সোমবার, ১২ জুলাই, ২০১০

ড্যাপ (DAP) ও ঢাকার পানিসমস্যা

গত ২২ জুন রাজউক ঢাকার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) গেজেট প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা, সমালোচনা, আন্দোলন ও জনসংযোগ। বিশেষজ্ঞরা এর পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের অবস্থান নিচ্ছেন। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এর প্রভাব পড়েছে বেশ ভাল করেই। কোথাও কোথাও এই বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং হচ্ছে আবার একই সাথে ড্যাপ এর বাস্তবায়ন নিয়ে পরিবেশবাদীদের পদচারণাও থেমে নেই। ড্যাপ এর মত বিশাল পরিকল্পনার অনেকগুলি ক্ষেত্র থাকে যার সব নিয়ে আলোচনা করার দূঃসাহস কিংবা পুঁথিগত ও পেশাগত বিদ্যা আমার নেই। আমার দৌড় পানিসম্পদ, সুতরাং তারই ভিত্তিতে ড্যাপের পরিকল্পনা ও ঢাকার পানিসম্পদ, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করব। তবে এই আলোচনায় শুধু পানির পরিমান নিয়ে কথা থাকবে, দূষণ নিয়ে নয়। শুরুতেই বলে নেই, ড্যাপ পূর্ণ বা আংশিক বাস্তবায়ন বা অবাস্তবায়ন বা সংশোধন সবই রাজউক এর এখতিয়ারে পরে। তবে তথ্য ও প্রকৌশলগত জ্ঞাণের ভিত্তিতে এই নিবন্ধে কিছু  আলোচনা যা থেকে ড্যাপের বেশ কিছু অসংগতি বেরিয়ে আসবে বলে আশা রাখছি।
ড্যাপ বা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান আসলে কি ?
রাজউকের ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান এর অধীনে তিনটি প্রকল্প আছে [১],
  1. স্ট্রাকচার প্ল্যান প্রকল্প (১৯৯৫-২০১৫)
  2. আরবান এরিয়া প্ল্যান প্রকল্প (১৯৯৫-২০১৫)
  3. ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান প্রকল্প (২০০৪-২০১০)
মূলত স্ট্রাকচার প্ল্যান ও আরবান এরিয়া প্ল্যানকে সফলভাবে বাস্তবায়নের নিমিত্তেই ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান প্রকল্পের উৎপত্তি। এই প্রকল্পের মোট এলাকা ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এর আওতাধীন অঞ্চলগুলি হচ্ছে [১]
  • গাজীপুর পৌরসভা থেকে উত্তর দিকে
  • ধলেশ্বরী নদী থেকে দক্ষিন দিকে 
  • বংশী ও ধলেশ্বরী নদী থেকে পশ্চিম দিকে ।
  • শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী থেকে পূর্ব দিকে।
পুরো প্রকল্পটির ম্যাপ রাজউকের ওয়েবসাইটে রাখা আছে। আকৃতির বিশালতার কারনে এখানে পোষ্ট করলামনা, আগ্রহী পাঠক এই লিঙ্ক থেকে সেটি দেখতে পারেন। রাজউক এই প্রকল্পের সুনির্ধারিত কিছু উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ করেছে, সেগুলো একটু দেখা যাক [১]
  • উপাত্তের ব্যবস্থাপনা এবং মৌজা পর্যায়ে তার বিস্তরণ।
  • বহুমুখী বিনিয়োগ পরিকল্পনার সুযোগ সৃষ্টি করন। 
  • বেসরকারী খাতের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রন এবং অধিবাসী ও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের যথাযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করন। 
  • সুযোগ ও বাধার উপর নির্ভর করে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলি নিশ্চিতকরন।
  • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিশ্চিত করন।

অর্থাৎ কিনা সরকার সামগ্রিক বিষয়াদি বিবেচনা করে ঢাকা মহানগরীর উন্নয়নের জন্য এমন একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন যেখানে সাধারণ মানুষ বা উদ্দোক্তাদের বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে তবে তা নিয়ন্ত্রিত ভাবে এবং অবশ্যই তা পরিবেশকে সমুন্নত রেখে। খুবই চমৎকার চিন্তা ভাবনা, আমরা সাধারণ মানুষও তাই চাই। তবে আদতে কি হলো সেটাই এখন দেখার বিষয়। সেজন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে পাঠককে। তার আগে চলুন ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা বা সামগ্রিক পানিসম্পদের একটু ব্যবচ্ছেদ করা যাক। 
ড্যাপ ও ঢাকার পানিসম্পদঃ
যেখানে মাঝখান দিয়ে একটি মাত্র নদী বয়ে গেলেই বিশ্বের বড় বড় শহরগুলির অধিবাসীদের জন্য প্রয়োজন মিটে যায় সেখানে ঢাকার চার দিয়ে রয়েছে নদী যা কিনা এই শহরটিকে বেষ্টনী করে রেখেছে। ঢাকার উত্তরে রয়েছে টঙ্গীখাল, পশ্চিমে তুরাগ, পূর্বে বালু আর শীতলক্ষা আর দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা। এছাড়া এই শহরে ভেতর দিয়ে বয়ে চলত বেগুনবাড়ী খাল,  খিলগাঁও-বাসাবো খাল, শাহজাদপুর খাল, সুতিভোলা খাল, আবদুল্লাহপুর খাল, রাজাবাজার খাল, ধোলাইখাল, শাহজাহানপুর খাল, গুলশান-বনানী খাল, ধানমন্ডি খাল, দক্ষিণগাঁও-নন্দীপাড়া খাল, রাজারবাগ-নন্দীপাড়া খাল, নাসিরাবাদ-নন্দীপাড়া খাল, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খাল, ডুমনি খাল, বাউখার খাল, পরীবাগ খাল, কাটাসুর খাল, আরামবাগ খাল, গোপীবাগ ইত্যাদি। এই খালগুলি ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ও পানির প্রয়োজন মেটাত একসময়। এই নদী ও খালগুলি ছাড়াও ঢাকা শহরের আশে পাশে অসংখ্য নিচু জলাভুমি ছিল যেগুলোতে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি জমে থাকত। এই সুন্দর প্রাকৃতিক ব্যবস্থাটিকে আমরা তিলে তিলে মেরে ফেললাম। কি করলাম, খালগুলি বন্ধ করে দিলাম সংস্কার না করে ফলে আগে যেখানে প্রাকৃতিক ভাবেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হয়ে যেত এখন সেখানে আমাদের অপর্যাপত স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইন দিয়েও আমরা বর্ষায় বৃষ্টির পানি সরাতে পারিনা। ফলে খানিক ক্ষণের ভারী বর্ষণই ঢাকার জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করে দেবার জন্য যথেষ্ট।  আমাদের নগরজীবনের সব আবর্জনা দিয়ে আমরা শহরের আশেপাশের নদীগুলোকে ভরিয়ে দিলাম, ফলাফল আজ খাবার পানির জন্য আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির দিকে চেয়ে থাকতে হয় কিংবা সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে ঢাকার জন্য পানীয় জলের উৎস খূঁজতে হয়। আগে বর্ষামৌসুমে ঢাকার জলাভূমিগুলোতে জমে থাকা পানি এর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে ঠিক ঠাক রাখত, আমার নিচু জমিগুলো ভরে ফেলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সাধের বাড়ি বানালাম আর তার বিনিময়ে দিয়ে গেলাম প্রায় পানি শুন্য একটি এক্যুইফার। 
ঢাকার পানিসম্পদের উপর এই আগ্রাসন অনেক দিনের অথচ ২০০৪ এ এসে আমাদের মনে হল একটি ড্যাপ প্রয়োজন। তবে নয় মণ দুধ জোগানের পরেও  রাধা যে শেষ পর্যন্ত নাচল সেটা আমাদের ভাগ্য।
ঢাকার বন্যা ও জলাবদ্ধতাঃ
নিঃসন্দেহে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার প্রধান কারন এর নিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকা শহরের নিষ্কাশন ব্যবস্থা কি অপ্রতুল নাকি প্রকল্পিত বা বাস্তবায়িত নিষ্কাশন ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি অনুপাতে এর জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। একটি উদাহরণ দেই, ধানমন্ডি এলাকা আজ থেকে বছর দশেক আগেও ছিল একতলা বা দু'তলা বাসার এলাকা আর এখন সেখানে তা পরিনত হয়েছে ছয় থেকে আট তলার এপার্টমেন্ট এলাকা। কিন্তু ঐ এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থা কিন্তু পরিবর্তিন হয়নি খুব একটা ফলে বেড়ে চলেছে জলাবদ্ধতা। সব থেকে বড় কথা ঢাকা শহরের পরিকল্পনার ধানমন্ডি এলাকা হঠাৎ করে ফ্ল্যাট নির্মাতাদের আখড়াতে পরিনত হবে এটি হয়ত ছিলনা। পুরো ঢাকা শহর জুড়ে এই রকম উদাহরন পাওয়া যাবে। অর্থাৎ পরিকল্পনাহীন আবাসন কিংবা নগরায়ন জলাবদ্ধতার সমস্যাকে তরান্বিত করে যা ঘটেছে ঢাকার ক্ষেত্রে। 
একই সিদ্ধান্তে আসা যায় বন্যার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে আমি স্বাভাবিক বন্যার কথা বলছি যা প্রাকৃতিক ভাবেই বাংলাদেশের মত অববাহিকায় প্রতিবছরই ঘটে। ভূপ্রাকৃতিকগত দিক থেকেই একটি নদীর নির্দীষ্ট একটি অববাহিকা থাকে যার একটি বিশেষ অংশ জুড়ে থাকে ফ্লাডপ্লেইন বা প্লাবনভূমি। প্লাবনভূমি সাধারনত নদীর দুই ধারে প্রস্থ বরাবর নির্দীষ্ট দূরত্ত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে যা কিনা ঐ নদীর হিস্টরিকাল প্রবাহ থেকে নির্ণয় করা যায়। প্রাকৃতিক ভাগেই এই প্লাবনভূমিতে বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে গিয়ে স্বাভাবিক বন্যা হবে এবং তা প্রতিবছর। এখন সেই প্লাবনভূমিতে যদি আমরা মাটি ভরাট করে আবাসন কিংবা অন্যান্ন যেকোন উন্নয়ন কর্মকান্ড করি সেক্ষেত্রে বন্যার পানি সেই যায়গা থেকে উপচে এর আশেপাশের এলাকায় যাবে এবং বেশি বিস্তৃত হবে কারন পানির আয়তন যদি আমরা ধ্রুব ধরি তাহলে মাটি ভরাট করে গভীরতা কমিয়ে দিলে  এর বিস্তৃতি বাড়বে ( আয়তন = গভীরতা × বিস্তৃতি)। ঠিক এই ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে ঢাকার ক্ষেত্রে প্রতিবছর। ঢাকার পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিনের দিকে বাঁধ থাকায় তা টের পাওয়া যাচ্ছেনা এখন কিন্তু পূর্বাঞ্চল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নোংরা পানির বন্যা কাকে বলে। 
ক্রমহ্রাসমান ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরঃ
ঢাকা শহরের ক্রমহ্রাসমান পানির স্তর আর তা কৃত্রিমভাবে পূরণের উপর ২০০৪ সালে আমার বন্ধু ওয়াসিম ও আমি একটি যৌথ প্রকাশনায় দেখিয়েছিলাম যে ঢাকা ওয়াসার প্রায় ৯৫ ভাগ মিউনিসিপাল ওয়াটার আসলে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রাকৃতিক ভাবে শুষ্ক মৌসুমে নেমে যায় আবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির ও বন্যার পানি নিচে যেয়ে সেই স্তরকে আবার উঠিয়ে দেয়। ঢাকা শহরের পানির বিশাল চাপ এর ভূগর্ভস্থ স্তরকে শুধুই নিচে নিয়ে যাচ্ছে, কারন যে হারে পানি তোলা হচ্ছে সেই হারে পানি প্রাকৃতিকভাবে নেচে যাচ্ছেনা। আমরা ঢাকা শহরের প্রায় ১৫ টি পরীক্ষণ কূপের এর উপাত্ত বিশ্লেষন করে দেখেছিলাম  যে গড়ে প্রতিবছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নেমে যাওয়ার হার বছরে প্রায় ২ মিটার। ২০১০ এ এসে সেই হার আরো বাড়ার কথা। পানির চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ক্রমহ্রাসমানতার একটি বড় কারন হচ্ছে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরস্থ বা এর আশে পাশের জলাভূমি বা নিচু এলাকা ভরাট করে ফেলা। শহরাঞ্চলে যেহেতু অধিকাংশ এলাকা সিমেন্ট না পিচের আস্তর দিয়ে মোড়ানো তাই বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে যেতে পারেনা। শহরের অভ্যন্তরে নিচু এলাকা বা জলাভুমি থাকলে বৃষ্টির পানি আগে সেখানে গিয়ে জমা হয় পরে তা ভূগর্ভে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর যতটুকু নেমে যায় বর্ষা মৌসুমে তা পূরণ হয়ে যাবার সুযোগ থাকে। কিন্তু গত কয়েক দশকে ঢাকা শহরের নিচু এলাকা ও জলাভূমিগুলোকে ভরাট করে আবাসন তৈরী করা হয়েছে ফলে পানির ভূগর্ভে প্রবেশ করা হয়েছে বন্ধ আর তার বিপরীতে নব আবাসন প্রকল্পের ফলে পানির চাহিদা বরং বেড়েছে।

ঢাকার পানিসমস্যা ও ড্যাপঃ
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে যা বেরিয়ে আসল তার সারাংশ হচ্ছে ঢাকা শহরের পানিসমস্যা মূলত নিম্নরূপঃ
  • শহরের অভ্যন্তরস্থ প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা।
  • অপরিকল্পিত আবাসন অনুমোদনের ফলে সৃষ্ট নিষ্কাশন চাহিদার বিপরীতে অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা।
  • প্লাবনভূমিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে স্বাভাবিক বন্যার পানি অপ্লাবনভূমিতে ছড়িয়ে পড়া।
  • নিচু এলাকা ও জলাভূমি ভরাটের ফলে প্রাকৃতিক ভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পূনঃভরন না হওয়া প্রকারান্তরে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া।

এখন দেখা যাক ড্যাপ এর মধ্যে এই সমস্যাগুলো সমাধানের কোন নমুনা বা নির্দেশনা আছে কিনা।  প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার পূনরুদ্ধার নিয়ে এবং নিচু অঞ্চল ও জলাভূমি পূনরুদ্ধার নিয়ে সন্দেহাতিত ভাবে ড্যাপের আলোচনা ও নির্দেশনা এসেছে। যেমন [২],
"The options to reduce and minimize these major constraints rest with utilizing and optimizing naturally flood-free land and carrying out major flood protection works and protecting existing natural depressions and khals" (Article 3.3) 
 "In order to optimize the full potential of existing and potential new development land areas, the areas designated as retention ponds in natural depressions and the city’s existing natural drainage system and khals must be protected at all costs (Article 3.3)
"Preserve the Beels, khals as lakes with demarking buffer distance" (3.3.15)
স্ট্রাকচার প্ল্যান প্রকল্পে ঢাকা শহরের প্লাবনভূমিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল, একঃ মুখ্য প্লাবনভূমি (Flood Flow Zone) এবং গৌন প্লাবনভূমি (Sub Flood Flow Zone) এবং নির্দেশ ছিল যে একমাত্র কৃষি, নিষ্কাশন ও রাস্তাখাট ছাড়া ঐ সব এলাকায় কোন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবেনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে যে গৌণ প্লাবনভূমিতে উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা দূরুহ হয়ে গিয়েছিল স্ট্রাকচার প্যানের কিছু দূর্বলতার জন্য। ফলে ড্যাপে এই দুই অঞ্চলক একত্রিত করে করা হয়েছে শুধু প্লাবনভূমি ( ফ্লাড ফ্লো জোন) ।নিচের উদ্ধৃতিটি দেখুন [২]

But in reality, controlling Subflood Flow Zone is being very difficult because of some existence of flexibility of using this zone mentioned in structure plan. Therefore, in order to provide stricter measures to safeguard flood plain areas, in detailed Area Plan, these two types of zone have been merged and named Flood Flow Zone (Article 3.3.6)
অর্থাৎ কিনা এই ফ্লাড ফ্লো জোনে কোন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম করা যাবেনা। আমরাও তাই মন করি, দ্বিমতে যাবার প্রশ্নই উঠেনা।
ড্যাপে অসংগতি তাহলে কি ??
এতক্ষণ কিন্তু ড্যাপের প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, ফ্লড ফ্লো জোন একত্রিকরণ ও ফ্লাড ফ্লো জোনে উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন করা এই সব কিছু নিয়েই একমত ছিলাম। কিন্তু সমস্যা দাড়াল যখন ড্যাপের চুড়ান্ত ম্যাপটা দেখলাম যেখানে এই জোনগুলি চিহ্নিত করে দেখানো হয়েছে। ম্যাপটি বড় বিধায় এমবেড করলামনা, পাঠক এই লিঙ্ক থেকে দেখে নিতে পারেন। পাঠক নিচের ম্যাপটি লক্ষ্য করুন আগে,

ছবিসুত্রঃ ড্যাপ, রাজউক
বালু নদী আর শীতলক্ষার ঠিক মাঝখানে লালচে বাদামী অঞ্চলটাই রাজউকের  পূর্বাচল প্রকল্প। বালু আর শীতলক্ষা এই দুই নদীর প্লাবনভূমি মিলে এদের মধ্যবর্তী প্রায় পুরো এলাকাই আসলে প্লাবনভুমি এবং ড্যাপের নীতিমালা অনুযায়ী প্লাবনভূমিতে কোন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যাবেনা। সুতরাং কি করা হলো এই অঞ্চলকে প্লাবনভূমি হিসেবে চিহ্নিতই করা হলোনা !! তাই প্লাবনভুমির মাঝখানে অসুরের মতে পড়ে রইল পূর্বাচল। একই কাজ করা হয়েছে ঝিলমিল প্রকল্পের ক্ষেত্রে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ


ছবিসুত্রঃ ড্যাপ, রাজউক
শেষকথাঃ
ড্যাপের এই পরিকল্পনায় ঢাকা বা এর আশেপাশের প্রায় সব আসাবন প্রকল্পই অবৈধ হয়ে যাবে, আমার সেটি নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। বৃহত্তর স্বার্থের জন্য যদি সেটা দরকার হয় তাহলে রাজউক তা করবে কিন্তু সেক্ষেত্রে রাজউককেও একই নিয়ম মানতে হবে। ফ্লাড ফ্লো জোন একটি প্রাকৃতিক জোন যা কোন ভাবেই নিজের ইচ্ছেমত পরিবর্তন করা যাবেনা। রাজউক গায়ের জোরে নিজের প্রকল্পকে ফ্লাড জোনে বসিয়েও তাকে ফ্লাড জোন বলে চিহ্নিত যদি না করে তাহলে বেসরকারী উদ্দোক্তরা এই ড্যাপ মেনে নিবে কেন ? আশা রাখি চুড়ান্ত বাস্তবায়নের আগে রাজউক এই জিনিসগুলো আবার পূনর্বিবেচনা করবে। আইন বানানোর বা মানানোর আগে নিজেকে আগে আইন মেনে চলার উপযোগী করে তুলতে হবে।


প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন