হুগলী নদীর তীর ঘেঁষে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নির্মান করা ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে পূরাতন ও প্রধান বন্দর কলকাতা। ষাটের দশকে নদী থেকে বয়ে আসা বিপুল পলি বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধা সৃষ্টি করায় তার প্রতিকারে ভারত সরকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় ১৯৫১ সালে, যাতে গঙ্গা নদীতে ব্যারেজ নির্মান করে একটি বিকল্প খাল দিয়ে গঙ্গার পানিকে হুগলী নদীতে প্রবাহিত করে বন্দরের সঞ্চিত পলিকে স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেই পরিকল্পনা পরিশেষে বাস্তবায়িত হয় ১৯৭৪-৭৫ সালে ‘ফারাক্কা ব্যারেজ’ নামে। ১৯৫১ সালে ফারাক্কা ব্যারেজের পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে শুরু হওয়া বিতর্ক, আলোচনা ও সংঘাতের অবসান ঘটে ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির মাধ্যমে [১]। ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ৫৭ টি অভিন্ন নদী থাকলেও গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক পানিচুক্তি। গত ১২ ডিসেম্বর এই চুক্তির ১৪ বছর পূর্তি হলো, সব ঠিক থাকলে এই ২০২৬ সাল পর্যন্ত তা অব্যহত থাকবে। এর পরে এই চুক্তির নবায়ন উভয় দেশের উপর নির্ভর করবে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি কতটা সফল তা নির্ভর করে দুটি বিষয়ের উপরঃ
গঙ্গা চুক্তির পানিবন্টন সমীকরণঃ
আগে গঙ্গা চুক্তির পানিবন্টন সমীকরন একটু জেনে নেয়া যাক।এই পানিবন্টন চুক্তি জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে মে'র ৩১ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং পানিবন্টন হয় ১০ দিন ভিত্তিক, অর্থাৎ একটি মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করে ১০ দিনের গড় প্রবাহ অনুযায়ী চুক্তি অবলোকন করতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী
পানিবন্টনের বর্তমান পরিস্থিতিঃ
গঙ্গার পানিবন্টন নিয়ে প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় খবরাখবর থাকে, এই ইস্যু নিয়ে ভারত-প্রীতি বনাম ভারত-বিদ্বেষী রাজনীতিও হয় তাই প্রতিবছর। তবে এই রিপোর্টগুলিতে উপাত্তভিত্তিক বিশ্লেষণের অভাব পরিলক্ষিত হয়। যুক্তি নদী কমিশন ( জে আর সি) এই উপাত্ত সংগ্রহ ও সরবরাহের দ্বায়িত্ত্বে নিয়োজিত থাকে। যুক্ত নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে ২০০৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিবছর গঙ্গার ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশ অংশে প্রবাহের একটি তুলনামূলক উপাত্ত রাখা আছে যা মূলত প্রেসনোট আকারে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায় পাঠানো হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে গঙ্গাচুক্তি কার্যকর থাকে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এবং পানিবন্টন হয় ১০ ভিত্তিক গড় প্রবাহ অনুযায়ী। সেই বিচারে জানুয়ারী থেকে মে এই পাঁচ মাসকে মোট ১৫ টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এই নিবন্ধে ২০০৮, ২০০৯ এবং ২০১০ সালে গঙ্গাচুক্তিকে বিশ্লেষণ করা হবে দুটি ভিত্তিতেঃ
ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত দশ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে।
অর্থাৎ যেহেতু গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী তৈরী করা হয়েছে তাই ফারাক্কায় গঙ্গার প্রবাহ যাতে হিস্টরিকাল গড় প্রবাহের চেয়ে কমে না যায় সেই দিকে উজানের পানি ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
এবারে দেখা যাক গত ৩ বছরের চিত্রঃ
২০০৮
২০০৮ সালে ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর তিনটি পর্যায়ে পায়নি।অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে।
তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা গিয়েছে ঠিক উল্টো পরিস্থিতি। ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে মাত্র ২ টি পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ১৩ ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। নিচের চিত্রে "পাই চার্টের" মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হলোঃ
চিত্র ১- ২০০৮ সালে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্ত পানি ও হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানি
২০০৯
২০০৯ সালেও ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর তিনটি পর্যায়ে পায়নি।অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে।
তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা পরিস্থিতি ২০০৮ এর মত। ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে মাত্র ২ টি পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ১৩ ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। নিচের চিত্রে "পাই চার্টের" মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হলোঃ
চিত্র ২- ২০০৯ সালে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্ত পানি ও হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানি
২০১০
২০১০ সালেও ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ৯ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর ৬ পর্যায়ে পায়নি।অর্থাৎ শতকরা ৬০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে।
তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা পরিস্থিতি ভয়াবহ। ১৫ টি পর্যায়ের কোনটিতেই বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পায়নি। নিচের চিত্রে "পাই চার্টের" মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হলোঃ
চিত্র ৩- ২০১০ সালে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্ত পানি ও হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানি
সামগ্রিক চিত্রঃ
উপরের তিন বছরের জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার প্রবাহকে যদি হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির সাথে তুলনা করা হয় তাহলে নিচের চিত্রটি পাওয়া যাবে।
চিত্র ৪- হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানির সাথে ২০০৮-২০১০ সালের পানি প্রাপ্তির তুলনামূলক চিত্র
লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে কিছু কিছু পর্যায়ে তা হিস্টরিকাল গড় প্রবাহ থেকে বেশি থাকলেও ২০১০ সালে তা প্রতিটি পর্যায়েই কমে গিয়েছে।
পরিশেষেঃ
গঙ্গার প্রবাহ কমে যাবার কয়েকটি মূলত দুটি কারন থাকতে পারেঃ
যদি প্রথমোক্ত কারনে গঙ্গার প্রবাহ কমে যায় তাহলে সেটি চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ২ অনুযায়ী চুক্তির লঙ্ঘন। আর দ্বিতীয় কারনে প্রবাহ কমে গেলে চুক্তির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে সেক্ষেত্রে যুক্ত নদী কমিশনের উচিৎ এই পরিস্থিতিতে কি কি করনীয় তা প্রনয়ন করা। আশা করি যুক্ত নদী কমিশন ১৯৯৭ থেকে বর্তমান সময়ের উপাত্ত নিয়ে এই ধরনের বিশ্লেষণ করে সঠিক কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করবে।
তথ্যসুত্রঃ
[১] 'ফিরে দেখা গঙ্গা চুক্তি', জাহিদুল ইসলাম, কালের কন্ঠ ৮ ডিসেম্বর, ২০১০
[২] গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, জাহিদুল ইসলাম ( সচলায়তনে সিরিজ আকারে প্রকাশিত)
উপাত্তসুত্রঃ
যুক্ত নদী কমিশন প্রেস নোট
- প্রথমতঃ ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে প্রায় ২০ বছরকাল ভারতের একতরফা পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের পানিসম্পদ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র ও সর্বোপরি আর্থসামাজিক অবস্থার যে অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক কতটা কমানো বা লাঘব করা গিয়েছে।
- দ্বিতীয়তঃ চুক্তি অনুযায়ী ঠিকমত পানি আদৌ বাংলাদেশ পাচ্ছে কিনা।
গঙ্গা চুক্তির পানিবন্টন সমীকরণঃ
আগে গঙ্গা চুক্তির পানিবন্টন সমীকরন একটু জেনে নেয়া যাক।এই পানিবন্টন চুক্তি জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে মে'র ৩১ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং পানিবন্টন হয় ১০ দিন ভিত্তিক, অর্থাৎ একটি মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করে ১০ দিনের গড় প্রবাহ অনুযায়ী চুক্তি অবলোকন করতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী
- প্রবাহ যদি ৭৫,০০০ কিউসেকের বেশি হয় তাহলে ভারত পাবে ৪০,০০০ কিউসেক আর বাদবাকী পাবে বাংলাদেশ।
- প্রবাহ যদি ৭০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ এর মধ্যে হয় তাহলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫,০০০ কিউসেক আর বাদবাকী পাবে ভারত।
- প্রবাহ যদি ৭০,০০০ এর কম হয় সেক্ষেত্রে দুই দেশ সমভাবে পানি ভাগ করে নিবে। তবে যেহেতু শুষ্ক মৌসুমে দুই দেশেই পানির প্রয়োজন বেশি তাই প্রবাহ ৭০,০০০ এর চেয়ে কমে গেলেও ১১-২০ মার্চ, ১-১০ এপ্রিল, ও ২১-৩০ এপ্রিল এই তিনটি সময়ে বাংলাদেশ ৩৫,০০০ কিউসেক পানি গ্যারান্টি সহকারে পাবে পক্ষান্তরে ২১-৩০ মার্চ, ১১-২০ এপ্রিল ও ১-১০ মে এই তিন সময়ে ভারত ৩৫,০০০ কিউসেক পানি গ্যারান্টি সহকারে পাবে। একটি দেশ যখন গ্যারান্টিড পানি পাবে অন্যদেশ তখন মোট প্রবাহ থেকে ৩৫০০০ কিউসেক বাদ দিলে যা থাকে তাই পাবে।
পানিবন্টনের বর্তমান পরিস্থিতিঃ
গঙ্গার পানিবন্টন নিয়ে প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় খবরাখবর থাকে, এই ইস্যু নিয়ে ভারত-প্রীতি বনাম ভারত-বিদ্বেষী রাজনীতিও হয় তাই প্রতিবছর। তবে এই রিপোর্টগুলিতে উপাত্তভিত্তিক বিশ্লেষণের অভাব পরিলক্ষিত হয়। যুক্তি নদী কমিশন ( জে আর সি) এই উপাত্ত সংগ্রহ ও সরবরাহের দ্বায়িত্ত্বে নিয়োজিত থাকে। যুক্ত নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে ২০০৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিবছর গঙ্গার ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশ অংশে প্রবাহের একটি তুলনামূলক উপাত্ত রাখা আছে যা মূলত প্রেসনোট আকারে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায় পাঠানো হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে গঙ্গাচুক্তি কার্যকর থাকে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এবং পানিবন্টন হয় ১০ ভিত্তিক গড় প্রবাহ অনুযায়ী। সেই বিচারে জানুয়ারী থেকে মে এই পাঁচ মাসকে মোট ১৫ টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এই নিবন্ধে ২০০৮, ২০০৯ এবং ২০১০ সালে গঙ্গাচুক্তিকে বিশ্লেষণ করা হবে দুটি ভিত্তিতেঃ
- প্রথমতঃ প্রতিবছর এই ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে কতটি পর্যায়ে ১৯৯৬ এর চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে। অর্থাৎ শতকরা কত ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি রক্ষিত হচ্ছে আর কতভাগ সময়ে তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
- দ্বিতীয়তঃ ফারাক্কায় গঙ্গার হিস্টকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) থেকে চুক্তির সমীকরণ অনুযায়ী বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রাপ্য পানির আলোকে প্রতিবছর এই ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে কতটি পর্যায়ে বাংলাদেশ সঠিক ভাবে পানি পাচ্ছে। অর্থাৎ শতকরা কত ভাগ সময়ে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনযায়ী গঙ্গা চুক্তি রক্ষিত হচ্ছে আর কতভাগ সময়ে তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত দশ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে।
অর্থাৎ যেহেতু গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী তৈরী করা হয়েছে তাই ফারাক্কায় গঙ্গার প্রবাহ যাতে হিস্টরিকাল গড় প্রবাহের চেয়ে কমে না যায় সেই দিকে উজানের পানি ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
এবারে দেখা যাক গত ৩ বছরের চিত্রঃ
২০০৮
২০০৮ সালে ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর তিনটি পর্যায়ে পায়নি।অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে।
তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা গিয়েছে ঠিক উল্টো পরিস্থিতি। ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে মাত্র ২ টি পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ১৩ ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। নিচের চিত্রে "পাই চার্টের" মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হলোঃ
চিত্র ১- ২০০৮ সালে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্ত পানি ও হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানি
২০০৯
২০০৯ সালেও ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর তিনটি পর্যায়ে পায়নি।অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে।
তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা পরিস্থিতি ২০০৮ এর মত। ১৫ টি পর্যায়ের মধ্যে মাত্র ২ টি পর্যায়ে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। অর্থাৎ শতকরা ১৩ ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। নিচের চিত্রে "পাই চার্টের" মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হলোঃ
চিত্র ২- ২০০৯ সালে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্ত পানি ও হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানি
২০১০
২০১০ সালেও ১৫টি পর্যায়ের মধ্যে ৯ টি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পেয়েছে আর ৬ পর্যায়ে পায়নি।অর্থাৎ শতকরা ৬০ ভাগ সময়ে গঙ্গা চুক্তি সংরক্ষিত হয়েছে।
তবে হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী দেখা পরিস্থিতি ভয়াবহ। ১৫ টি পর্যায়ের কোনটিতেই বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানি পায়নি। নিচের চিত্রে "পাই চার্টের" মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হলোঃ
চিত্র ৩- ২০১০ সালে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রাপ্ত পানি ও হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানি
সামগ্রিক চিত্রঃ
উপরের তিন বছরের জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার প্রবাহকে যদি হিস্টরিকাল প্রবাহ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির সাথে তুলনা করা হয় তাহলে নিচের চিত্রটি পাওয়া যাবে।
চিত্র ৪- হিস্টরিকাল প্রবাহ (১৯৪৯-১৯৮৮) অনুযায়ী প্রাপ্য পানির সাথে ২০০৮-২০১০ সালের পানি প্রাপ্তির তুলনামূলক চিত্র
লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে কিছু কিছু পর্যায়ে তা হিস্টরিকাল গড় প্রবাহ থেকে বেশি থাকলেও ২০১০ সালে তা প্রতিটি পর্যায়েই কমে গিয়েছে।
পরিশেষেঃ
গঙ্গার প্রবাহ কমে যাবার কয়েকটি মূলত দুটি কারন থাকতে পারেঃ
- উজানে গঙ্গার পানির ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে।
- জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্য কোন কারনে গঙ্গার প্রবাহ কমে গিয়েছে।
যদি প্রথমোক্ত কারনে গঙ্গার প্রবাহ কমে যায় তাহলে সেটি চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ২ অনুযায়ী চুক্তির লঙ্ঘন। আর দ্বিতীয় কারনে প্রবাহ কমে গেলে চুক্তির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে সেক্ষেত্রে যুক্ত নদী কমিশনের উচিৎ এই পরিস্থিতিতে কি কি করনীয় তা প্রনয়ন করা। আশা করি যুক্ত নদী কমিশন ১৯৯৭ থেকে বর্তমান সময়ের উপাত্ত নিয়ে এই ধরনের বিশ্লেষণ করে সঠিক কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করবে।
তথ্যসুত্রঃ
[১] 'ফিরে দেখা গঙ্গা চুক্তি', জাহিদুল ইসলাম, কালের কন্ঠ ৮ ডিসেম্বর, ২০১০
[২] গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, জাহিদুল ইসলাম ( সচলায়তনে সিরিজ আকারে প্রকাশিত)
উপাত্তসুত্রঃ
যুক্ত নদী কমিশন প্রেস নোট