শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১০

সংসার

শরিফ যখন দ্বিতীয় বিয়ে করে বউকে বড় ঘরে তোলে রাবেয়া আর তার চার বছরের ছেলে সালামের তখন ঠাঁই হয় পাশের দোচালাতে। তা রাবেয়ার দোষ তেমন ছিলনা, দেখতে শুনতেও ভাল, তার উপর বিয়ের দুই বছরের মাথাতেই একটা ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছে। সমস্যা একটাই। সে নাকি সংসার বুঝেনা। এই যেমন উঠানে ধান শুকানো হচ্ছে, হঠাৎ করে বৃষ্টি আসলে সেগুলো আবার ঘরে তোলার কথা রাবেয়া বেমালুম ভুলে যায়। আবার কখনো কখনো ঘরে খিল না দিয়েই ছেলে নিয়ে পাড়া বেড়াতে চলে যায়। শরিফ হলো গেরস্ত মানুষ। তার কি আর এই বউ দিয়ে চলে। রাবেয়ার বড় ভাই অবশ্য আবার বিয়ে করার পর কেস কাহিনীর ভয় দেখিয়েছিল কিন্তু শরিফ তাতে খুব বেশি গা করেনি। আর তা করবেই বা কেন? সেতো আর তার আগের বউরে রাস্তায় ফেলছেনা, অমর্যাদাও করছেনা, নিজের বাড়িতেই খালি আলাদা ঘরে থাকতে দিয়েছে। রাবেয়ার ভাই অবশ্য অল্পতে ছাড়েনি, রীতিমত শালিশ ডেকে নিজের বোনের নামে দুই দুইটা জমি লিখিয়ে নিয়েছে শরিফের কাছ থেকে।





সংসারের এই পরিবর্তনে রাবেয়ার থাকা খাওয়ার অভাব দেখা না দিলেও সে অন্য কিছুর অভাব ভালো মতনই বোধ করে। নতুন বউকে নিয়ে শরিফের রঙ ঢং তার অসহ্য লাগে। শরিফ তারে কত বার তার বাপের বাড়িতে নিয়ে গেছে সেটা ঠিক মনে পড়েনা, কিন্তু নতুন বউকে নিয়ে এই ছয় মাসেই দুই দুই বার বেগুলতলি থেকে বেড়িয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, গঞ্জের সিনেমাহল থেকে সেদিন নতুন একটা ছবিও দেখে এসেছে। রাবেয়া এই সব দেখে আর মনে মনে ফুসলায়, তার মাথাটাও কেমন জানি খারাপ খারাপ লাগে। ইদানীং তার এক নতুন সমস্যা হয়েছে। রাত গভীর হলে রাবেয়া কান খাড়া করে বড় ঘরের কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর নতুন বউয়ের হাসি ছাড়া আর তেমন কিছু শুনতে পায়না সে।



সোমবার হাটের দিন শরিফ নতুন বউয়ের জন্য এক গোছা কাচের চুড়ি আর বাসনা সাবান নিয়ে আসলে রাবেয়া আড়চোখে তা দেখে। সেদিন রাতে একটু আগেই বড় ঘরে খিল পড়ে, রাবেয়া সেই শব্দ শুনে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। বড় ঘরের সামনে থেকে বদনা নিয়ে পানি ফেলে দিয়ে আস্তে আস্তে কুয়ার ধারে যায়। কুয়া থেকে বালতি দিয়ে পানি তুলে বদনা ভরে আস্তে আস্তে পাকের ঘরের দিকে যায়, ফিরে এসে ভরা বদনা বড় ঘরের সামনে আবার রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর বড় ঘরের খিল খোলার শব্দ হয়, রাবেয়া জানে শরিফ এখন পানি খরচ করবে। সে কান আরো খাড়া করে অপেক্ষা করে। আচমকা শরিফের চিৎকার আর দাপাদাপিতে নতুন বউ কাপড় ঠিক ঠাক করে বাইরে বের হয়। রাবেয়ার সেই সময় মনে পড়ে যায়, মরিচের বাটা নেবার পর পাকের ঘরের দরজার আর খিল দেয়া হয় নাই, সংসারটা বুঝি আর এই জীবনে মাথায় ঢুকলনা তার।



প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন