রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০০৯

হাসতে নাকি জানেনা কেউ -০২

অনুকরন এবং অনুসরণ এই দুইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। কেন জানি আমাদের মধ্যে অনুকরণ প্রবনতাই বেশী লক্ষ্য করা যায়। তাই আমেরিকান আইডলের আদলে ভারত যখন ইন্ডিয়ান আইডল চালু করে বসে আমরাও হন্যে হয়ে পড়ি এই জাতীয় কিছু একটা করার। ফলে চ্যানেলে চ্যানেলে প্রতিযোগীতা চলতে থাকে, বড়দের, ছোটদের। বলতে দ্বিধা নেই এই জাতীয় অনুষ্ঠাণ আমাদের বাংলা গানের বিস্তৃতিতে সাময়িক ভাবে সহায়কও হয়েছে কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য ‘মেধাবী শিল্পী সংগ্রহের’ কাছ থেকে আমরা দূরে সরে গিয়েছি ‘মূনাফা অর্জনের দিকে’। তাই বর্তমানের লক্ষ্যবস্তু রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টস শ্রমিক, যাদের সংখ্যা অনেক সুতরাং মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রেরিত মেসেজের সংখ্যাও হবে অনেক বেশী।ভাবতে অবাক লাগে মুনাফা অর্জন করা হবে তাদের কাছ থেকে যাদের খেয়ে পড়ে বাঁচার জন্য মাসিক আয় অতিসামান্য। এই অনুকরণ প্রসঙ্গে একটি কৌতুক মনে পড়ে গেল, অনেক দিন আগে বিটিভিতে দেখেছিলামঃ


দুই বন্ধুর ইন্টারভিউ



দুই বন্ধু গিয়েছে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে।এদের মধ্যে একজন অতিচালাক আরেকজন মহামুর্খ। প্রথমে চালাক বন্ধুর ডাক পড়েছে।সামনে বসা ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রধান প্রশ্ন করছেন,

‘বলুন বাংলাদেশ কোন সালে স্বাধীন হয়েছে?’

যেহেতু সে অতিচালাক সুতরাং ভাবনায় পড়ে গেল যে কেন তাকে এত সহজ একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে, এবং ধরেই নিল যে সরাসরি উত্তর দিলে তার প্রকৃত মেধা যাচাই হবেনা, সুতরাং পেঁচিয়ে উত্তর দিতে হবে।মনে মনে ঠিক করে সে বেশ বিজ্ঞের মত উত্তর দিল,

‘আসলে স্বাধীন হবার কথা ছিল ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় কিন্তু হল ১৯৭১ সালে’ 

এবারে দ্বিতীয় প্রশ্ন করে,

‘দেশের কিছু বুদ্ধিজীবির নাম বলুন’

এই পর্যায়ে সে সমস্যায় পরে যায়, প্রশ্নকর্তা কি আওয়ামীলীগের নাকি বিএনপি’র? কাকে রেখে কার নাম বলবে আবার কি মনে করবে এই ভেবে সে উত্তর দেয়,

‘আসলে স্যার অনেকেইত আছে কাকে রেখে কাকে বলব?’

প্রশ্নকর্তা এবার তার তৃতীয় ও শেষ প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নেয়। তখন বাংলাদেশের শেয়ার বাজার নিয়ে বেশ হই চই চলছে।সেই আঙ্গিকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘আচ্ছা শেয়ার বাজারের এই যে ধ্বস তার প্রতিকার কি হতে পারে?’

এক্ষেত্রে সে বেশ ঝামেলায় পড়ে যায়, কারন এই বিষয়ে সে কিছুটা অজ্ঞ।তাই চালাকি করে উত্তর দিল,
‘স্যার এটা আসলে একটা গবেষণার বিষয়’

যাই হোক চালাক বুন্ধুটি এইভাবে তার ইন্টারভিউ শেষ করে এসে বাইরের রুমে যেখানে তার বোকা বন্ধুটি অপেক্ষা করছে নিজের ইন্টারভিউয়ের জন্য সেখানে আসল। বোকা বন্ধুটি এইবারে তার হাতে ধরে বসল, তাকে কি কি প্রশ্ন করেছে তার উত্তর বলে দিতে হবে কারন সে গোপন সুত্রে খবর পেয়েছে যে সবাইকেই প্রশ্নকারীরা একই রকম প্রশ্ন করছে। সুতরাং চালাক বুন্ধুটি যদি তাকে তার উত্তরগুলি বলে যায় তাহলে সে এই যাত্রায় রক্ষা পায়। হাজার হলেও বন্ধুত তাই আর অনুরোধ ফেলতে পারলনা।সে বলল ঠিক আছে তুই প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলবি, ‘হবার কথা ছিল ১৯৪৭ সালে হয়েছে ১৯৭১ সালে’, দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলবি, ‘অনেকেইত আছেন কাকে রেখে কাকে বলব’, আর শেষ প্রশ্নের উত্তরে বলবি, ‘এটা আসলে একটা গবেষণার বিষয়’।

এইভাবে চালাক বুন্ধুর মুখের শিখানো বুলি মুখস্থ করে বোকা বুন্ধুটি গিয়েছে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে। প্রশ্নকর্তার প্রথম প্রশ্ন,

‘আপনার জন্ম সাল কত ?’

কমন পড়ে যাওয়ার ঝটপট উত্তর,

‘হওয়ার কথা ছিল ১৯৪৭ সালে হয়েছে ১৯৭১ সালে’

উত্তর শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া প্রশ্নকর্তা এবার জিজ্ঞেস করে,

‘আপনার বাবার নাম বলুনত দেখি?’

বোকা লোকটি খুশি হয়ে উত্তর দেয়,

‘অনেকেইত আছে কাকে রেখে কাকে বলব’

এই পর্যায়ে প্রশ্নকর্তা সহ ইন্টারভিউ বোর্ডের সবার মাথা বিগরে যাবার কথা। তাই জিজ্ঞেস করে,

‘আপনি পাগল না ছাগল?’

বোকা বন্ধুটি উৎফুল্য হয়ে জবাব দেয়,

‘এটা একটা গবেষণার বিষয় স্যার’