিপোর্টে ভাটি অঞ্চল (বাংলাদেশ) উপেক্ষিত হল। একটি বাঁধের ভাটি অঞ্চলকে সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে অথচ এর কোন কিছুই তারা উল্লেখ করেনি।
ভারতের সাম্প্রতিক ভূমিকাঃ ইতিবাচক না নেতিবাচক?
ভারত সাম্পতিক কালে যে বিষয়টা বার বার বলে যাচ্ছে তা হলো টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কোন বিতর্কের সূচনা হলেই তারা ফুলেরতল ব্যারেজ না করার আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু তারা একটি বারও শুধু বাঁধের জন্য বাংলাদেশের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে কোন কিছু বলছেনা। আমরা দেখেছি নিপকোর টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাবের গবেষণায় বাংলাদেশ কিভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। ভারতের ভাটি অঞ্চল উপেক্ষা করার এই প্রবণতা নিঃসন্দেহে নেতিবাচক।
সংসদীয় টিম ভারত সফরের সময় ভারতের কাছ থেকে কিছু ইতিবাচক বিষয় বের হয়ে এসেছেঃ

  1. প্রথমতঃ ভারতের কাছ থেকে তথ্য ও উপাত্ত প্রাপ্তির আশ্বাস তবে তা "বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের" প্রয়োজন অনুযায়ী। এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা কি কি উপাত্তের জন্য অনুরোধ পাঠাবো ?
  2. দ্বিতীয়তঃ যৌথ নদী কমিশনের ভারতের সাবেক সদস্য বি জি ভার্গিস বলেছেন যে টিপাইমুখ বাঁধের কারনে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের হাওড় এলাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এই মর্মে বাঁধের বিরোধিতা করতে হলে বাংলাদেশকে তা পর্যাপ্ত গবেষণা করে তুলে ধরতে হবে (প্রথম আলো, ৫ অগাষ্ট ২০০৯)। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মন্তব্যকে কি ভারতের আনুষ্ঠানিক মন্তব্য হিসেবে ধরে নেব ? যদি তাই হয় তাহলে বাংলাদেশের সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস পর্যাপ্ত গবেষণা করে একথা প্রমান করা সম্ভব এই টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কতটা ক্ষতি করবে।
এই মূহুর্তে আমাদের কি করণীয়ঃ
ঠিক এই মূহুর্তে বাংলাদেশের যা করা উচিৎ তা পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করছিঃ

  1. প্রথমতঃ সংসদীয় দলের ভারত সফরের মধ্য দিয়ে একটি আলোচনার সুত্রপাত হয়েছে। ভারত বলেছে আমাদের কি কি উপাত্ত লাগবে তা জানাতে। সুতরাং সরকারের এই মূহুর্তে উচিৎ টিপাইমুখ নিয়ে একটি সমন্বিত বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা। এই বিশেষজ্ঞ দলে যেসব অনুষদ থেকে লোক থাকবেন তা হলোঃ
    1. পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ
    2. প্রকৌশল ভূতত্ত্ববিদ
    3. পরিবেশবিদ
    4. বাস্তুতন্ত্রবিদ ( উদ্ভিজ ও প্রাণিজ)
    5. প্রানীবিশেষজ্ঞ
    6. কৃষিবিদ
    7. নৃবিজ্ঞানী
    8. অর্থনীতিবিদ
    9. আইনবিদ
    কারা এই দলে থাকবে সেটি নির্ণয়ের দায়িত্ত্ব সরকারের তবে আমি অনুরোধ করব বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাদেরকেই রাখতে যাদের তাদের স্ব স্ব বিষয়ে বিস্তর গবেষণা আছে, সেই সাথে এই জাতীয় ইস্যু নিয়ে অতীতে যারা কাজ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতার মূল্য দেওয়াটাকেও বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি।
  2. দ্বিতীয়তঃ গঠিত বিশেষজ্ঞ দল সরকারের কাছে রিপোর্ট প্রদান করবে যে টিপাইমুখ বাঁধ বা ফুলেরতল ব্যারেজের ফলে বাংলাদেশে কি কি নেতিবাচিক প্রভাব পড়বে তা গবেষণার জন্য তাদের কি পরিমান তথ্য প্রয়োজন ?
  3. তৃতীয়তঃ সমন্বিত বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে দু'টি বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাবেঃ
    1. একঃ বাংলাদেশের গবেষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারত টিপাইমুখ প্রকলের কোন কাজ শুরু করতে পারবেনা।
    2. দুইঃ ভারত বাংলাদেশকে আমাদের বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উপাত্ত প্রদান করবে।
  4. চতুর্থতঃ তৃতীয় ধাপ সফল হলে আমরা সকল উপাত্ত নিয়ে টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করব। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য থাকবেঃ
    1. বাঁধের ও ব্যারেজের কারনে প্রবাহের কি পরিবর্তন হবে ?
    2. এই প্রবাহ হ্রাস ও জলাধারে পলিহ্রাসের প্রভাবে বাঁধের ভাটিতে ব্যাপক নদীক্ষয়ের কি প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে ?
    3. প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের হাওড় গুলির বাস্তুতন্ত্রে কি পরিবর্তন আসব ?
    4. এই এলাকার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর তার কি প্রভাব পড়বে ?
    বস্তুত এই সবকিছু নিয়ে সমীক্ষার পরই জানা যাবে এই বাঁধ হলে বাংলাদেশের কি পরিমান ক্ষতি হবে।
  5. পঞ্চমতঃ এই পর্যায়ে বাঁধের কারনে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতি ন্যুনতম পর্যায়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে যৌথ গবেষণার প্রস্তাব আসতে পারে।
  6. ষষ্ঠতঃ এই সব রিপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে বা ভারতে সরকার পর্যায়ে বৈঠক করতে হবে যেখানে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ দল তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। যদি বাঁধের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য এর ডিজাইনে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন সম্ভব থাকে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদলের পরামর্শ অনুযায়ী যদি বাঁধের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয় যাতে করে এর ভাটিতে প্রভাব ন্যুনতম পর্যায়ে আসবে তাহলে সেই পরবর্তিত ডিজাইন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল আরেক দফা গবেষণা করবে। আর তা না হলে, অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ দল যদি মনে করে এই ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব নয় তাহলে বাংলাদেশের কাছ থাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার প্রস্তাব ভারতের কাছে উত্থাপন করতে হবে।
  7. সপ্তমতঃ প্রকল্প বন্ধ করার বাংলাদেশের প্রস্তাব কুটনৈতিক ভাবে ভারত প্রত্যাখ্যান করলে জাতিসংঘের মাধ্যমে আইনগতভাবে কিভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালাতে পারি তারো খসড়া প্রনয়ন করতে হবে। বিশেষজ্ঞ দলের আইনবিদেরা এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
  8. অষ্টমতঃ ভারতের সাথে আইনগত ভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করার সময় দেশের রাজনীতিবিদ, সংবাদ মাধ্যম, সাধারণ জনগণকে দেশের প্রেক্ষাপটে এক থাকতে হবে। জাতিগত ভাবে আমাদের সমস্যা আমরা অনেক সময়ই না বুঝে বা ভবিষ্যৎ আঁচ না করে সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন বিবৃতি দিয়ে থাকি যা কখনই দেশের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনেনা।
আইনগত কি কি দিক আমাদের হাতে আছে ?
পাঠক আগ্রহী হতে পারে টিপাইমুখ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত ( সপ্তম ধাপ) হবার পরেও ভারত যদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সেক্ষেত্রে আমাদের আইনগত ভাবে কি করার আছে। এই বিষয়ে সবথেকে ভাল লেখা আমি পেয়েছি ডঃ আসিফ নজরুলের কাছ থেকে[৫]। আমি এর আলোকে কিছু তথ্য দিচ্ছিঃ
  1. ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসের সংবিধির ৩৮ ধারা অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক বা আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক যেকোন চুক্তি আনর্জাতিক আইনের উৎস। এই বিচারে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতে সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত গঙ্গা চুক্তি একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের চুক্তি ( Vienna Convention on the Law of Treaties
    1969
    ) এবং এই দুই দেশের জন্য আন্তর্জাতিক আইন যা কিনা ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেনে চলতে দুই দেশই বাধ্য।
  2. গঙ্গাচুক্তির অনুচ্ছেদ ৯ ( বিস্তারিত চুক্তির জন্য পড়ুন) লক্ষ্য করুনঃ "পক্ষপাত বিহীন ও সাম্যতা প্রসুত এবং কোন পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীসমুহের চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হবার ব্যাপারে একমত"
    অর্থাৎ এই চুক্তি অনুযায়ী আমরা গঙ্গা ছাড়াও অন্য আন্তঃসীমান্ত নদী যেমন বরাক নদীর ক্ষেত্রে "সাম্যতা" ও " কোন পক্ষেরই ক্ষতি" এই দু'টি পয়েন্টের ভিত্তিতে আইনের আশ্রয় নিতে পারি। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ দল যদি প্রমান করতে পারে টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছে ও সাম্যতা বিনষ্ট হচ্ছে তাহলে তার পরেও টিপাইমুখ বাঁধ করতে গেলে তা গঙ্গাচুক্তি ভঙ্গের কারন হবে যা ভারত ২০২৬ সালের আগে পারেনা।
  3. প্রশ্ন উঠতে পারে ২০২৬ সালের পরে কি হবে? সেটির জন্য গঙ্গা চুক্তির অনুচ্ছেদ ১২ লক্ষ্য করুনঃ "দুই পক্ষের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে এই চুক্তি বাধ্যবাধকতায় যাবে ও তা বলবৎ থাকবে ত্রিশ বছর পর্যন্ত, এবং পারস্পরিক প্রচেষ্টায় তা নবায়ন যোগ্য।"
    অর্থাৎ নবায়নের বিষয়টিও চুক্তির মধ্যে আছে এবং সেক্ষেত্রে দুই দেশকেই সচেষ্ট হতে হবে।
শেষকথাঃ
ভারত এই টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নের দু'টি মূল প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছে, একঃ বন্যা নিয়ন্ত্রন আর দুইঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আরো বিকল্প প্রযুক্তি ভারতের কাছেই আছে, উদাহরণ সরূপ Indo-Us Nuclear Agreement কথা বলা যেতে পারে।সেক্ষেত্রে ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মরিয়া হয়ে এই প্রকল্প হাতে নেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত যেখানে খোদ ভারতেই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বিদ্রোহ চলছে। বন্যা নিয়ন্ত্রনের কথা যদি বলি পৃথিবীতে এখন বন্যা নিয়ন্ত্রন এই কথাটিই ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে তার পরিবর্তে আসছে বন্যা ব্যাবস্থাপনা। সেই আলোকে এটি এখন প্রমানিত যে বন্যা ব্যবস্থাপনার জন্য " স্ট্রাকচারাল" পদ্ধতির চেয়ে "নন-স্ট্রাকচারাল" পদ্ধতি অধিক পরিবেশ বান্ধব এবং তা ভবিষ্যতের জন্য ভাল। অর্থাৎ ভারত ইচ্ছে করলেই এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন না ঘটিয়েও তার দেশের সমস্যা সমাধান করতে পারে। সেক্ষেত্রে এই রকম একটি বিতর্কিত প্রকল্প হাতে নিয়ে দু'টি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অহেতুক শত্রুতা বাড়িয়ে বিশ্বশান্তির বিঘ্ন ঘটানোর কোন অধিকার ভারতের নেই। বাংলাদেশ দেশ হিসেবে ছোট হতে পারে, দরিদ্র হতে পারে কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবেনা এই দেশটির রয়েছে একটি গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ দেশের মানুষ তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কখনো পিছপা হয়নি আর ভবিষ্যতেও হবেনা। দেশের যখনই প্রয়োজন পড়েছে এর সন্তানেরা ঝাপিয়েছে পড়েছে আন্দোলনে। আজ সময়ের প্রবাহে আমাদের আবারো প্রয়োজন পড়েছে ঝাপিয়ে পড়ার তবে এবার রাজপথে নয় বরং নিজেদের মনন, প্রজ্ঞা আর গবেষণা দিয়ে প্রমান করতে হবে এই টিপাইমুখ প্রকল্প আমাদের জন্য কতটা ভয়াবহ ভবিষ্যৎ বয়ে আনবে। আর সেই সাথে এই প্রকল্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে আর সেই জন্য এই প্রকল্পের তথ্য মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতে হবে। সরকারকে এক্ষেত্রে একই সাথে কুটনীতি আর আর বিচক্ষণতার আশ্রয় নিয়ে হবে, যোগ্য স্থানে যোগ্য লোককে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে বিশেষজ্ঞের কাজ যেমন রাজনীতিবিদ দিয়ে হয়না তেমনি বিশেষজ্ঞদের রাজনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন পড়েনা। দেশের প্রয়োজনে আমাদের ব্যাক্তিগত বা দলীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হবে তবেই আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে উপহার পারব।

তথ্যসুত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়া
[২]Environment Impact Assessment (EIA) of Tipaimukh HE(M) Project, submitted for North Eastern Electric Power Corporation Limited (NEEPCO)
[৩] ডঃ জ়হির উদ্দিন চৌধুরী, ১২ জুলাই ২০০৯, ‘বরাক নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করা হলে তা হবে বিপদ জনক’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার।
[৪] ডঃ আইনুন নিশাত, ২৮ জুন ২০০৯, ‘দুই দেশেই টিপাইমুখ বাঁধের পরিবেশগত প্রভাবের জরিপ চালাতে হবে’, প্রথম আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকার।
[৫] ডঃ আসিফ নজরুল, ৫ জুলাই ২০০৯, ‘পিনাক রঞ্জনের ছোট ভুল, আমাদের বড় ভুল’ প্রথম আলো।
[৬] এম এ কাসেম,৬ জুলাই ২০০৯, ‘টিপাইমুখঃ যে কথা কেউ বলছেনা’প্রথম আলো।
[৭] ডঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ‘টিপাইমুখ বাঁধঃ কিছু শর্ত মানলে কম ক্ষতিকর হতে পারে’ প্রথম আলো।
[৮] Dr.Sara Bennett, Mujib Huq and Dr. David Mclean,1994, ‘Initial Environmental Evaluation, Appendix to the Northeast RegionalWater Management Plan, Bangladesh Flood Action Plan 6 ( IEE NERP FAP 6)’,Final Version.

[৯] Ma A Matin, 7 February 2006, ‘Another Farakka ? No, Tipaimukh Dam is different’ The Daily Star.

[১০] The Ecology of Dams
[১১]মোঃ গোলাম্ কিববিয়া " ISSUE-GAINING PUBLIC ACCEPTANCE FOR LARGE DAMS ON INTERNATIONAL RIVERS: THE CASE OF TIPAIMUKH DAM IN INDIA AND CONCERNS IN LOWER RIPARIAN", সেপ্টেম্বর ২০০৫, United Nations Environment Programme (UNEP) কতৃক আয়োজিত Dams and Development Project শীর্ষক কর্মশালা, নাইরবি, কেনিয়া।
[১২] Dogra, B. 1992. The Debate on Large Dams. Centre for Science and Environment, New Delhi.
[১৩] R.K. Ranjan Singh, ‘Tipaimukh’ in The Ecologist Asia, Vol. 11 No. 1 January-March 2003

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন