বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০০৯

গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি

গঙ্গা-পদ্মা

আমাদের দেশে যাকে আমরা বলি প্রমত্তা পদ্মা সেটারই ভারতের অংশের নাম গঙ্গা। এই পদ্মা নদীর দু’ধারের জেলেপাড়া নিয়েই লেখা হয়েছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, পদ্মার মাঝিদের নিয়ে গাঁথা হয়েছে গান ‘সর্বনাশা পদ্মা নদীরে তোর কাছে সুধাই’; নজরুলের ‘পদ্মার ঢেউরে’ গানেও বধুয়ার রূপের সাথে তুলনা করা হয়েছে পদ্মার ঢেউএর ।গঙ্গার পবিত্র জলে স্নান করে শুভ্র হওয়া বাঙ্গালীর কাছে তাই গঙ্গা বা পদ্মা শুধু একটি নদীর নামই নয় বরং তা আমাদের শাশ্বত বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারক ও বাহকও বটে।


গঙ্গার চুক্তির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে এই নদীটির কিছু প্রকৌশলগত তথ্য দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। পার্বত্য অঞ্চলে সাধারনত এক বা একাধিক উপনদী মিলে একটি মূল নদীর ধারা উৎপন্ন হয়। হিমালয় পর্বতমালার গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী নদী আর নন্দা দেবী, ত্রিশুল, ক্যামেট ইত্যাদি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন অলকানন্দা এই দুটি উপনদী মিলেই গঙ্গার মূল ধারাটির সৃষ্টি হয়েছে [১,২]। পরবর্তীতে জাহ্নবী নদীও এর সাথে মিলিত হয়ে সম্মিলিত প্রবাহ হিমালয়ের গিরীসঙ্কট পার হয়ে ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে[২]। বাংলাদেশের গোয়ালন্দে এসে এটি যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে এবং এই সম্মিলিত ধারাটি পরে আবার চাঁদপুরে ‘আপার মেঘনার’ (নদী-প্রকৌশলগত ভাবে সুরমা আর কুশিয়ারার মিলিত প্রবাহই ‘আপার মেঘনা’ বা ‘উপরের দিকের মেঘনা’ নামে পরিচিত) সাথে মিলিত হয়ে ‘লোয়ার মেঘনা’ (‘নিচের দিকের মেঘনা’ যা আমাদের কাছে মুল মেঘনা নদী নামে পরিচিত) নামেই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকেই একে পদ্মা নদী নামে ডাকা হয় কিন্তু নদী-প্রকৌশলগত ভাবে গোয়ালন্দের আগ পর্যন্ত এর নাম মুলত গঙ্গা আর গোয়ালন্দ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত অংশের নাম পদ্মা [২]।

ফাঁরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প

ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নির্মান করা কলকাতা বন্দর ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে পূরাতন বন্দর ও একসময়কার প্রধান বন্দর ছিল। হুগলী নদীর তীর ঘেঁষে এই কলকাতা বন্দরে ষাটের দশকে নদী থেকে বয়ে আসা বিপুল পলি বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধা সৃষ্টি করে। যার প্রতিকারে ভারত সরকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় ১৯৫১ সালে, যাতে গঙ্গা নদীতে ব্যারেজ নির্মান করে একটি বিকল্প খাল দিয়ে গঙ্গার পানিকে হুগলী নদীতে প্রবাহিত করে বন্দরের সঞ্চিত পলিকে স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেই পরিকল্পনা পরিশেষে বাস্তবায়িত হয় ১৯৭৪-৭৫ সালে ‘ফারাক্কা ব্যারেজ’ নামে।

গঙ্গা চুক্তির ইতিহাস

১৯৫১ সালে ফারাক্কা ব্যারেজের পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে শুরু হওয়া বিতর্ক, আলোচনা ও সংঘাতের অবসান ঘটে ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির মাধ্যেমে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস যা আমাদের দেশের পানি বা পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের জানা থাকলেও সাধারন মানুষদের বেশীরভাগই এই বিষয়ে অজ্ঞ, ফলে সৃষ্টি হয় ভূল বোঝাবুঝি। বিখ্যাত পানি বিশেষজ্ঞ ডঃ আইনুন নিশাত ১৯৯৬ সালে তার “Impact of Ganges Water Dispute on Bangladesh” শীর্ষক প্রবন্ধে [৩] গঙ্গার পানি চুক্তির এই ৪৫ বছরের ইতিহাসকে ছয়টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। এই পর্যায়গুলির অনুবাদকৃত সারসংক্ষেপ নিচে দেয়া হলঃ

প্রথম পর্যায় (১৯৫১-১৯৭৪)

এই পর্যায়ের মূল লক্ষ্য ছিল ব্যারেজ নির্মানের পূর্বেই গঙ্গার পানির সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করা। ফলশ্রুতিতে মূল আলোচনা কেন্দ্রীভুত ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের নিজস্ব দাবীদাওয়া এবং তার যৌক্তিকতার মধ্যে।বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পর বিপরীতে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ গঙ্গার পানির সম্পূর্ন প্রবাহের দাবীতে অটুট থাকে এবং দাবী করে যে ফারাক্কার আরো উজানে অবস্থিত জলাধার সমুহ ভারতের প্রয়োজন মেটেতে যথেষ্ট, সেই সাথে গঙ্গায় ব্যারেজ নির্মান করে এর প্রবাহকে বিকল্প খাল দিয়ে হুগলী নদীতে স্থানান্তর করে কলকাতা বন্দরের পলি সমস্যা সমাধানের কারিগরী দিকের পরিকল্পনারও সমালোচনা করে। অন্যদিকে ভারত দাবী করে যে বাংলাদেশের আসলে খুব বেশী পরিমান পানি প্রবাহের দরকার নেই কারন গঙ্গায় প্রবাহিত পানির সিংহভাগই বঙ্গোপসাগরে অপচয় হয়।ভারত এই বলে নিশ্চিত করে যে ব্যারেজ নির্মানের পুর্বেই বাংলাদেশ ও ভারতের স্ব স্ব হিস্যা চুড়ান্ত করা হবে। ১৯৭২ সালে আন্তঃসীমান্ত নদীসমুহের উন্নয়নের দিককে সামনে রেখে সংযুক্ত নদী কমিশন (জ়েআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৭৪-১৯৭৬)

যেহেতু গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ের সমস্যার উৎপত্তি তাই এই পর্যায়ে ‘গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির’ বিষয়টি সামনে আনা হয়। বাংলাদেশ প্রস্থাব করে যে ভারত বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমান পানিকে উজানের জলাধারে সঞ্চিত করে তা শুস্ক মৌসুমে ব্যাবহার করতে পারে, অন্যদিকে ভারত একটি সংযোগ খালের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র (বাংলাদেশে যমুনার উজানে মূল নদীটির নাম ব্রহ্মপুত্র) থেকে বিপুল পরিমান পানি গঙ্গায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করে। এই পর্যায়ে গঙ্গার পানি বন্টনের সমীকরন নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ব্যার্থ হয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সাথে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মতৈক্যের ভিত্তিতেই ব্যারেজের কার্যক্রম শুরু হয়।মতৈক্যটি কিছুটা এরকমঃ ভারত বিকল্প খাল দিয়ে ১১,০০০ থেকে ১৬,০০০ কিউসেক ( ১ কিউসেক=প্রতি সেকেন্ডে ১ ঘনফুট পানির প্রবাহ) পানি গঙ্গা থেকে অপসারন করবে আর বাকী প্রবাহ বাংলাদেশে চলে যাবে। এই পরীক্ষামুলক পানিবন্টন মাত্র ৪১ দিন স্থায়ী হয়।১৯৭৬ সালে আগের মতৈক্যের নবায়ন না করে ভারত একতরফা ভাবে গঙ্গার পানি অপসারন করে যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে পদ্মানদী কেন্দ্রিক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপর এবং একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৭৭ সালে। বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করে এবং সাধারন পরিষদ এক্ষেত্রে একটি মতৈক্যের বিবৃতি দেয় যার ফলশ্রুতিতে বিষয়টির একটি সুষ্ঠূ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত ঢাকাতে মন্ত্রীপরিষদ পর্যায়ের বৈঠকের ব্যাপারে একমত হয়।

তৃতীয় পর্যায় (১৯৭৭-১৯৮২)

দ্বিতীয় পর্যায়ে উল্লেখিত বৈঠকের ভিত্তিতে ১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারী থেকে মে) গঙ্গার পানি প্রবাহ বন্টনের বিষয়ে একটি পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে, ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল এই দশ দিন সময়ের মধ্যে বাংলাদশের জন্য ৩৪,৫০০ কিউসেক এবং ফারাক্কার বিকল্প খাল দিয়ে কলকাতা বন্দরের জন্য ২০,৫০০ কিউসেক পানি বরাদ্দ করা হয়।সেই সাথে চুক্তিতে পানি বন্টনের (১০ দিনের ভিত্তিতে) জন্য একটি নির্দীষ্ট সময়সুচী নির্ধারন করা হয় যাতে বাংলাদেশকে চুক্তিতে উল্লেখিত পানি প্রবাহের ন্যুনতম শতকরা ৮০ ভাগ প্রদানের লিখিত অংগীকার করা হয়।দুইদেশের সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যুক্ত কমিশন গঠন করা হয় যারা তিন বছরের মধ্যে পানি বন্টন চুক্তি ও ফারাক্কায় গঙ্গাতে পানি বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় আলোচনা করবে যা উভয় দেশ কতৃক আবার পর্যালোচনা করা হবে।

আমি আগেই বলেছি যে ফারাক্কায় গঙ্গার পানি বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল ফারাক্কার উজানে ভারতে বা নেপালে জলাধার নির্মান করে বর্ষা মৌসুমে পানি সঞ্চয় করা, অপরদিকে ভারতের প্রস্তাব ছিল ব্রহ্মপুত্র থেকে সংযোগ খাল কেটে গঙ্গাতে পানি বৃদ্ধি করা এবং কোন দেশের প্রস্তাবই অন্য দেশ কতৃক গৃহীত হয়নি। ফলশ্রুতিতে 'চুক্তির আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত হয়নি' এই অজুহাতে ১৯৭৭ সালের পানি চুক্তি ১৯৮২ সালের নভেম্বরের পরে আর নবায়ন করা সম্ভব হয়নি যদিও এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে চুক্তিতে সেই সুযোগ ছিল।

চতুর্থ পর্যায় (১৯৮২-১৯৮৮)

১৯৭৭ সালের প্রথম গঙ্গার পানি চুক্তি ১৯৮২ সালের পর আর নবায়ন করা হয়নি, তবে ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালের শুস্ক মৌসুমের পানি বন্টনের জন্য জন্য ১৯৮২ সালেরই অক্টোবর মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্টান্ডিং ‘৮২) স্বাক্ষরিত হয়।এই স্মারকে ‘নিশ্চিত ন্যুনতম’ প্রবাহের সুযোগ না রেখে বরং ‘ধারনক্ষমতার হিস্যা’ ( বারডেন শেয়ার) এর শর্ত রাখা হয়।উভয়পক্ষকেই গঙ্গার পানিবৃদ্ধির বিষয়ে তাদের স্ব স্ব প্রস্তাবের বাস্তবায়নযোগ্যতা (ফিজিবিলিটি) নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী ১৯৮৩ সালে উভয়পক্ষ তাদের হালনাগাদ প্রস্তাব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে, কিন্তু আবারও মতপার্থক্যের জন্য কোন গ্রহনযোগ্য সুপারিশ অনুমোদিত হয়নি যা দ্বারা জরুরী ভিত্তিতে সর্বত্তোম ভাবে ফারাক্কায় শুস্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি বৃদ্ধি করা যায়। ’৮২ এর সমঝোতা স্মারক ১৯৮৪ সালে মেয়াদউত্তীর্ন হয়ে যায় এবং পরবর্তী বৎসর গুলির জন্য কোন আনুষ্ঠানিক সমঝোতাই আর বাকী থাকেনা।

বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যায় একটি আনুষ্ঠানিক সমঝোতার জন্য কিন্তু ব্যার্থ হয়। কোন সমঝোতা না থাকায় ১৯৮৫ সালের শুস্ক মৌসুমে বাংলাদেশ গঙ্গার পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়। পরবর্তীতে আরো অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে দুই দেশ ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে আরও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে যা কিনা ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত শুস্ক মৌসুমের জন্য বহাল থাকবে। এই সমঝোতা স্মারকেও আগের মত নিশ্চিত ন্যুনতম প্রবাহের কোন সুযোগ রাখা হয়নি, তবে এই বারে ন্যায্য হিস্যা বন্টনের জন্য আঞ্চলিক নদীগুলোকেও আলোচনায় নিয়ে আসা হয়। পানি বন্টন ও গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবগুলিও আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষই তাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করে উপস্থাপন করে কিন্তু যথারীতি একপক্ষ অন্য পক্ষ্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ভারত ও বাংলাদেশের একটি যৌথ বিশেষজ্ঞ দল উপাত্ত সংগ্রহের জন্য নেপাল সফর করে। নেপাল সরকার নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ মিলে যৌথভাবে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে তীব্র উৎসাহ প্রদর্শন করে। ’৮৫ এর সমঝোতা স্মারক ১৯৮৮ সালের মে মাসে বন্ধ হয়ে যায়।

পঞ্চম পর্যায় (১৯৮৮-১৯৯৬)

১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে কোন চুক্তি না থাকায় ভারত একতরফা ভাবে গঙ্গার পানি বিকল্প পথে হুগলী নদীতে স্থানান্তর করে যার ভয়াবহ প্রভাব বাংলাদেশে পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান স্বাদু পানির প্রবাহ গড়াই নদী যা কিনা গঙ্গারই শাখানদী শুস্ক মৌসুমে সম্পুর্নভাবে শুকিয়ে যায়। ভারতের এই একচেটিয়া পানি উত্তোলনের হলে ১৯৯২ সালের মার্চে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে গঙ্গায় ইতিহাসের সর্বনিম্ন প্রবাহ (১২,৫২১ কিউসেক) পরিলক্ষিত হয় অথচ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই সময়ের গড় প্রবাহ হওয়া উচিৎ ছিল ৭৫,০০০ কিউসেক [৪]। এই পর্যায়ে পানিবন্টনের জন্য আলোচনা চলতে থাকলেও তার কোন সফলতা পরিলক্ষিত হয়নি।১৯৮৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সরকার প্রধানের বৈঠকে গঙ্গা সহ অন্যসব আন্তসীমান্ত নদীসমুহের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পানির প্রবাহ বন্টন সমীকরন প্রনয়নের জন্য উভয় দেশের পানিসম্পদ সচিবদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়।১৯৯০ এর এপ্রিল থেকে ১৯৯২ এর ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এই তিন বছরের মধ্যে সচিব কমিটি ঢাকা ও দিল্লীতে পরপর ৬ বার মিলিত আলোচনায় বসে।তাদের মূল গুরুত্ত্বের বিষয়টি ছিল জরুরী ভিত্তিতে গঙ্গা ও তিস্তার পানি বন্টন। কিন্তু দূঃখের ব্যাপার হল এই কমিটিও পানিবন্টনের কোন গ্রহনযোগ্য নীতি নির্ধারন করতে ব্যর্থ হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৮৮ সালের বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যা দুই দেশের পারস্পারিক পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার বিষটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করে এবং গঙ্গার পানি বন্টন ও গঙ্গার পানি বৃদ্ধির পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি একটি সঙ্কটপূর্ন প্রসংগ হয়ে দাড়ায়।বাংলাদেশ যদিও দুই দিকেই অগ্রসর হবার চেষ্টা করে কিন্তু ভারত পানিবন্টনের পুর্বশর্ত হিসেবে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির তাদের প্রস্তাবকে( ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি গঙ্গায় স্থানান্তর) দাড় করায়।যদিও ১৯৯২ সালে দুই দেশেরই প্রধানমন্ত্রী এই মর্মে একমত হয় যে বাংলাদেশের এই পানি সঙ্কটের একটি আশু সমাধান দরকার কিন্তু তা সত্ত্যেও পানি বন্টনের কোন চুড়ান্ত সমাধান হয়নি। ১৯৯৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

ষষ্ঠ পর্যায় (১৯৯৬)

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেরই সরকার পরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় পর্যায়ে পানি বন্টনের বিষয়টি পুনরালোচনায় আসে এবং শীঘ্রই এই বিষয়ে একটি সমাধানের ক্ষেত্রে উভয় দেশ একমত হয়। পরিশেষে সুদীর্ঘ সময়ের উত্তেজনাপুর্ন কার্যক্রমের পর ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ঐতিহসিক গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ১৯৯৭ সালের জানুয়ারী থেকে কার্যকর হয় এবং ত্রিশ বছর পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হবে। চুক্তিতে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির প্রসঙ্গেরও একটি শর্ত রাখা হয়। যদিও চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়।


’৯৬ এর চুক্তির বিষয়বস্তু


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকার নিম্নমত সমুহে মতৈক্য প্রকাশ করছেঃ

অনুচ্ছেদ ১
ভারত বাংলাদেশকে চুক্তিতে যে পরিমান পানির প্রদানের বিষয়ে মতৈক্য উপনীত হয়েছে তা নির্ভর করবে ‘ফারাক্কায় পানির প্রবাহের উপর’।

অনুচ্ছেদ ২

ধারাঃ ১) ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ফারাক্কায় গঙ্গার পানি বন্টন প্রতি দশ দিন ভিত্তিক হবে যা প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে একত্রিশে মে পর্যন্ত কার্যকর হবে।বন্টনকৃত পানির পরিমান ‘সংযুক্তি ১ (নিচে দেয়া হল) এ উল্লেখিত নির্দেশনার (সমীকরন) স্বাপেক্ষে হবে।‘সংযুক্তি ১’ এর অধীনে পানি বন্টন চুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট একটি নির্দেশক সময়সুচী ‘সংযুক্তি ২’ (নিচে দেয়া হল) এ প্রদান করা হল।

ধারাঃ ২) উপরে অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ১ এ উল্লেখিত ‘সংযুক্তি ২ এর নির্দেশক সময়সুচী’ ফারাক্কায় ৪০ বছরের (১৯৪৮-১৯৮৮) ‘১০ দিন ভিত্তিক’ গড় প্রাপ্ত প্রবাহের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত। ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত দশ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে।

ধারাঃ ৩) যেকোন ‘১০ দিন ভিত্তিক’ সময়ের মধ্যে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৫০,০০০ কিউসেক এর থেকে কমে গেলে দুই সরকার তাৎক্ষনিক ভাবে আলোচনা করে জরুরী ভিত্তিতে পানি বন্টনের উপযোজন করবে (এডজাস্টমেন্ট) তবে তা হবে পক্ষপাত বিহীন ও সাম্যতা প্রসুত এবং যেন কোন পক্ষেরই ক্ষতি না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।


অনুচ্ছেদ ৩

ভারত কতৃক ‘অনুচ্ছেদ ১’ অনুসারে ফারাক্কা থেকে বাংলাদেশে ছেড়ে দেয়া পানি ফারাক্কা ও যে স্থানে গঙ্গার উভয় পাড়ই বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত এই দুই এর মাঝখানে যুক্তিসংগত ব্যবহার ব্যাতিরেকে( সর্বোচ্চ ২০০ কিউসেক) আর কমানো হবেনা।

অনুচ্ছেদ ৪

দুই দেশের সরকার কতৃক মনোনীত সমান সংখ্যক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে (যা যুক্ত-কমিটি নামে অভিহিত হবে) চুক্তি স্বাক্ষরের পর আইনগত ক্ষমতা দেয়া হবে। ফারাক্কা ব্যারেজে, সংযোগ খালে, এবং সেই সাথে হার্ডিঞ্জ ব্রীজে প্রতিদিনের পানির প্রবাহ পরিমাপের জন্য এই যুক্ত কমিটি ফারাক্কা এবং হার্ডিঞ্জ ব্রীজে যুতসই লোকবল নিয়োগ করবে।

অনুচ্ছেদ ৫

যুক্ত-কমিটি তার নিজস্ব ক্রিয়াবিধি ও প্রায়োগিক পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।

অনুচ্ছেদ ৬

যুক্ত-কমিটি উভয় সরকারের কাছে সংগৃহীত উপাত্ত এবং একটি বাৎসরিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উভয় সরকার যথাযথ পর্যায়ে মিলিত হয়ে প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবে।

অনুচ্ছেদ ৭

যুক্ত-কমিটি চুক্তিতে উল্লেখিত সমঝোতা সমুহের বাস্তবায়ন এবং চুক্তির বাস্তবায়নে বা ফারাক্কা ব্যারেজের কার্যক্রমে উদ্ভুত প্রতিবন্ধকতা সমুহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই ক্ষেত্রে উদ্ভুত কোন মতপার্থক্য বা বিতর্ক যুক্ত-কমিটি সমাধান করতে না পারলে তা ‘ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনে’ হস্তান্তর করা হবে। তার পরেও মতপার্থক্য বা বিতর্ক অমীমাংসিত থাকলে দুই দেশের সরকার পর্যায়ে ব্যাপারটি তোলা হবে এবং এর সমাধানের জন্য দুই পক্ষই জরূরী ভিত্তিতে যথাযথ পর্যায়ে পারস্পরিক আলোচনার জন্য উপবিষ্ট হবে।

অনুচ্ছেদ ৮

শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাটির একটি সমাধানের ক্ষেত্রে দুই সরকারই একে অপরকে সহযোগীতার প্রয়োজনীয়তাটিকে স্বীকৃতি দেবে।

অনুচ্ছেদ ৯

পক্ষপাত বিহীন ও সাম্যতা প্রসুত এবং কোন পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীসমুহের চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হবার ব্যাপারে একমত।

অনুচ্ছেদ ১০

প্রতি পাঁচ বছর পর পর (বা যেকোন পক্ষের প্রয়োজন হলে বা কোন উপযোজন করতে হলে তার আগেই)চুক্তির সমঝোতাগুলি দুই দেশের সরকার পুনর্নিরীক্ষন করবে এবং তা হবে পক্ষপাত বিহীন, সাম্যতা প্রসুত এবং কোন পক্ষেরই ক্ষতির কারন না হয় এমন। যেকোন পক্ষই দু’বছর পরে চুক্তির প্রভাব এবং কার্য্যকারীতা নিরূপন করার জন্য প্রথম পুনর্নিরীক্ষন করতে পারবে।

অনুচ্ছেদ ১১

চুক্তি সময়কালীন অনুচ্ছেদ ১০ এ উল্লেখিত পুনর্নিরীক্ষন দ্বারা প্রয়োজনীয় উপযোজনের (এডজাস্টমেন্ট) ক্ষেত্রে যদি দুই দেশ একমত না হয় তবে পরবর্তী মতৈক্যে পৌছানোর আগ পর্যন্ত ভারত ফারাক্কার ভাটিতে ‘অনুচ্ছেদ ২’ এ উল্লেখিত সমীকরন অনুসারে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার ন্যুনতম শতকরা ৯০ ভাগ পানি ছেড়ে দেবে।

অনুচ্ছেদ ১২

দুই পক্ষের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে এই চুক্তি বাধ্যবাধকতায় যাবে ও তা বলবৎ থাকবে ত্রিশ বছর পর্যন্ত, এবং পারস্পরিক প্রচেষ্টায় তা নবায়ন যোগ্য।


সংযুক্তি -১




সংযুক্তি -২



’৯৬ এর চুক্তির পর্যালোচনা


চুক্তির সারমর্ম

একটু ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলে ’৯৬ এর গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তিটিতে মূল যে বিষয়গুলো এসেছে তা কিছুটা নিম্নরূপঃ

  • চুক্তির প্রথম ও গুরুত্ত্বপূর্ণ ধারাটিতে বলা আছে যে এই পানিবন্টন নির্ভর করবে ‘ফারাক্কায় পানির প্রবাহের উপর’।অর্থ্যাৎ ফারাক্কায় পানির প্রবাহ যদি কমে যায় তাহলে বাংলাদেশ চুক্তি মেনেই পানি কম পাবে।

  • এই চুক্তি বলবৎ থাকবে শুধু মাত্র শুষ্ক মৌসুমে পহেলা জানুয়ারী থেকে একত্রিশে মে পর্যন্ত, বছরের বাকী সময়ের জন্য অর্থ্যাৎ আর্দ্র মৌসুমে কোন চুক্তি থাকবেনা।

  • কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য যে সংযোগ খাল দিয়ে পানি হুগলী নদীতে স্থানান্তর করা হয় তার ধারন ক্ষমতা ৪০,০০০ কিউসেক। সুতরাং একথা প্রতীয়মান যে ভারতের প্রয়োজনীয় তথা সর্বোচ্চ যে প্রবাহ ব্যারেজ ডাইভার্ট করতে পারে তা এই ৪০,০০০ কিউসেক। এজন্যই লক্ষ্য করে দেখা যাবে যে পানির প্রবাহ ৭৫,০০০ এর বেশী হলে ভারত ৪০,০০০ রেখে বাদবাকী সব পানি ভাটি তথা বাংলাদেশে ছেড়ে দিচ্ছে।

  • যদি পানির প্রবাহ ৭০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ কিউসেকের মধ্যে থাকে তাহলে ভারত বাংলাদেশকে ৩৫,০০০ কিউসেক দিয়ে বাকীটা বিকল্প খাল দিয়ে হুগলী নদীতে নিয়ে যাচ্ছে। এই ৩৫,০০০ কিউসেক ধরা হচ্ছে গঙ্গা ও এর শাখানদীদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের ন্যুনতম প্রয়োজন হিসেবে।এক্ষেত্রে ভারতকে তার প্রয়োজনের কম পরিমান পানি নিতে হচ্ছে।

  • ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মার্চে থেকে মে’র মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রবাহ ৭০,০০০ এর কম থাকে এবং এই সময় পানির বন্টন প্রায় ৫০-৫০ অনুপাতে হবে তবে তা দশ দিন পর পর পরিবর্তিত হবে যা একটি উদাহরনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়ঃ

ধরা যাক মার্চের ১১-২০ এই দশ দিনের গড় প্রবাহ ৬৭,০০০ তাহলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫,০০০ এবং ভারত পাবে ৩২,০০০ কিউসেক। এরপর মার্চের ২১-৩১ এর দশ দিনের প্রবাহ ধরা যাক ৬৬,০০০ কিউসেক তাহলে এই সময়ে ভারত পাবে ৩৫,০০০ এবং বাদবাকী ৩১,০০০ কিউসেক পাবে বাংলাদেশ।এই ভাবে প্রবাহ ৭০,০০০ এর কম হলে প্রতি দশ দিন পর ভারত ও বাংলাদেশ পালা করে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি পাবে এবং বাদবাকী পানি সেই অনুযায়ী বন্টন করা হবে।

কিছু বহু জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও তার সম্ভাব্য উত্তর

’৯৬ এর গঙ্গা চুক্তিটি দেখে বা এর সম্মন্ধে শুনে সাধারন মানুষের মনে যে সকল প্রশ্ন জাগতে পারে তার কিছু নমুনা ও তার সম্ভাব্য উত্তর দেবার চেষ্টা করছিঃ


১) চুক্তিটি কেন জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত ?

" আমাদের ছোট নদী চলে এঁকে বেঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে"

রবীঠাকুর প্রকৌশলী ছিলেননা কিন্তু নদীপ্রকৌশল এর মৌলিক জ্ঞ্যান জানতে রবীঠাকুরের এই কবিতাটি কিন্তু যথেষ্ট। বাংলাদেশে বৈশাখ মাস মানে এপ্রিল, তার মানে এপ্রিল মাসে বাংলার ছোট ছোট নদীতে হাঁটু জল থাকবে যা দিয়ে গাড়ী, গরু, মানুষজন পার হয়ে যাবে অনায়াসেই। জলবায়ুগত দিক বিচারে আমাদের এই অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুম জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত।আসলে ফারাক্কা ব্যারেজ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের মতপার্থক্যের সুচনা বা আপত্তির সূচনা কিন্তু এই শুষ্ক মৌসুম নিয়েই। এই মৌসুমে গঙ্গোত্রী হিমবাহের গলিত বরফের পরিমান কমে যাওয়ার গঙ্গার পানির প্রবাহ কমে যায় এবং নদীর গতি কমে যাওয়ায় কলকাতা বন্দরের হুগলী নদীতে পলি সমস্যা এই সময় বেড়ে যায় সুতরাং ফারাক্কা ব্যারেজের সংযোগ খাল দিয়ে এই সময়েই ভারতের বেশী পানি দরকার হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে ধান আবাদের জন্য সেচ কাজে এই সময় পানির চাহিদা বাড়ে।এছাড়া ছোট ছোট নদী বা খালগুলো গঙ্গার মত বড় বড় নদীসমুহের পানি নিয়েই বেঁচে থাকে সুতরাং এই সময়ে গঙ্গার পানির উপর চাপ বেড়ে যায় বিশেষ করে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র স্বাদু পানির উৎস গড়াই নদীর পানির প্রবাহ সম্পূর্নরূপে নির্ভর করে গঙ্গার উপর। গড়াইতে পানি কমে গেলে বঙ্গোপসাগরের লবনাক্ত পানি উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশ করে যার প্রভাবে ঐ অঞ্চলের বনভুমি বিশেষ করে সুন্দর বন ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেই সাথে আবাদী জমিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার শুস্ক মৌসুমে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নদীর আশে পাশের এলাকার মাটির আর্দ্রতা নির্ভর করে নদীর পানির স্তরের উপর। সুতরাং গঙ্গা নদীতে প্রবাহ কমে গেলে নদীকেন্দ্রিক বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মাটি শুষ্ক হয়ে যার এবং উপর্যুপরি এই প্রক্রিয়ার ফলাফল হচ্ছে মরুকরন।

সুতরাং উপরের আলোচনার ভিত্তিতে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত গঙ্গার পানির প্রবাহ বছরে অন্যান্ন সময়ের থেকে কম কিন্তু দুই দেশেই পানির চাহিদা এই সময়ই সবচেয়ে বেশী।তাই সংঘাতের শুরু এই শুষ্ক মৌসুম নিয়েই আর এই জন্যই চুক্তির প্রয়োজন এই সময়কে ঘিরেই।

২) চুক্তি অনুযায়ী ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে ছেড়ে দেয়া পানি কি বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত?

এই প্রশ্নটির উত্তর জানার জন্য আমাদের নদীপ্রকৌশল সম্পর্কে কিছুটা ধারনা প্রয়োজন। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে সাধারনত নদীর প্রবাহ বা উৎস থেকে সমুদ্র পর্যন্ত নদীর গতিপথ নির্ভর করে সেই অঞ্চলের ভুপ্রকৃতির উপর। একটি নদী সে এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশন করে তার বুকে নিয়ে আসে তাকে আমরা বলি নদী অববাহিকা। একটি নদী অববাহিকার সাথে পার্শবর্তী আরেকটি নদী অববাহিকার কিন্তু একটি বিভেদ রেখা থাকে। এই নদী অববাহিকা কিন্তু রাজনৈতিক সীমারেখা মেনে চলেনা।পুরো নদী প্রবাহ প্রক্রিয়াটি আসলে প্রাকৃতিক নিয়মে একটি সাম্যাবস্থায় চলে। এখন আমরা যখন নদীর এই স্বাভাবিক প্রবাহ বা গতিপথকে বহুলাংশে ব্যাহত করি তখন সেই সাম্যাবস্থা বিনষ্ট হয়। স্বাভাবিক গতিপথে গঙ্গা থেকে হুগলী নদী যে সময় যতটুকু পানির প্রবাহ পাবার কথা ব্যারেজ নির্মান করে সেই স্বাভাবিক প্রবাহকে আমরা ব্যাহত করেছি, সুতরাং চুক্তি করে সেই সাম্যাবস্থাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবনা এমনকি ফারাক্কা ব্যারেজকে সমূলে তুলে দিলেও আগের সাম্যাবস্থা ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে।আমরা যেটা করতে পারি গঙ্গার প্রবাহকে একটি ন্যুনতম পর্যায়ে রাখতে যা গড়াই নদীর প্রবাহকে টিকিয়ে রাখতে এবং আমাদের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের লবনাক্ততাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারে। যেহেতু যেকোন চুক্তিই আসলে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতৈক্যে পৌছানো সুতরাং একই সাথে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য ন্যুনতম প্রবাহকেও এক্ষেত্রে বিবেচনায় অনতে হয়েছে। সেই বিচারে চুক্তিতে প্রাপ্ত পানি আমাদের জন্য পর্যাপ্ত কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর আসলে একটাই, মতৈক্য পৌছানোর জন্য এর বিকল্প হয়ত আমাদের ছিলনা কারন কোন চুক্তি না থাকলে ভারত একতরফা ভাবে পানি উত্তোলন করবে এবং ১৯৭৫ সালে তা করেছেও যার ভিত্তিতেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে বিষয়টি উথাপন করেছিল।তবে একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা ফারাক্কা ব্যারেজের ফলে যে অপুরনীয় ক্ষতি বাংলাদেশের হয়েছে সেই ক্ষতি পূরন আসলে সম্ভব না তবে এই চুক্তি সেই ক্ষতিকে আরও বাড়াতে হয়ত রোধ করছে।

৩) আর্দ্র মৌসুমে অতিরিক্ত পানি কি রিজার্ভ করা যাবে ?

আসলে বাংলাদেশ সমতল ভুমির দেশ হওয়াতে এখানে পরিপূর্ন বাঁধ দিয়ে পানি সঞ্চয় করা আসলে সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব তা হলো ব্যারেজ নির্মান করে কিছুটা পানি সঞ্চয়। সেই আঙ্গিকেই শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও গঙ্গা নির্ভর এলাকায় কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়নের জন্যই গঙ্গা ব্যারেজের সমীক্ষা শুরু হয়েছে সম্প্রতি [৫]। এই প্রকল্পে গঙ্গা নদীতে দুটি ব্যারেজের পরিকল্পনা করা হয়েছে, একটি ঠাকুরবাড়িতে (পাবনা)আরেকটি পাংশাতে।সেই সাথে গঙ্গার দু’ধার দিয়ে বাঁধ নির্মান করতে হবে[৬]।সমীক্ষা শেষ হলেই জানা যাবে প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা।এই ব্যারেজ নির্মান করলে গড়াই নদীতে পলি পড়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান হবে সেই সাথে বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিজমিতে সেচের ব্যবস্থা হবে এবং শুকিয়ে যাওয়া শাখানদীগুলোতে হয়ত জীবন ফিরিয়ে আনা যাবে।

৪) চুক্তি অনুযায়ী ভারত পানি না দিলে বাংলাদেশ আইনানুগ কি ব্যবস্থা নিতে পারবে ?

চুক্তিতেই কিন্তু নিয়মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ফারাক্কাতে পানি পরিমাপের ব্যবস্থার কথা বলা আছে।যেহেতু এই চুক্তি দশ দিনভিত্তিক তাই যদি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ পরিমানমত পানি না পায় সেক্ষেত্রে তা যুক্ত-কমিটির মাধ্যমে আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে, তাতেও না হলে পর্যায়ক্রমে তা ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন ও দুই দেশের সরকার পর্যায়ে আলোচনা করে সমাধান করার কথা বলা আছে। তবে চুক্তি অনুযায়ীই কিন্তু এই বিষয়ে কোন মতৈক্যে না পৌছানোর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ অন্তত চুক্তিবদ্ধ পরিমানের শতকরা ৯০ ভাগ পানি পাবার কথা। পরবর্তী পথ হল কোন তৃতীয় পক্ষের দারস্থ হওয়া এবং সর্বশেষ হলো জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক পানি বিষয়ক সনদ অনুযায়ী (ধারা ৩৩, উপধারা ২)আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা।নিচের লাইনটি লক্ষ্য করুনঃ

“If the Parties concerned cannot reach agreement by negotiation requested by one of them, they may jointly seek the good offices of, or request mediation or conciliation by, a third party, or make use, as appropriate, of any joint watercourse institutions that may have been established by them or agree to submit the dispute to arbitration or to the International Court of Justice” [৭]

৫) চুক্তি অনুযায়ী পানি বন্টন যেহেতু ফারাক্কায় প্রবাহের উপর নির্ভরশীল সেক্ষেত্রে ফারাক্কায় উজানে পানির প্রবাহ কমালে বাংলাদেশের কিছু করার আছে কিনা ?

চুক্তিটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এর অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ২ এ বলা আছে, “ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত দশ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে”। অর্থ্যাৎ উজানে পানির অধিক ব্যবহারের ফলে ফারাক্কায় প্রবাহ যদি ঐতিহাসিক সুত্রে পাওয়া গড় প্রবাহের থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায় তাতে চুক্তি ভংগ হবে কারন চুক্তিতেই এই গড় প্রবাহ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের আলোচনার ও পরবর্তীতে তৃতীয় পক্ষ বা আন্তর্জাতিক আদালতের দারস্থ হবার সুযোগ থাকছে বলেই আমার ধারনা।

৯৬ এর চুক্তির কিছু দূর্বল দিক

প্রথমতঃ
’৯৬ এর পানি চুক্তির বন্টন নির্ধারিত হয়েছে ১৯৪৯-১৯৮৮ এই ৪০ বছরের শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় প্রাপ্ত পানির দশ ভিত্তিক গড় প্রবাহের উপর ভিত্তি করে।কিন্তু এই ৪০ বছর কিন্তু আসলে দুইটা পর্যায়ে বিভক্তঃ ফারাক্কা ব্যারেজ পূর্ব (১৯৪৯-১৯৭৩) এবং ফারাক্কা ব্যারেজ পরবর্তী (১৯৭৫-১৯৮৮)। খোদ ফারাক্কাতেই এই দুই পর্যায়ে গড় পানি প্রবাহ কিন্তু এক নয়, দেখা গিয়েছে যে ফারাক্কা ব্যারেজের ফলে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারে সেচের জন্য পানি উত্তোলন করা হয়েছে যা ফারাক্কাতেই পানির পরিমান হ্রাস করেছে [৮]।
ganges_flow1
উপরের এই ছবিটি দেখলে ব্যপারটি আরো পরিষ্কার হবে যা তথ্যসুত্র [৮] এর ভিত্তিতে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে তৈরী করা হয়েছে। এখানে ফারাক্কায় পানির প্রবাহকে জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত এই তিন মাসকে দশ দিন ভিত্তিক পর্যায়ে বিভক্ত করে মোট পনেরটি সময়ে ভাগ করা হয়েছে। মেরুন রঙের লাইনগুলি ফারাক্কা ব্যারেজ পূর্ব (১৯৪৯-১৯৭৩)এবং নীল রঙের লাইনগুলি ফারাক্কা ব্যারেজ পরবর্তী (১৯৭৫-১৯৮৮) প্রবাহ নির্দেশ করে (এটা কিন্তু ভারতের ফারাক্কায় গঙ্গার প্রবাহ এটাকে বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহ বলে ভূল করবেননা)। এখানে স্পষ্টত প্রতীয়মান যে, জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারেজের ফলে খোদ ফারাক্কাতেই পানির প্রবাহ কমেছে অথচ চুক্তি করার সময় এই দুই পর্যায়ের গড় পানির প্রবাহ নিয়ে সমীকরন তৈরী করা হয়েছে (কমলা লাইন) যা কোন মতেই গঙ্গায় পানি প্রবাহের বাস্তবসম্মত কোন চিত্র হতে পারেনা।
দ্বিতীয়তঃ
এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশে গঙ্গার পানি মাপা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে।
ganges_flow2
উপরের এই ছবিটি লক্ষ্য করুন যা তথ্যসুত্র [৮] ও [৯] থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে তৈরী করা হয়েছে। এখানে বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহকে আগের মতই জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত এই তিন মাসকে দশ দিন ভিত্তিক পর্যায়ে বিভক্ত করে মোট পনেরটি সময়ে ভাগ করা হয়েছে।নীল লাইনগুলি হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে ফারাক্কা ব্যারেজের পূর্বের প্রবাহকে (১৯৩৪-১৯৭৫) নির্দেশ করে এবং মেরুন লাইনগুলি ’৯৬ এর চুক্তি অনুসারে প্রাপ্তব্য পানির প্রবাহকে নির্দেশ করে।এটা সহজেই অনুমেয় যে বাংলাদেশ ফারাক্কা ব্যারেজের পূর্বে প্রাকৃতিক ভাবে শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমান পানি পেত, চুক্তি করেও তার থেকে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ পানি কম পাচ্ছে। সুতরাং এই চুক্তি শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের বাংলাদেশের সমস্যা নিরসনে কতটা উপযোগী হয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় [১০]।
তৃতীয়তঃ
১৯৭৭ সালে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত সময়ের জন্য পানিবন্টন অনুপাত ছিল বাংলাদেশের ৬০ ভাগ ও ভারতের ৪০ ভাগ অথচ ১৯৯৬ সালের চুক্তিতে তা গয়ে দাড়িয়েছে গড়ে বাংলাদেশের ৫২ ভাগ আর ভারতের ৪৮ ভাগ [৯]। সেই বিচারে '৭৭ এর মতৈক্য থেকে ’৯৬ এর চুক্তিতে বাংলাদেশের শতকরা ৮ ভাগ পানির হিস্যা কমেছে।
চতুর্থতঃ
’৯৬ এর চুক্তির পানিবন্টন নির্ভর করে ফারাক্কায় পানি প্রবাহের উপর, কিন্তু ফারাক্কার উজানে যদি পানি উত্তোলন করা হয় তাহলে কি হবে? এর উত্তর চুক্তিতে রয়েছে (অনুচ্ছেদ ২ ধারা ২),
“ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত দশ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে”।
এখানে এই “সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে” বা ইংরেজীতে উল্লেখিত “Every effort” এর সঠিক সংগায়ন চুক্তিতে উল্লেখ নেই [৯]। সুতরাং এখানে ফারাক্কার উজানে উত্তর প্রদেশ, বিহার, বা পশ্চিম বাংলায় গঙ্গার উল্লেখযোগ্য পরিমান পানি উত্তোলন বন্ধের ক্ষেত্রে ভারতের কোন পরিষ্কার ভুমিকার কথা বলা নেই। কিন্তু উজানে পানির অধিক ব্যবহারের ফলে ফারাক্কায় প্রবাহ যদি ঐতিহাসিক সুত্রে পাওয়া গড় প্রবাহের থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায় তাতে চুক্তি ভংগ হবে কারন চুক্তিতেই এই গড় প্রবাহ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের আলোচনার ও পরবর্তীতে তৃতীয় পক্ষ বা আন্তর্জাতিক আদালতের দারস্থ হওয়া ছাড়ে আর কোন উপায় থাকবেনা।
পঞ্চমতঃ
চুক্তির অনুচ্ছেদ ১১ লক্ষ্য করলে আরো একটি জিনিস বের হয়ে আসে,
“চুক্তি সময়কালীন অনুচ্ছেদ ১০ এ উল্লেখিত পুনর্নিরীক্ষন দ্বারা প্রয়োজনীয় উপযোজনের (এডজাস্টমেন্ট) ক্ষেত্রে যদি দুই দেশ একমত না হয় তবে পরবর্তী মতৈক্যে পৌছানোর আগ পর্যন্ত ভারত ফারাক্কার ভাটিতে ‘অনুচ্ছেদ ২’ এ উল্লেখিত সমীকরন অনুসারে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার ন্যুনতম শতকরা ৯০ ভাগ পানি ছেড়ে দেবে”
তার মানে কোন কারনে চুক্তি অনুযায়ী পানি না পেলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে বন্টন সমীকরন অনুযায়ী প্রাপ্য পানির শতকরা ১০ ভাগ পানি কম পাবে যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না।ব্যাপারটা কিছুটা এরকম যে আমার কাছে একজন ১০০ টাকা পায়, আমি তাকে টাকা না দেয়ায় সে বিচার দিল মোড়লের কাছে আর এইজন্য আমি তাকে ১০ টাকা কমিয়ে ৯০ টাকা দিলাম। অর্থ্যাৎ আমি দোষও করলাম আবার সুবিধাও পেলাম।
পরিশেষে
গঙ্গার পানি সমস্যা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আসলে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধি করা বলে বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করেন। কিন্তু এই চুক্তিতে গঙ্গার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি আসলেও তার কোন স্থায়ী সমাধানের কোনরূপ দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

তথ্যসুত্রঃ

[১] উইকিপিডিয়া
[২] বাংলাপিডিয়া
[৩] অসিত বিশ্বাস ও টি হাশিমুতো সম্পাদিত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস কতৃক প্রকাশিত “Asian International Waters, From Ganges-Brahmaputra to Mekong” শীর্ষক গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত

[৪] ডঃ আইনুন নিশাত ও এমএফকে পাশা কতৃক লিখিত প্রবন্ধঃ “A Review of the Ganges Treaty of 1996” যা ২০০১ সালে “Globalization and Water Resources Management: The Changing Value of Water” শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপিত হয়।

[৫] প্রথম আলো
[৬] Terms of Reference for Feasibility Study and Detailed Engineering of Ganges Barrage Project (June, 2005) Ganges Barrage Circle, Bangladesh Water, Development Board Ministry of Water Resources
[৭] আন্তর্জাতিক নদীসমুহের ব্যবহার (নৌচলাচল ব্যাতিরেকে) সম্পর্কিত আইনের জাতিসঙ্ঘের সনদ

[৮] ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর Institute of Environmental Studies এর এম মনিরুল কাদের মীর্জা কতৃক লিখিত প্রবন্ধ “The Ganges Water Sharing Treaty: Risk Analysis of The Negotiated Discharge”
[৯] হেলসিঙ্কি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির পানিসম্পদ গবেষনাগারে কর্মরত মুহাম্মদ মিজানুর রহমান কতৃক লিখিত প্রবন্ধ “ The Ganges water Conflict, A Comparative Analysis of 1977 Agreement and 1996 Treaty”
[১০] Water Policy ২০০১ এ প্রকাশিত এস তানজিমা ও আই এম ফয়সাল কতৃক লিখিত প্রবন্ধ “Sharing the Ganges: A Critical Analysis of water Sharing Treaties

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন- গঙ্গা চুক্তি সিরিজ