শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০১০

রাবার ড্যাম ব্রেক ও বাংলাদেশ প্রসংগ

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরিজোনা স্টেটের টেম্পিতে রাবার ড্যাম ব্রেক হয়েছে। একটি কনফারেন্সে যোগদানের জন্য ২০০৯ এর জানুয়ারীতে ফিনিক্স গিয়েছিলাম, তখন সৌভাগ্য হয়েছিল টেম্পি টাওন লেকের এই রাবার ড্যামটি দেখবার। সল্ট রিভারের যে অংশটি টেম্পিতে এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রাবারের বাঁধ দিয়ে  কৃত্রিম ভাবে এই লেক তৈরী করা হয়েছ। লেকের দুই দিকেই রয়েছে রাবারের তৈরী চারটি করে ব্লাডার যার প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য ২৪০ ফুট। এই ব্লাডারগুলোকে কনক্রীটের তৈরী ভিত্তির উপর স্থাপন করে বাতাস দিয়ে ফুলানো হয় ফলে তা উঁচু হয়ে বাঁধের মত আকার ধারণ করে। যখন উজানে বেশি পানি আসে তখন বাতাস বের করে দিয়ে ড্যামের উচ্চতা কমানো হয় ফলে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়, আবার প্রয়োজনে বাতাস ভরে ড্যামের উচ্চতা বাড়ানো হয়।
 
ছবিঃ টেম্পি লেকের পশ্চিম অংশের বাঁধ (২০০৯ এর জানুয়ারিতে তোলা)
লেকের পশ্চিম পারের চারটি ব্লাডারের একটি গত ২০ জুলাই স্থানীয় সময় রাত ১০ টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। মূহুর্তের মধ্যেই প্রায় এক বিলিয়ন গ্যালন ধারন ক্ষমতা বিশিষ্ট লেকটি থেকে সেকেন্ডে ৪০,০০০ ঘনফুট হারে পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। ভাটিতে মূলত সল্ট রিভারটি শুষ্ক থাকে বলে এই ড্যাম ব্রেকের কারনে তেমন কোন হতাহত বা ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু বাঁধ মেরামত, নতুন করে লেক ভরাট করা, লেকের মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নেহায়েত কম নয়। টেম্পির এর রাবার ড্যামের ব্লাডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছিল জাপানের ব্রিজস্টোন কর্পোরেশন। তথ্যমতে এই ব্লাডারগুলোর আয়ুষ্কাল ৩০ বছর, সেক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালে নির্মিত এই ড্যামের মাত্র ১১ বছরেই ফেটে যাওয়া দূঃখজনক।
ছবিঃ টেম্পি লেকের পশ্চিম অংশের বাঁধ ( ব্রেকের পরে , ছবিসুত্র)


 ভিডিওঃ টেম্পি টাওন লেক ড্যাম ব্রেক ( সিএনএন ভিডিও)

২.
এবারে যে প্রসংগে উপরের আলোচনার অবতারণা তাতে ফেরত আসি। বিভিন্ন কারনে রাবার ড্যাম ইদানিং বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কারনগুলি হচ্ছে [১]
  • স্বল্প খরচ ( গতানুগতিক বাঁধ নির্মানের চেয়ে অন্তত শতকরা ৩০ ভাগ খরচ কম)
  • সহজ নিয়ন্ত্রন ও রক্ষণাবেক্ষণ
  • তুলনামূলক ভাবে স্বল্প নির্মান সময়
  • ভূমিকম্পের প্রভাব কম
  • বন্যা সময়ে বাঁধের উচ্চতা কমিয়ে বাঁধা নামিয়ে আনা
বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯৯৫ সালে প্রথম কক্সবাজারের বাকখালী নদীতে পরীক্ষামূলক ভাবে রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।এর পর থেকে বাংলাদেশে অনেক রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে রাবার ড্যাম  বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে বেশ অবদান রাখছে [২]

কিন্তু সম্প্রতি টেম্পিতে রাবার ড্যাম বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশে এই ড্যামগুলোর গুনগত মান ও নিরাপত্তা নিয়ে আরো পর্যালোচনা করা উচিৎ। কারন বাংলাদেশে এরকম একটি ড্যাম ব্রেক হলে তার প্রভাব আরো অনেক বেশি হবে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও প্রবল হবে। হঠাৎ ড্যাম ব্রেক বিপুল এলাকা প্লাবিত করতে পারে, বিনষ্ট করতে পারে আবাদী জমি ও ফসলের। বুয়েটে শিক্ষকতা করার সময়কালে সম্ভবত ২০০৬ এর দিকে একবার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাসফরে নিয়ে গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র নদে নির্মিত একটি রাবার ড্যাম প্রকল্পে। যতদূর মনে পড়ে তেমন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। কিন্তু টেম্পির এই উদাহরণ বাংলাদেশে রাবার ড্যামের রক্ষণাবেক্ষন এ উপর গুরুত্ত্বারোপের প্রয়োজনীয়তাকে আরো বাড়িয়ে দেবে সেই আশা ব্যক্ত করি।


ছবিঃ ব্রহ্মপুত্র নদ রাবার ড্যাম,নারায়ণগঞ্জ ( ২০০৬ সালে তোলা, ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ সাজিদ জামান)

তথ্যসুত্রঃ
[১] Rubber Dams in Bangladesh Harness Surface Water for Farmers to Irrigate at Lesser Cost
[২] PERFORMANCE EVALUATION OF RUBBER DAM PROJECTS OF BANGLADESH IN IRRIGATION DEVELOPMENT

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ গাজী সৌরভ ইসলাম

প্রথম প্রকাশঃ সচলায়তন