সচলায়তন থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হলো “টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট” ই-বুক। ইবুকটি এই লিঙ্ক থেকে ডাওনলোড করা যাবে। মূলত প্রকাশায়তনের প্রথম প্রকাশনা হিসেবে অবমুক্তি করার প্রয়াসে টিপাইমুখ নিয়ে ইবুকের কাজ শুরু হয় ২০০৯ এর জুলাইয়ে। তখন টিপাইমুখ সিরিজের শেষ পর্ব সচলে পোষ্ট করা হয়েছে। এই প্রকল্পের সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন সচল স্বাধীন, হিমু, ষষ্ঠ পান্ডব এবং ইশতিয়াক রউফ। মূল সিরিজের লেখাগুলিকে আরো চমৎকার ভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য সিরিজের লেখাগুলিকে পূনর্বিন্যস্ত করে ইবুক রূপদানের জন্য এই সম্পাদনা পরিষদ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সিরিজ চলাকালীন সময়ে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্যও বইটির পরিমার্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
২০০৯ এর আগষ্টে বইটির খসড়া প্রথম সংস্করণ ঠিক করা হয়। এর পর বইটি রিভিউ করার দ্বায়িত্ব দেয়া হয় সম্পাদনা পরিষদের বাইরে সচল শোহেইল মতাহির চৌধুরী এবং আমার বন্ধুবর মির্জা মোঃ মোজাদ্দিদ বিল্লাহকে। তাদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে বইটির চূড়ান্ত প্রথম সংস্করণ বের হয় ২০০৯ এর অক্টোবরে। বইটির মুখবন্ধ লেখেন অগ্রজপ্রতীম জাহাংগীর মোহাম্মদ আরিফ, জুবায়ের লোদী'র তোলা আলোকচিত্রটি দিয়ে বইটির প্রচ্ছদ করেন মাহবুব আজাদ।
এর পর একটি লম্বা বিরতি। মূলত অপেক্ষা ছিল প্রকাশায়তন অবমুক্তির জন্য, কারন আগেই বলেছি বইটি প্রকাশায়তনের প্রথম প্রকাশনা হিসেবে অবমুক্তি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রকাশায়তনের প্রকল্প বিলম্বিত হবার কারনে এই ইবুকটির অবমুক্তির কাজও পিছিয়ে যায়। সেই সাথে টিপাইমুখ ইস্যু নিয়ে দেশে আলোচনার ঝড় থেমে যাওয়াও হয়ত এই প্রকল্পের গুরুত্ত্ব কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয় বলে অন্তত আমার ধারনা হয়েছিল। যাক, ২০১১ এর মে মাসে এসে বইটি অবশেষে অবমুক্তি পেল।
ইবুকটির প্রচ্ছদ ( প্রচ্ছদঃ মাহবুব আজাদ, ছবিঃ জুবায়ের লোদী)
বইটির ভূমিকাতে লেখা কথাগুলো নিচে উল্লেখ করলামঃ
গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র আর মেঘনা নদী বিধৌত বাংলাদেশে রয়েছে ৫৪ টির মত আন্তঃসীমান্ত নদী অধিকাংশই এসেছে ভারত থেকে। বাংলাদেশে সভ্যতার বিকাশ একদিন শুরু হয়েছিল এইসব নদীকে কেন্দ্র করেই আর তাই নদীকে ঘিরেই আমাদের জীবন জীবিকা আর সংস্কৃতি। নদীর প্রবাহ কোন রাজনৈতিক সীমারেখাকে মেনে চলেনা আর তাই এই উপর সবার অধিকার সমান সে উজানেই থাকুক আর ভাটিতেই থাকুক। নিজের জীবদ্দশায় গঙ্গা নদী থেকে ফারাক্কা ব্যারেজের মাধ্যমে ভারতের একচেটিয়া পানি অপসারনের ও বাংলাদেশে এর ক্ষতিকর প্রভাব অনুধাবন করেছি। নিজে পানিসম্পদ কৌশলের ছাত্র ও গবেষক হওয়াতে এই সমস্যাগুলিকে ভালমত পর্যবেক্ষণ করেছি প্রতিনিয়ত। ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিতর্কের পর সম্প্রতি ভারত যখন বাংলাদেশের উজানে বরাক নদীতে টিপাইমুখ সংলগ্ন স্থানে বাঁধ নির্মানের সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে তখন বাংলাদেশের আপামর জনগণ এগিয়ে এসেছে এই বাঁধের বিরোধিতায়, সৃষ্টি হয়েছে কুটনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিতর্কের। কিন্তু এই বিতর্ক কি শুধুমাত্র বিরোধিতার খাতিরে নাকি এর পেছনে রয়েছে সুনির্দীষ্ট বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশগত ভিত্তি, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই বিষয়টি নিয়ে তথ্যের জোগাড়ে নেমেছিলাম। বাংলায় জনপ্রিয় ব্লগ সচলায়তনে নিয়মিত লেখালেখি করার সুবাদে সাধারণ পাঠকদের কাছ থেকেও দেশের এই গুরুত্ত্বপূর্ণ সমস্যাটি নিয়ে লেখবার অনুরোধ এসেছে। কিন্তু টিপাইমুখ নিয়ে সাম্প্রতিককালে অসংখ্য লেখার ভীরে চেয়েছিলাম একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা তৈরী করতে। সেই সাথে লেখাটি যেন সাধারন পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য হয় সেই দিকেও প্রচেষ্টা ছিল। টিপাইমুখ বাধের মূলতঃ বাংলাদেশে প্রভাব নিয়ে সচলায়তনে সাত পর্বের সিরিজটি শেষ করার পরে সবপর্বগুলিকে একত্রিত করে একটি বইয়ের রূপদান করার অভিপ্রায়েই আজকের এই প্রচেষ্টা।
পাঠকদের সুবিদার্থে এই বইটি মোট ছয়টি পরিচ্ছেদে সাজানো হয়েছে।সাধারণ পাঠকরা প্রায়শই বাঁধ আর ব্যারেজকে এক মনে করে থাকেন আর সেকারনেই ফারাক্কা ব্যারেজকে আমরা ফারাক্কা বাঁধ মনে করে এর সাথে টিপাইমুখ বাঁধের সাদৃশ্যতা খুঁজে থাকি। জলবিদ্যুৎ বাঁধ ও ব্যারেজ শীর্ষক প্রথম পরিচ্ছেদে তাই পানি প্রকৌশলগত দিক থেকে এই ধারণাগুলিকে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।টিপাইমুখ বাঁধের যে বিতর্ক সাম্প্রতিককালে তীব্র হয়েছে এর কিন্তু রয়েছে অনেক দিনের ইতিহাস। পঞ্চাশের দশক থেকে এই প্রকল্পের আলোচনা থেকে শুরু করে এর পেছনে ভারতের উৎসাহের কিছু তথ্যের সমাহার ঘটেছে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প ও এর ইতিহাস পরিচ্ছেদে। যেকোন বাঁধই পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। এই প্রভাব উজান ও ভাটি দুই অঞ্চলেই পরিলক্ষিত হয়।বাঁধের উজান ও ভাটিতে সম্ভাব্য প্রভাব পরিচ্ছেদে এই প্রভাব নিয়েই মূলত আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সাহায্য নেয়া হয়েছে দেশে বিদেশে সংগঠিত কিছু স্বীকৃত গবেষণা রিপোর্টের। এই রিপোর্টগুলোর আলোকে ও বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞদের নিজস্ব মতামতের উপর ভিত্তিকরে টিপাইমুখ বাঁধের বাংলাদেশের প্রভাবের উপর একটি সামগ্রিক আলোচনা উঠে এসেছে সমন্বিত বিশ্লেষণ পরিচ্ছেদে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কম বেশী বাংলাদেশের প্রায় সকল সচেতন নাগরিক জ্ঞাত আছেন, সেই সাথে গনমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সুবাদে বিভিন্ন মহল থেকে এটির পক্ষে বিপক্ষে নানাবিধ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকার ও বিরোধী ভূমিকা নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে কিন্তু জাতি হিসেবে একতাবদ্ধ হয়ে এই মূহুর্তে আমাদের কি করণীয় সেটাই এখন একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিৎ। এই সম্পর্কিত কিছু দিক নির্দেশনা উঠে এসেছে এই মূহুর্তে করণীয় শীর্ষক পরিচ্ছেদে। পরিশেষে শত নেতিবাচক প্রভাবের পরে এই প্রকল্পের আদৌ কোন যৌক্তিকতা আছে কিনা সেই প্রশ্নকে সামনে রেখে বইটির পরিশিষ্ট পরিচ্ছেদটি লেখা হয়েছে।
সচলায়তনে লেখার পূর্বে এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে যারা সাহায্য করেছেন তার মধ্যে প্রথমই আসে দিগন্ত সরকারের নাম। ব্লগ থেকে বইয়ে রূপান্তরের প্রাথমিক ধারণাটি আসে মূলত জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে, সেই সাথে সচলায়তন কতৃপক্ষের প্রকাশায়তন প্রকল্পের সূচনা এই স্বপ্নটিকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যায়। সমগ্র সিরিজটিকে এক ছাতার তলে নিয়ে আসার জন্য যাদের অবদান অনস্বীকার্য তারা হলেন ইশতিয়াক রউফ, মাহবুব আজাদ হিমু ও মোহাম্মদ মোস্তফা আলী। বইটি প্রকাশের পূর্বে এর রিভিউ করে এটিকে আরো সমৃদ্ধশালী করার জন্য বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ পাবেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী ও মির্জা মুজাদ্দিদ বিল্লাহ।বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব আজাদ। আর সর্বোপরি সচলায়তনের অগনিত লেখক ও পাঠক ব্লগে সিরিজ চলাকালীন সময় থেকে এই বইটির প্রকাশের পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত সার্বক্ষনিক যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও পরামর্শ দিয়েছেন সেজন্য লেখক তাদের প্রতি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।