শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১২

শুভ নববর্ষ ১৪১৯






এখানে নেই রমনার বটমুল, নেই ছায়ানটের বৈশাখী আসর কিংবা পান্তা ইলিশের বাহার, গ্রাম বাংলার সেই বৈশাখী মেলাও নেই, শুধু আছে কিছু অন্তঃসারশুন্য মানুষ যাদের শরীর এই খানে কিন্তু হৃদয় পড়ে আছে হাজার হাজার মাইল দূরে কোন এক দেশে যেখানে গ্রীষ্মের গরম বাতাস কিংবা কালবৈশাখীর মত্ত ঝাপ্টা তার আগমনী গান শুনিয়ে নিয়ে আসছে নতুন বছর।


ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে পহেলা বৈশাখের সকালে বাজারে হালখাতা খেতে যাওয়া কিংবা বায়না ধরে বৈশাখী মেলায় টমটম গাড়ি, চিনিসাজ, বিন্নি ধানের খৈ নিয়ে বাড়ি ফেরার আনন্দ পাইনা কতদিন। দাদুবাড়িতে ঝড়ের রাতে মায়ের বকুনি উপেক্ষা করে আম কুড়াতে যাওয়া হয়না অনেকদিন। স্কুল জীবনের সেই দিনগুলির মত বন্ধুদের বাসায় নাড়ু, মোয়া খেতে যাওয়া হয়না, খেলাঘড়ের বৈশাখী উৎসবের আয়োজনেও থাকা হয়না সেই কবে থেকে। তৃষ্ণার্ত হৃদয় তাই বার বার ফিরে যেতে চায় বাংলাদেশে যেখানে সূর্যোদয়ের ক্ষনে নতুন রঙে সেজে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানে মুখরিত হয় বাংলার সকাল।

এখানে বাংলা মা নেই, নেই তার রঙীন জমিনের শাড়ী কিন্তু তারপরেও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বড় সাধ হয় তাই বুক চিড়ে খুঁজে বের করি এক টুকরো রবিঠাকুরকে যাকে অহর্নিশ লালন করে চলেছি। আর তাই কাগজ কেটে বৈশাখী মঞ্চ সাজাই, আল্পনা আঁকি, দেশ থেকে আসার সময় নিয়ে আসা নকশী কাঁথা দিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি গ্রাম বাংলার সেই চিরায়ত সংস্কৃতিকে। নিজেরা বৈশাখী সাজে সাজি, সাজাবার চেষ্টা করি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও।ওরা বিরক্ত হয়, ভ্রু কুঁচকে পাজামা পাঞ্জাবী পরহিত নিজেকে আয়নায় দেখে, রোমান হরফে লিখে দেয়া বাংলায় ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি যে আবেগ নিয়ে আমরা গাই ঠিক সেই পরিমান বিরক্ত নিয়ে ওরাও গাইবার চেষ্ট করে। তবুও এই শেত যবনের পূরীতে নতুন বাংলা বছর আসে আর আমরা তাকে বরন করে নেই হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে। সম্মিলিত কন্ঠের বৈশাখী গান সারা বছরের আবর্জনার মতই বাইরের তুষারকে ধুয়ে মুছে নিয়ে যায়, আর সেই তুষারস্নাত বৈশাখ আমাদেরকে নিয়ে যায় মায়ের কোলে যেখানে শুয়ে রাজ্যের ঘুম আসে দু’চোখে। 

ছবিসুত্রঃ উইকিপিডীয়া( কপিরাইটঃ Niloy, niloy.me@gmail.com, http://photos.niloy.net)