রবিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১১

পরিকল্পনার ছোঁয়া পেলে আবার প্রাণ ফিরে পাবে ঢাকা নগর

লাল-লাল নীল-নীল বাতির শহর ঢাকা। জনজট আর যানজটে ঢাকা রাজধানী ঢাকা এটা অবশ্য ঢাকার আজকালকার দৃশ্য। কিন্তু এই ঢাকা তো অধুনা গড়ে-ওঠা শহর নয়। অষ্টাদশ শতকেও ঢাকা পৃথিবীর সেরা শহরগুলোর মধ্যে দ্বাদশতম ছিল। ঢাকাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে বাংলা, পূর্ববঙ্গ আর বাংলাদেশের পর্যায়ক্রমিক ইতিহাস। ঢাকার বয়স যা-ই হোক না কেন, রাজধানী ঢাকা এরই মধ্যে ৪০০ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ঢাকা এখন পরিত্যক্ত হতে বসেছে। একমাত্র সঠিক নগর পরিকল্পনায় পারে ঢাকাকে আবারো উজ্জীবিত করে তুলতে।পরিকল্পিত নগর মানেই পরিকল্পিত পানি সরবরাহ আর নিষ্কাশন ব্যবস্থা। যাই হোক, খুব সহজ ভাষায় অতীত, বর্তমান ও আগামী দশক নগরায়ন নিয়ে একটি সার্বিক আলোচনা করার প্রয়াস থাকবে।



প্রথমেই জেনে নেয়া যাক নগরায়ন কি। সাধারণভাবে নগরায়ন মানে হচ্ছে নগর এলাকার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাওয়া, আরো ভালো করে বলতে গেলে আনুপাতিক হারে গ্রাম থেকে নগরে জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে গত চলিশ বছরে সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নগরে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে গ্রামে তার চেয়ে কম হারে বেড়েছে। অর্থাৎ নগরে বসবাসকারী ও গ্রামে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত সময়ের সাথে বেড়ে চলেছে এবং জাতিসংঘের তথ্যমতে ২০০৮ সালে তা সমান অর্থাৎ ৫০:৫০-এ পৌঁছেছে। নগরে ও গ্রামে জনসংখ্যার অনুপাতকে যদি নগরায়নের একটি চালক হিসেবে ধরা যায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের ক্ষেত্রে সেটি এখনো ৫০:৫০ যায়নি ঠিকই; কিন্তু আগামী দশ থেকে পনের বছরে তাতে পৌঁছে যাবার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৯৭০ সালে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫ ভাগ যেখানে নগরে থাকতো সেখানে ২০১০ সালে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশে। অর্থাৎ গত চলিশ বছরে নগরায়নের হার বেড়েছে শতকরা প্রায় ২৫ শতাংশ। এই হারে বাড়লেও ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ নগরে বাস করবে।

কিন্তু কেন এই নগরায়ন? নগরায়নের চালিকাশক্তি মূলত কয়েকটি জিনিস কর্মক্ষেত্রের সুযোগ, উন্নত জীবনযাপনের উপযোগী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা; যেমন আবাসন, যোগাযোগ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, বিপণন ইত্যাদি। গত চলিশ বছরে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি বিবেচনা করা যায়, নগরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ার কারণে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে ভিড় করেছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, শিল্প-কারখানা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এই সবকিছু নগরায়নকে প্রভাবিত করছে অনেকাংশে। শুধু উন্নত জীবনযাপনের কারণেই নয়, অনেক সময় নূ্যনতম জীবিকার চাহিদায় খেয়েপরে বাঁচার জন্যও মানুষ নগরে এসে বসতি গড়ে।

আসা যাক বাংলাদেশে নগরায়নের প্রভাব প্রসঙ্গে। আগেই বলেছি, গত চলিশ বছরে বাংলাদেশে নগরায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই সময়ে গ্রাম থেকে অধিক মানুষ শহরে এসে বসতি গড়েছে। কিন্তু এই নগরায়ন কি পরিকল্পিতভাবে হয়েছে? পরিকল্পিত নগরের পক্ষ থেকে বিশেষ একটি এলাকাকে আবাসন প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করে তা উন্নয়ন করে তাতে যাবতীয় নাগরিক সুবিধা প্রদান করা হয় এবং তা অবশ্যই পরিবেশকে সমুন্নত রেখে। অপরিকল্পিত নগরায়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের সুবিধা থেকে অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়; কারণ, তা নাগরিক সুবিধা প্রদানে ব্যর্থ হয়। মৌলিক নাগরিক সুবিধা; যেমন পর্যাপ্ত আবাসন, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদু্যৎ ও জ্বালানি সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যবস্থা ব্যতিরেকে নগরায়ন ঘটলে তা অপরিকল্পিত নগরে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ ঢাকার প্রসঙ্গ এখানে আনা যেতে পারে। গত কয়েক দশকে ঢাকাতে বর্ধিত জনসংখ্যার আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে দুই ভাবে এক. পুরোনো আবাসনকে ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করে, দুই. শহরের আশপাশে আবাদি জমি বা নিচুজমি ও জলাশয় ভরাট করে নতুন আবাসন সৃষ্টি করে। ধানমন্ডি এলাকা আজ থেকে বছর বিশেক আগেও ছিল একতলা বা দুই তলা বাসার এলাকা। আর এখন সেখানে তা পরিণত হয়েছে ছয় থেকে আটতলার অ্যাপার্টমেন্ট এলাকা। কিন্তু ওই এলাকার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কিন্তু পরিবর্তিত হয়নি খুব একটা। ফলে বেড়ে চলেছে জলাবদ্ধতা।

সব থেকে বড় কথা, ঢাকা শহরের পরিকল্পিত ধানমন্ডি এলাকা হঠাৎ করে ফ্ল্যাট নির্মাতাদের আখড়াতে পরিণত হবে এটি হয়ত ছিল না। ঢাকা শহর জুড়ে এ রকম উদাহরণ পাওয়া যাবে। অর্থাৎ পরিকল্পনাহীন আবাসন কিংবা নগরায়ন জলাবদ্ধতার সমস্যাকে ত্বরান্বিত করে যা ঘটেছে ঢাকার ক্ষেত্রে। অন্যদিকে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরস্থ বা এর আশপাশের জলাভূমি বা নিচু এলাকা ভরাট করে আবাসন গড়ে উঠছে। শহরাঞ্চলে যেহেতু অধিকাংশ এলাকা সিমেন্ট বা পিচের আস্তর দিয়ে মোড়ানো তাই বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে যেতে পারে না। শহরের অভ্যন্তরে নিচু এলাকা বা জলাভূমি থাকলে বৃষ্টির পানি আগে সেখানে গিয়ে জমা হয় পরে তা ভূগর্ভে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর যতটুকু নেমে যায় বর্ষা মৌসুমে তা পূরণ হয়ে যাবার সুযোগ থাকে। কিন্তু গত কয়েক দশকে ঢাকা শহরের নিচু এলাকা ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে আবাসন তৈরি করা হয়েছে। ফলে পানির ভূগর্ভে প্রবেশ বন্ধ হয়েছে আর তার বিপরীতে নব আবাসন প্রকল্পের ফলে পানির চাহিদা বরং বেড়েছে।

নগরায়নের আরেকটি মৌলিক চাহিদা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ। সাধারণত একটি শহর যে নদীকে ভিত্তি করে গড়ে উঠে তার উজান থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরিশোধন করে নগরের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করা হয়; যেমন গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক ভবন, কল-কারখানা ইত্যাদি। এসব থেকে নিষ্কাশিত পানি আবার দূষিত পানি পরিশোধন কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে পরিশোধিত পানি আবার নদীর ভাটিতে ফেলে দেয়া হয়। ঢাকার চারদিকে প্রাকৃতিক নদী প্রবাহ থাকলেও এর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে নদীর বদলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ভিত্তি করে। এর একটি কারণ অর্থনৈতিক। কারণ, নদীর পানিকে পরিশোধন করার মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেই আর, দুই, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে আমরা এতটাই দূষিত করে ফেলেছি যে তা শোধন করাটা এখন প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব হলেও অর্থনৈতিকভাবে ফিজিবল কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। পৃথিবীর বুকে খুব কম দেশই আছে যেখানে রাজধানীর বুকে রয়েছে ট্যানারি। ঢাকার হাজারীবাগের ট্যানারির বর্জ্য ফেলা হয় বুড়িগঙ্গার বুকে। বিষাক্ত এই বর্জ্য নদীর পানির সাথে মিশে এর জলজ প্রাণীদের মৃতু্য ঘটায়। অথচ পরিকল্পিতভাবে নগর থেকে শিল্প-কারখানা দূরে সরিয়ে রাখলে বা শিল্প-কারখানার বর্জ্য যথাযথভাবে পরিশোধন করে তা নদীতে ফেললে এই সমস্যা এতটা প্রকট হতো না। আমাদের নগরগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও আধুনিক নয়। আগে ঐতিহ্যগতভাবে শহরের বাসিন্দারা তাদের নিজেদের বাসায় সেপটিক ট্যাঙ্ক নির্মাণ করত, সিটি করপোরেশনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য এখন কেউ তা আর করে না। আমাদের পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের সুযোগ আর সাধ্য দুটোই কম; সেক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি, গোসলের পানি আর পয়ঃ একই পথ দিয়ে বের হয়ে সরাসরি গিয়ে নদীতে পড়ে আর নদী হারায় তার জীবন।

বাংলাদেশের নগরগুলোর অভ্যন্তরস্থ যোগাযোগ ব্যবস্থা গত কয়েক দশকে আরো নাজুক হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে নগরে অপরিকল্পিতভাবে যোগাযোগ মাধ্যম যেমন বাস, টেম্পু, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার বেড়েছে, সেই তুলনায় নগরে রাস্তার আয়তন তেমন বাড়েনি। ফলে প্রায়শই নগরের মানুষদের পোহাতে হয় দুর্বিষহ যানজট। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবশ্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে কিন্তু সার্বিকভাবে এই সুবিধা পেতে যে পরিমাণ অর্থের যোগান প্রয়োজন তা অধিকাংশ নাগরিকেরই নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজ থাকলেও প্রতিযোগিতার দৌড়ে এখনো পুরোনো নামী স্কুল-কলেজগুলোতে ভর্তির অভিলাষ নগরে মানুষের বিচরণকে করেছে বিস্তৃত, যা আবার যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করেছে। বিশেষ করে গত এক দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ স্থাপিত হয়েছে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে। এর ইতিবাচক দিক হচ্ছে আগে বাংলাদেশ থেকে উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পেয়ে বিদেশে (বিশেষত পার্শ্ববর্তী ভারতে) যেত যার হার এখন অনেক কমে গিয়েছে দেশে এই সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শহরে স্থাপিত হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে।

সার্বিকভাবে বাংলাদেশে নগরায়ন ঘটেছে বা ঘটছে অপরিকল্পিতভাবে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়াবহ সমস্যার মুখে ফেলে আমাদের প্রস্থানের সময় এসে যাবে যা আমাদের কাম্য নয়। আগামী দশকে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এর প্রাক্কালে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছে একটি পরিকল্পিত নগরায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আগামী দশ বছরে গত চলিস্নশ বছরের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের আশা করছি না, বা তা সম্ভবও হয়তো নয়, তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অন্তত গ্রহণ করলে সেটাও হবে নাগরিক হিসেবে আমাদের সৌভাগ্য।

এক. মূল নগরে চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে বিশেষত বিভাগীয় শহরগুলোর আশপাশে চারদিকে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ। এক্ষেত্রে এসব স্যাটেলাইট শহরের অধিবাসীদের কর্মক্ষেত্রে মূল শহরে থাকলেও আবাসন ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা তারা তাদের নিজস্ব শহরগুলো থেকেই পাবে। এতে মূল শহরের নিচুজমি বা জলাশয় ভরাট করে আবাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন কমবে।

দুই. মূল শহরগুলো থেকে বিশেষত রাজধানী ঢাকা থেকে যাবতীয় শিল্প-কারখানা সরিয়ে আলাদা শিল্প শহর গড়ে তুলতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে সেখানে পানি, বায়ুদূষণ যেন একটি স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে থাকে।

তিন. বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নগরে ভূগর্ভস্থভিত্তিক পানি সরবরাহের পরিবর্তে নদীভিত্তিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এতে প্রথমত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া রোধ হবে আর দ্বিতীয়ত নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ আরো বেগবান হবে।

চার. সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় দুই ভাবে; ১. চাহিদা কমিয়ে, ২. যোগান বাড়িয়ে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নগরের মানুষের চাহিদামতো রাস্তার সংখ্যা বাড়িয়ে যানজট সমস্যার সমাধান হয়তো ঢাকার ক্ষেত্রে সম্ভব নয় তবে দক্ষতার সাথে রাস্তার ব্যবহার এক্ষেত্রে এই সমস্যা কমিয়ে আনতে পারে। যত্রতত্র পার্কিং করে রাস্তার আয়তন কমানো, বড় বাসের তুলনায় মিনিবাসের আধিক্য, নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি যোগাযোগ মাধ্যম, ট্রাফিক আইনের যত্রতত্র অবমাননা ইত্যাদি কমিয়ে আনলে এই সমস্যার একটি সফল সমাধান আশা করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে সরকার ঢাকাতে ওয়াটার বাস চালু করেছে, ঠিক জানি না সেই প্রকল্পের সফলতা কতটুকু। পাশাপাশি সরকারের উচিত অন্তত রাজধানী ঢাকার জন্য নগরের অভ্যন্তরে পাতাল রেল বা ট্রাম লাইন চালু করার কথা বিবেচনা করা। আগামী দশকে হয়তো এই চাওয়া অনেক বড়, তারপরও সরকার অন্তত নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

পাঁচ : বড় শহরগুলোর জন্য এলাকাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত) ভর্তির বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ আসতে হবে। সেক্ষেত্রে এক এলাকার শিক্ষার্থীদের অন্য এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত কমে যাবে। ফলে যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর চাপ কমবে।

ছয়. বড় বড় নগর থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া বন্ধ করতে হবে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে বড় নগরে তাদের ক্যাম্পাস নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

সার্বিকভাবে পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য বিশেষজ্ঞ নগর পরিকল্পনাবিদের অংশগ্রহণে পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। প্রবাদে আছে 'দাঁত থাকতে নাকি দাঁতের মর্যাদা বুঝতে হয়' আর আমরা দাঁত চলে গেলেও দাঁতের মর্যাদা বোঝার চেষ্টা করি না। একটু পরিকল্পনার ছোঁয়া পেলে আমাদের নগরগুলো আবার প্রাণ ফিরে পাবে, হয়তো সেদিন আমাদের সন্তানেরা বুড়িগঙ্গার বুকে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াবে, নদীর শান্ত শীতল জলে পা ভেজাবে, প্রেয়সীর সাথে গল্প করতে করতে সূর্যাস্ত দেখবে। আমরা সেই দিন বদলের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছি।


লেখক : পিএইচডি গবেষক (পানিসম্পদ), ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা, কানাডা ও সাবেক শিক্ষক, পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ, বুয়েট


কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ রাজীর নুর, সহকারী সম্পাদক ,ইত্তেফাক, প্রথম অনুচ্ছেদটি সংযোজন ও সম্পাদনার জন্য।  
বিদ্রঃ লেখাটি ৩ জানুয়ারী ২০১১ তে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়েছে।