রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

টিপাইমুখ যৌথ সমীক্ষাঃ বাংলাদেশের বিবেচ্য বিষয়সমুহ

টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প নিয়ে গত প্রায় তিন বছর ধরে বিশ্লেষন ও লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য ছিল কয়েকটি।প্রথমতঃ এই প্রকল্পের ভারতীয় কতৃপক্ষের [১] পরিবেশগত প্রভাব যাচাই করনে ভাটির প্রভাব, যা মূলত বাংলাদেশে পড়বে তা উপেক্ষিত হয়েছিল, কিন্তু আদতে একটি বাঁধের ভাটিতে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমানে পরিবেশ ও পানিসম্পদগত পরিবর্তন ও বিপর্যয় ঘটে থাকে যা নির্নয় করা আবশ্যক।দ্বিতীয়তঃ টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে এযাবতকালে পরিচালিত গবেষনার ( FAP 6 [২] ও IWM [৩]) আলোকে এটি প্রতীয়মান হয় যে টিপাইমুখ প্রকল্প বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, বিশেষত হাওড় এলাকার পরিবেশ ও বাস্ততন্ত্রের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। কিন্তু ঠিক কি পরিমান প্রভাব পড়বে সেটা নির্নয় করার জন্য প্রয়োজন আরো গবেষণা। তৃতীয়তঃ টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থান সবসময় ছিল কিছুটা এরকম যে, এই বাঁধ হলে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবেনা [৪] এই বাঁধ হবেই [৫], কিংবা ফুলেরতল ব্যারেজ না হয়ে শুধু বাঁধ হলে তা বাংলাদেশের উপর নেতিবাচক কোন প্রভাব ফেলবেনা। অথচ আন্তঃসীমান্ত নদীতে উল্লেখযোগ্য কোন প্রকল্প করা হলে তা যেন অন্য দেশে, বিশেষত ভাটিতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া না ফেলে সেদিকে সচেষ্ট থাকা উচিৎ। চতুর্থতঃ টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ছিল মূলত ভারতের আশ্বাসে আশস্ত থাকা [৬,৭], কিংবা টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক [৮], টিপাইমুখ বাঁধ ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয় [৯] , কিংবা টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধিতা আদতে ভারত-বিদ্বেষী মনোভাবপ্রসূত [১০]।


উপরোক্ত বিষয়গুলোর আলোকে কিংবা বিপরীতে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত অবস্থান ছিল কিছুটা এরকম [১১],
  • প্রাথমিক গবেষনার আলোকে এটি প্রতীয়মান হয় যে টিপাইমুখ বাঁধের কারনে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে পরিবেশ, বাস্ততন্ত্র, পানিসম্পদ ও মরফোলজিগত প্রভাব পড়বে। এই সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলোকে সিদ্ধ করতে বাংলাদেশের প্রয়োজন এই প্রকল্পের একটি পূর্নাংগ পরিবেশগত প্রভাব যাচাই নিরূপন যা যৌথ সমীক্ষা আকারে হওয়া উচিৎ। বস্তুত এই সমীক্ষার পরই জানা যাবে এই বাঁধ হলে বাংলাদেশের কি পরিমান ক্ষতি হবে।
  • বাঁধের কারনে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতি ন্যুনতম পর্যায়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। যদি বাঁধের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য এর ডিজাইনে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন সম্ভব থাকে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর যদি এই ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব না হয় তাহলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার প্রস্তাব ভারতের কাছে উত্থাপন করতে হবে।
এই প্রারম্ভিক আলোচনার কারন হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি টিপাইমুখ বাঁধের সম্ভাব্য প্রভাব নির্নয়ের জন্য যৌথ সমীক্ষার নিমিত্তে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষনা করেছে [১২]। নিঃসন্দেহে এটি ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্ত। তবে একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে 'ভারত সরকার আশ্বাসে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা' মানসিকতা থেকে 'যৌথ সমীক্ষার আলোকে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেয়ার' এই কূটনৈতিক পট পরিবর্তন এর পেছনে এই ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মহলের পদচারনা, গনমানুষের আন্দোলন কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সেই সাথে সাম্প্রতিক কালে পানিসম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সুপারিশ [১৩] এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে হয়ত। তবে একথা ভুলে গেলে চলবেনা এটি কেবলই সূচনা, এখন লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এই সমীক্ষা সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয় এবং তাতে যেন বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘ্নিত না হয়। সেই আলোকেই আজকের আলোচনা।

যৌথ সমীক্ষা দলঃ

বাংলাদেশ সরকার কতৃক চুড়ান্তকৃত ১০ সদস্যের প্রস্তাবিত দলে ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন এর প্রতিনিধিত্তে এই দলের সদস্যরা কেউ আছেন পদাধিকার বলে ( পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিবিজ্ঞান বা হাইড্রোলজির প্রধান প্রকৌশলী) আর কেউ আছেন স্বস্ব বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতার জন্যে ( মো. শাহজাহান , এম এ কাশেম, মমিনুল হক সরকার, অনিল চন্দ্র আইচ, মো. সোহেল মাসুদ, মুনাজ আহমেদ এবং দেওয়ান আলী)। দলটিকে সাজালে এরকম দাঁড়ায়ঃ
  • আহবায়কঃ মীর সাজ্জাদ হোসেন (জেআরসি সদস্য)।
  • কূটনীতিকঃ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি।
  • অর্থনীতিবিদঃ মো. শাহজাহান , পরিচালক ওয়ারপো।
  • হাইড্রোলজিষ্টঃ প্রধান প্রকৌশলী, পানিবিজ্ঞান, পানি উন্নয়ন বোর্ড।
  • পানিব্যাবস্থাপনা বিশেষজ্ঞঃ এম এ কাশেম, প্রাক্তন পরিচালক ওয়ারপো।
  • মরফোলজিষ্টঃ মমিনুল হক সরকার, সিইজিআইএস।
  • হাইড্রোলিক মডেলিং বিশেষজ্ঞঃ মোঃ সোহেল মাসুদ, ইনষ্টিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং।
  • মৃত্তিকা ও কৃষি বিশেষজ্ঞঃ অনিল চন্দ্র আইচ
  • ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞঃ অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ, বুয়েট।
  • মৎস বিশেষজ্ঞঃ অধ্যাপক দেওয়ান আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে এই দলে প্রকৌশল-ভূতত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, বাস্তুতন্ত্রবিদ, নৃবিজ্ঞানী ও আইনবিদ এর অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। হয়ত দলটিকে দশ সদস্যের মধ্যে রাখার সীমাবদ্ধতা এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এই দলটির কয়েকজন আমার কাছে ব্যাক্তিগত ভাবে পরিচিত, কয়েকজনকে জানি তাদের লেখা বা কাজের মাধ্যমে, বাকীরা আশা করি স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতম অবস্থান থেকেই এসেছেন। এই দলটিতে জনাব মোঃ সোহেল মাসুদ এর অন্তর্ভূক্তি আমার কাছে একটি বিশেষ গুরুত্ত্ব বহন করে। ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে ‘ইন্সটিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং বা IWM’ ২০০৫ সালে টিপাইমুখ প্রকল্পের উপর ‘হাইড্রোলজিকাল ইম্প্যাক্ট স্টাডি অফ টিপাইমুখ ড্যাম প্রজেক্ট অফ ইন্ডিয়া অন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা বা কেইস স্টাডি সম্পন্ন করে যা কিনা টিপাইমুখের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংঘটিত দুইটি গবেষনার মধ্যে একটি। সেই রিপোর্টের আলোকে দেখা যায় যে টিপাইমুখ বাঁধের কারণে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার জলাভূমি ও হাওড় আগের থেকে গড়ে যথাক্রমে ২৬% ও ১১% কমে যাবে, কুশিয়ারা নদী তীরে অবস্থিত কুশিয়ারা-বর্দাল হাওড় গড় বর্ষার সময় পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে এবং কাওয়ারদিঘী হাওড়-এর ২৬% প্লাবন এলাকা হারাবে, বাঁধের ভাটিতে ১০০ থেকে ১৫০ কিমি দীর্ঘায়িত অংশে বিপুল নদীক্ষয়ের ফলে ক্ষয়িত পলি বাংলাদেশে বাহিত হবে যা কিনা বরাক নদীর নিচের অংশে যেখানে থেকে তা সুরমা আর কুশিয়ারা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে সেখানে জমা হবে যা কুশিয়ারা নদীর বেশ কিছু শাখানদীর মুখ বন্ধ করে দিতে পারে।উল্লেখ্য যে জনাব মোঃ সোহেল মাসুদ ঐ রিপোর্টটির তিনজন প্রণেতাকারীর মধ্যে একজন।

 

কি প্রত্যাশা থাকবে যৌথ সমীক্ষা দলের কাছেঃ

আসলে যেকোন বাঁধের প্রভাব নিরূপন করার জন্য প্রয়োজন একটি সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত গবেষণা। টিপাইমুখের ক্ষেত্রে যেসব গবেষনা প্রয়োজনঃ

  • টিপাইমুখ বাঁধ ও ফুলেরতল ব্যারেজের জন্য বারাক-সুরমা-মেঘনা অববাহিকার একটি পূর্নাংগ ভৌত মডেল ( ফিজিকাল মডেল) স্টাডিঃ এই মডেল আসলে পুরো প্রকল্প ও এর প্রভাব পড়ে এমন এলাকার একটি ল্যাবরেটরী সংস্করন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই মডেল, এর জন্য বিপুল পরিমান উপাত্ত প্রয়োজন। আমার জানামতে বাংলাদেশের কাপ্তাই বাঁধের জন্যও এরকম একটি মডেল বানানো হয়েছিল। এটি ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের জন্যই প্রয়োজন।
  • গানিতিক হাইড্রোলজিকাল মডেল স্টাডিঃ গানিতিক মডেল আসলে একটি কম্পিউটার মডেল।হাইড্রোলজিকাল মডেল মূলত পানির পরিমান নিয়ে কাজ করে। সমগ্র বারাক-সুরমা-মেঘনা অববাহিকার জন্য এই মডেল সেট-আপ করতে হবে।ইনপুট হিসেবে দিতে হবে ভূপ্রকৃতি, বৃষ্টিপাত, মাটির প্রকৃতি, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ এবং আরো অনেক কিছু। টিপাইমুখ বাঁধ হলে এর অববাহিকায় পানির পরিমানের কি প্রভাব পড়বে তা এই স্টাডি থেকে জানা যাবে।
  • গানিতিক হাইড্রোলিক মডেলঃ এটি মূলত উজানে পানির প্রবাহকে হিসেবে নিয়ে ভাটিতে মডেলের শেষ সীমা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ও গতিবেগ প্রদান করে। এই দুই মৌলিক উপাত্ত ( উচ্চতা ও গতিবেগ) কে ব্যবহার করে আরো প্রয়োজনীয় অনেক উপাত্ত বের করা যায়।টিপাইমুখের ক্ষেত্রে আমরা উজানের ইনপুট হিসেবে টিপাইমুখ বাঁধের প্রবাহ চিত্র( ডিসচার্জ কার্ভ) অর্থ্যাৎ ভারত বছরের কোন দিন কি পরিমান পানি ছাড়বে তার একটি হাইড্রোগ্রাফ ব্যবহার করতে হবে আর এর সীমা হবে ন্যুনতম চাঁদপুর পর্যন্ত।এটি দিয়ে ড্যাম ব্রেক স্টাডিও করা যাবে।
  • গানিতিক মরফোলজিকাল মডেলঃ এটি গানিতিক হাইড্রোলজিকাল মডেল থেকে প্রাপ্ত পানির গতিবেগ ও উচ্চতা থেকে নদীর বুক থেকে কি পরিমান পলি অপসারিত হবে বা জমা হবে তা বের করবে।
  • গানিতিক হ্যাবিটেট মডেলঃ আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে নদীতে একেক গভীরতায় একেক মাছ পাওয়া যায় কারন তারা ঐ স্তরের গতিবেগের সাথে অভিযোজিত। গানিতিক হ্যাবিটেট মডেল হাইড্রোলিক মডেল থেকে প্রাপ্ত পানির গতিবেগ আর উচ্চতাকে ইনপুট হিসেবে নিয়ে টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবে পরিবর্তিত প্রবাহের সাথে সাথে এর ভাটির নদীর ও সংলগ্ন হাওড় এলাকার মাছের হ্যাবিটেটের পরিবর্তন দেবে।
  • রিজিওনাল ক্লাইমেট মডেলঃ এটি মূলত GCM (General Circulation Model) থেকে উপাত্ত নিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ ও এর প্রভাব পড়ে এমন এলাকার জন্য এই বাঁধের কারনে ভবিষ্যতে জলবায়ূ পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাত্তের পরিবর্তনের সিমুলেশন করবে।
আসলে ঠিক কি পরিমান সময় পাওয়া যাবে, ঠিক কি কি উপাত্ত দুই দেশ আদান-প্রদান করবে তার উপর নির্ভর করবে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে কি কি বাস্তবায়িত হবে। তবে ন্যুনতম যা প্রত্যাশা থাকবে এই দলের প্রতি তা হচ্ছে নিমোক্ত বিষয়গুলো নিরূপন করাঃ
  • বাঁধের ও ব্যারেজের কারনে প্রবাহের কি পরিবর্তন হবে ?
  • এই প্রবাহ হ্রাস ও জলাধারে পলিহ্রাসের প্রভাবে বাঁধের ভাটিতে ব্যাপক নদীক্ষয়ের কি প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে ?
  • প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের হাওড় গুলির বাস্তুতন্ত্রে কি পরিবর্তন আসব ?
  • এই এলাকার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর তার কি প্রভাব পড়বে ?
সেই সাথে কিছু বিশেষ অবস্থা পরীক্ষা করা। যেমনঃ
  • বর্ষাকালে প্রবাহ হ্রাসের ফলে বন্যার প্রকোপ হ্রাস কতটা যুক্তিযুক্ত ও ইতিবাচকঃ প্রথমত, বন্যা আসলে কি কমবে ? দ্বিতীয়ত, যদি ধরেই নেয়া যায় যে বাঁধের ফলে সিলেট আর মৌলভীবাজার এলাকা বন্যামুক্ত হবে সেখানেও প্রশ্ন আসে, এই তথাকথিত বন্যামুক্ত হওয়া কতটা ইতিবাচক?
  • শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ বৃদ্ধি কতটা ইতিবাচক আর কতটা নেতিবাচক?
  • অতি শুষ্ক মৌসুমে কি হবে ?
  • অতি বর্ষা মৌসুমে কি হবে ?
  • ভুমিকম্পে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
  • অপ্রাকৃতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষন (যান্ত্রিক কারনে বাঁধের টারবাইনগুলো অকার্যকর হয়ে যাওয়া, গ্রীডের কোন সমস্যার কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করার পরস্থিতিতে স্পিলওয়ে দিয়ে বিকল্প পথে পানি প্রবাহ ইত্যাদি)
  • ফুলেরতল ব্যারেজ হলে কি হবে ?
  • ব্যারেজ না হলেই কি টিপাইমুখ বাঁধ ইতিবাচক হবে?
  • জলাধার ভরাট সময়কালে কি নেতিবাক প্রভাব পড়বে?

পরিশেষেঃ

শুরুতেই বাংলাদেশ সরকারের দুটি বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে পরিষ্কার করে নেয়া উচিৎঃ
  • যৌথ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারত টিপাইমুখ প্রকল্পের সকল কার্যক্রম স্থগিত করবে।
  • ভারত বাংলাদেশকে আমাদের বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উপাত্ত প্রদান করবে।
এখানে উল্লেক্ষ্য যে সাম্প্রতিক কালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কতৃক টিপাইমুখ প্রকল্পের সমতাভিত্তিক অংশীদার হওয়া এবং সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ভাগ নেওয়ার আমন্ত্রণ পুনর্ব্যক্ত করনের প্রতিক্রিয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ গওহর রিজভী মন্তব্য করেছেন যে, এর ফলে প্রকল্পটির সকল পর্যায়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ থাকবে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্থান করে নেওয়া নিশ্চিত হবে। এছাড়া সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকার গোল টেবিল বৈঠকেও টিপাইমুখ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে [১৪]। এখানে বলে রাখা ভাল যে যৌথ সমীক্ষার আগে এই প্রসংগে ন্যুনতম আলোচনা বা ভারতের এই আমন্ত্রন মেনে নেয়া মানে হচ্ছে টিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে সেটিকে অস্বীকার করা। আমাদের আগে প্রয়োজন এই প্রকল্পের নিজস্ব বা যৌথ সমীক্ষা করে জেনে নেয়া বাংলাদেশের কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে। তার পর এই প্রকল্পে বাঁধের কারনে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতি ন্যুনতম পর্যায়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। যদি বাঁধের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য এর ডিজাইনে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন সম্ভব থাকে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদলের পরামর্শ অনুযায়ী যদি বাঁধের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয় যাতে করে এর ভাটিতে প্রভাব ন্যুনতম পর্যায়ে আসবে তাহলে সেই পরবর্তিত ডিজাইন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল আরেক দফা গবেষণা করবে।এর পরেই শুধুমাত্র সমতাভিত্তিক অংশীদার হওয়া এবং সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ভাগ নেওয়ার প্রসংগ আসতে পারে। আর তা না হলে, অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ দল যদি মনে করে এই ক্ষতি সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব নয় তাহলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার প্রস্তাব ভারতের কাছে উত্থাপন করতে হবে।

 

তথ্যসুত্রঃ