শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১১

তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি আসলে কী হচ্ছে ?

তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি নিয়ে মিডিয়াতে কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে দুই রকম সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল (সেপ্টেম্বর ১, ২০১১) প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪, বাংলানিউজ ২৪, ইত্তেফাক সহ আরো অন্যান্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে ১৫ বছর মেয়াদী অন্তর্বতীকালীন তিস্তা চুক্তি হচ্ছে যাতে ৪৬০ কিউসেক হারে পানির সঞ্চয় রেখে বাকি পানির ৫২ শতাংশ নেবে ভারত, ৪৮ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ। তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশী সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এই সংবাদ মূলত কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার বরাত দিয়ে।এই '৪৬০ কিউসেক পানি সঞ্চয়' এই বিষয়টি ঠিক পরিষ্কার ছিলনা। প্রথমে মনে হয়েছিল যে এই ৪৬০ কিউসেক পানি নদীখাত সংরক্ষণে নির্ধারিত থাকবে, অর্থাৎ এই পরিমান পানি নদীতে সবসময় প্রবাহমান রেখে বাকী পানি ৪৮:৫২ অনুপাতে বন্টন করে নেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে আবার মনে হয়েছে এই ৪৬০ কিউসেক প্রবাহমান থকলে 'সঞ্চয়' প্রসংগটি কেন আসবে। ইত্তেফাক অবশ্য কিছুটা পরিষ্কার করেছিল, বলেছিল "এই ৪৬০ কিউসেক প্রবাহমান রেখে।"



আপাতদৃষ্টিতে এই বন্টন চুক্তি নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত মত ছিল যে, এই ৪৬০ কিউসেক পানি যদি ভারতে 'সঞ্চয়' হয় সেক্ষেত্রে সমস্যা আছে কারন তিস্তায় শুষ্ক মৌসুমে ন্যুনতম প্রবাহ ৪৬০ থেকে অনেক কম। আর যদি তা নদীখাত সংরক্ষণের ( মূলত জলজ বাস্তুসংস্তান) জন্য হয় তবে তা ইতিবাচক কারন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির আলোচনায় সবসময়ই শতকরা ২০ ভাগ বা ন্যুনতম শতকরা ১০ ভাগ পানি নদীখাতের জন্য বরাদ্দ রাখার দাবী ছিল সবসময়।

বিষ্মিত হই আজ সকালের সর্বশেষ খবর দেখে ( প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪, The Daily Star)। এই সর্বশেষ খবরে উল্লেখ করা হয় যে, তিস্তায় পানি বন্টন ২৫:৭৫ অনুপাতে হবে, অর্থাৎ মোট পানির ২৫ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ আর ৭৫ শতাংশ পাবে ভারত। এই খবরের উৎস অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের মালদহের কংগ্রেস নেতা লোকসভার সদস্য আবু হাসেম খান চৌধুরীর বরাত দিয়ে। খবরে প্রকাশিত তথ্যমতে তিনি বৃহস্পতিবার বিবিসিকে বলেছেন,
"আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের বৈঠক হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন আমাকে বলেছেন, (তিস্তায়) যে পরিমাণ পানি থাকবে, তার ৭৫ শতাংশ ভারত নেবে এবং ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে।"
এই সংবাদ যদি ভিত্তিপূর্ণ হয় তবে আসন্ন তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য আত্মহত্যা সমতুল্য হবে। কারন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ১৯৮৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের ২৫ তম বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তার পানি বন্টনের জন্য একটি এডহক চুক্তি করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল বলে জানা যায়। সেসময় তিস্তার মোট প্রবাহের ২৫% কে অবন্টনকৃত রেখে বাকী ৭৫% শতাংশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্টন করার প্রস্তাব করা হয়েছিল যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৩৬% আর ভারতের ছিল ৩৯%। বর্তমানে যদি সেটি ২৫% আর ৭৫% এ দাঁড়ায় তবে তা বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজ পরিচালনা একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
আসলে চুক্তি কি হবে সেটি হয়ত সেপ্টেম্বর ৬ এ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর জানা যাবে তবে সংবাদ মাধ্যমে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এই দুই ধরনের সংবাদ আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করছে। আশা করি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হবে।


বিঃদ্রঃ


১) তিস্তা চুক্তির ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য পাঠক এই লেখাটি পড়তে পারেন।

২) এই লেখাটি খুব তাড়াহুড়ো করে লেখা। এই সম্পর্কিত যেকোন খবর দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। পাঠকদের কাছ থেকে এই বিষয়ে যেকোন হালনাগাদ আশা করছি মন্তব্যে।

সংবাদ মাধ্যমের লিঙ্কঃ

যদিও লেখাতে লিঙ্কগুলি দিয়েছি তার পরেও আলাদা করে শিরোনাম সহ নিচে দিলামঃ
[১] 'রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করেই চুক্তি, তিস্তার জলবণ্টনে সায় মমতার', আনন্দবাজার পত্রিকা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১১

[২] 'তিস্তা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত, সম্মত মমতা', বিডিনিউজ২৪, সেপ্টেম্বর ১, ২০১১

[৩] 'তিস্তা চুক্তিতে ২৫ শতাংশ পানি পাবে বাংলাদেশ', বিডিনিউজ২৪, সেপ্টেম্বর ২, ২০১১


[৪] 'তিস্তার পানিচুক্তিতে মমতার সম্মতি', বাংলানিউজ২৪, সেপ্টেম্বর ১, ২০১১

[৫] 'তিস্তার পানি হিস্যা চুড়ান্ত প্রায়', ইত্তেফাক, আগষ্ট ৩০, ২০১১

[৬] 'তিস্তার পানি ২৫ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ', প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২, ২০১১ (অনলাইন সংস্করণ)
পাঠকদের অনুরোধ করছি এই সম্পর্কিত অন্যান্ন খবরের লিঙ্ক মন্তব্যে উল্লেখ করতে।

বিদ্রঃ লেখাটি সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে।
তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি আসলে কী হচ্ছে ?