সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

বাংলা আমার মাতৃভাষা

একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ২০০০ সাল থেকে। বাহান্নর ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এই দিবস, একজন বাংলাভাষী মানুষ হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি সেইজন্য। আমরা বাংলাদেশী যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি তারা নানা ভাবে সাংস্কৃতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিবসটিকে পালন করার চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু এর বাইরেও মাতৃভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এই দিবস আরো কার্যক্রম দাবী করে।


আমি ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টাতে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করছি। কয়েকদিন আগে এখানকার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে একটি ইমেইল পেলাম, বিভিন্ন ভাষার প্রতিনিধিদের নিয়ে তারা স্পীডচ্যাট আয়োজন করছে, যাতে বিভিন্ন ভাষা প্রতিনিধিত্ত্ব করার জন্য ভলান্টিয়ার দরকার। মূলত অনুজপ্রতীম তানিজের উৎসাহে আমরা দু'জন ভলান্টিয়ারদের একটি সভায় যোগদান করি। বলতে দ্বিধা নেই স্পীড চ্যাট কি সেটি সম্পর্কে কোন ধারনা না থাকায় আসলে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ঠিক কি করতে যাচ্ছে তা বুঝতে পারছিলামনা। শুরুতেই সভার আয়োজক রেমন্ড স্পীডচ্যাটের বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে বলল যা কিছুটা এরকমঃ

ধরুন একটি ভাষার উৎসব, যেখানে দশটি ভাষার প্রতিনিধি আছে। একটি রুমে দশটি টেবিলে সেই দশজন বসবেন, অর্থাৎ প্রতিটি টেবিল আসলে একটি ভাষাকে প্রতিনিধিত্ত্ব করবে। তাদের কাছে থাকবে সেই ভাষায় প্রাত্যাহিক কুশল বিনিময়ের একটি তালিকা যা লেখা থাকবে ইংরেজী রোমান হফরে। যেমন বাংলার প্রতিনিধিত্ত্ব করা টেবিলে লেখা থাকবে,
Hello! —
“Ki khobor”
How are you? (or common greeting) —
”Kemon acho?”
I'm fine - well - good (or common response) —
“Ami bhalo achi!”
.........
.........
এখন সেই উৎসবে আসা বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষেরা একেকটি টেবিলে যাবে এবং ঐ রোমান হরফে লেখা কাগজ দেখে দেখে ঐ ভাষার প্রতিনিধিদের সাথে কিছু সময়ের জন্য কথা বলবে ঐ ভাষাতে । এভাবে স্বল্প সময়ে বেশ কয়েকটি ভাষায় প্রাত্যাহিক কুশল বিনিময় জানতে পারবে উৎসবে আসা বিভিন্ন ভাষার মানুষেরা।

আমার কাছে চমৎকার লাগল ভাবনাটা। এর গুরুত্ত্ব প্রবাসে অন্যরকম। আমার পেরু থেকে আসা গ্রুপ মেট আদ্রিয়ানা যখন বাংলায় বলে, 'জাহিদ কেমন আছ?' আমার অসাধারণ লাগে। একজন ভিন্ন ভাষীর কাছে নিজের মাতৃভাষা শোনার অনুভূতির কোন তুলনা হয়না। আরো জানলাম এই স্পীডচ্যাটটি হবে ফেব্রুয়ারীর ২৫ তারিখে। আমি রেমন্ডকে বললাম তোমরা এই অনুষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের অংশ হিসেবে নিয়ে নাও। রেমন্ড বা অন্যরা যারা ছিল তারা এই বিশেষ দিনটির কথা জানতনা। আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকত হয়ে আসলেও এখনও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হবার ব্যপ্তি খুব বেশি বাড়েনি। রেমন্ড ও অন্যরা আনন্দের সাথেই এই প্রস্তাব সমর্থন করল। আমি বললাম বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে যে আত্মাহুতি দিয়েছিল আমার দেশের মানুষেররা তারই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে এই দিবস আজ বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। নিজের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য একজন বাংলাভাষী হয়ে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছিল আমাদের।

রেমন্ড আরেকটি প্রস্তাব করল। বিভিন্ন ভাষাভাষীর প্রতিনিধিরা একটি বিশেষ বাক্য তদের নিজেদের ভাষায় বলবে যা ভিডিও সম্পাদনা করে এই উৎসবের প্রচার উপলক্ষে ছড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু কি হতে পারে সেই বাক্য? আমি প্রস্তাব করলাম, 'আমি আমার মাতৃভাষাকে ভালবাসি'। আরো কিছু প্রস্তাব আসল, যেমন, 'আমি আমার দেশকে ভালবাসি', ' ...... আমার দেশ'। অবশেষে সবাই মিলে ঠিক করা হলো, সবাই তার নিজের ভাষায় বলবে, '[ভাষার নাম] আমার মাতৃভাষা'। উদাহরন সরূপ আমরা বলব, 'বাংলা আমার মাতৃভাষা'।

ভিডিওটি ধারন করা হলো, সম্পাদনা করে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। এখানে সবার সাথে শেয়ার করলামঃ




ভিডিওটির লিঙ্ক ফেইসবুকে শেয়ার করার পর আরো একটি লিঙ্ক পেলাম অনুজপ্রতীম সাকিবের কাছ থেকে, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়া (ওকানাগান) আয়োজিত। সেটিও নিজে দিলাম সবার সাথে শেয়ার করার জন্যঃ



মাঝে মাঝে নিজেদের ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপও নিজের দেশ আর ভাষাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। আসুন আমরা এইভাবে বিশ্বের সব জায়গায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উৎযাপনকে ছড়িয়ে দেই।

imld_un